বন্যায় ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৭-২৬ ১১:৩১:৪০


এবছর  বোরো মৌসুমে ধান আবাদ করে ন্যায্যমূল্য পাননি গ্রামীণ কৃষক। চলতি মৌসুমে আমন ও আউশ ধান আবাদ করে সে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার প্রত্যাশায় ছিলেন অনেকেই। কিন্তু তাতেও বাদ সেধেছে প্রকৃতি। উজানি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে দেশের ৩১ জেলা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, বন্যা আক্রান্ত ৩১ জেলায় চলতি মৌসুমে বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়েছে ১০ লাখ ৭০ হাজার ৫৩১ হেক্টরে। এর মধ্যে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৫৯ হেক্টর বা ১৫ শতাংশ জমি।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বন্যায় আক্রান্ত জমির পরিমাণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশ। বন্যায় ৩১ জেলায় ফসলটির আবাদি জমি আক্রান্ত হয়েছে ৪৫ হাজার ৬৮১ হেক্টর। জেলাগুলোয় ফসলটির মোট আবাদি জমির মধ্যে আক্রান্তের হার ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর পরই রয়েছে বোনা আমন। ৩১ জেলায় ফসলটির আবাদি জমি আক্রান্ত হয়েছে ৪১ হাজার ৬৫৬ হেক্টর বা এসব এলাকার মোট বোনা আমনের ২৫ শতাংশ। আবাদি জমি আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পাট। ফসলটির ৩৯ হাজার ৪২৩ হেক্টর আবাদি জমি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে, যা জেলাগুলোয় পাটের মোট আবাদি জমির ২১ দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া রোপা আমনের মোট আবাদি জমির ২২ শতাংশ ও আমন বীজতলার প্রায় ১৫ শতাংশ জমি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন সবজির মোট আবাদি জমির ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের বন্যা যদি আরো দীর্ঘ হয়, তবে আমন ও আউশের উৎপাদন বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পাশাপাশি বন্যার কারণে এবার গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদনও ব্যাহত হয়েছে। এরই মধ্যে খুচরা বাজারে বেশকিছু সবজির দাম বাড়তির দিকে। অন্যদিকে পাটের উৎপাদন এখন শেষ পর্যায়ে থাকলেও বন্যার পানি নামতে দেরি হলে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হতে পারে পাট খাত।

এবারের বন্যায় অঞ্চলভিত্তিক হিসাবে পরিমাণের দিক থেকে  সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে রংপুর অঞ্চলের (রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী) ফসলি জমি। এখানকার মোট ৩৪ হাজার ২৭৮ হেক্টর জমি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বগুড়া অঞ্চল (বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা)। এখানকার মোট ৩২ হাজার ১৩৭ হেক্টর জমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ময়মনসিংহ (জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ) ও ঢাকা অঞ্চলের (টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ) ফসলি জমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যথাক্রমে ৩০ হাজার ৮৪ ও ৩০ হাজার ৩৯ হেক্টর।

এছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলে (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী ও নোয়াখালী) ১৬ হাজার ৩৫২ হেক্টর, সিলেট অঞ্চলে (সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ) ৭ হাজার ২৭২, ফরিদপুর অঞ্চলে (ফরিদপুর ও মাদারীপুর) ৪ হাজার ৭২৫, রাজশাহী অঞ্চলে (নওগাঁ, রাজশাহী ও নাটোর) ৩ হাজার ৪০৯, রাঙ্গামাটি অঞ্চলে (রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান) ১ হাজার ৯৭৭, দিনাজপুর অঞ্চলে (দিনাজপুর) ২৩৫ ও কুমিল্লা অঞ্চলে (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ৬৪ হেক্টর ফসলি জমি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।

সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আক্রান্ত এলাকার কৃষকদের বিনা মূল্যে সার ও বীজ দেয়া হবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে ১২০ কোটি টাকার অর্থায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া পরবর্তী সময়ে বন্যা পরিস্থিতি আবারো খারাপের দিকে গেলে করণীয় সম্পর্কেও প্রস্তুতি রয়েছে। আর্থিক সহায়তা ও প্রস্তুতিতে কোনো ধরনের ঘাটতি নেই। তাই আশা করছি, চলমান বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। কৃষকদের ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তা বাড়ানোর মাধ্যমে শস্যের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সব ধরনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর অন্যতম সিরাজগঞ্জ। এখন পর্যন্ত বন্যায় জেলাটির ২১ হাজার ৪২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজার ৭৯৩ হেক্টর বা ৫১ দশমিক ২৯ শতাংশ।

তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামালপুর জেলার কৃষিজমি। জেলাটিতে আবাদি জমির পরিমাণ ৪৭ হাজার ৯৬৮ হেক্টর। এর মধ্যে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ২৫ হাজার ৮৫৫ হেক্টর।

সে হিসাবে জেলার মোট কৃষিজমির প্রায় ৫৪ শতাংশই বন্যাক্রান্ত। জেলায় আবাদকৃত ফসলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাট। জেলাটিতে বন্যায় আক্রান্ত পাটের আবাদি জমির পরিমাণ ১২ হাজার ৯১২ হেক্টর।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ক্ষতিগ্রস্ত অন্য ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে কলা, মরিচ, পান, আখ ও অন্যান্য শস্য। এর মধ্যে ৩১ জেলায় কলার মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১ হাজার ১১২ হেক্টর। এর মধ্যে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ৩৫২ হেক্টর জমি বা ৩১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এসব জেলায় মরিচ আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ১৯৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ৭৭৯ হেক্টর বা ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তাছাড়া বন্যায় পানের বরজ আক্রান্ত হয়েছে তিন হেক্টর, আখ ৫৬৫ এবং অন্যান্য শস্য আক্রান্ত হয়েছে ১২০ হেক্টর জমির।