৩০ মিনিট ট্রেনে গিয়ে পানীয় জল আনতে হয় মহারাষ্ট্রে
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৯-২৬ ১৯:৩৭:৪৯
ক্রমশ দেশে জলের সংকট ঘনিয়ে আসছে তা বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে দেশের জনগণ। তবুও কারও মধ্যে জল অপচয় বন্ধ করার হেলদোল এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি সেইভাবে। জল সংরক্ষন এবং সঞ্চয়ের বিষয়ে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবি মহলে হাঁকডাক করে প্রচার চালালেও তাতে কর্ণপাত করেন না দেশের অধিকাংশ মানুষই। আর এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে গোটা বিশ্বতো দূরে থাক, চরম জল সংকটের সমস্যায় পড়বেন এই দেশের মানুষেরা জানাচ্ছেন দেশের তাবড়-তাবড় বিজ্ঞানীরা। এত প্রচার, প্রকল্প কর্মসূচি সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে জল সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে ব্যর্থ প্রশাসন তা এক কথায় মানছেন সরকার। কিন্তু ভবিষ্যতে আপনার অবস্থাও যদি এই মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুকুন্দাওয়াদির মতন হয় তাহলে আপনি কি করবেন। জল ছাড়া বাঁচবেন কিভাবে।
প্রবল বর্ষণে যখন পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন রাজ্যগুলি বন্যার জলের তোড়ে ভাসছে তখন মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুকুন্দাওয়াদি নামক অঞ্চলের মানুষ জলকষ্টে ভোগেন। সূত্রের খবর, শুধু তাই নয় জলের অভাবে তাঁদের ছুটতে হয় ট্রেনে করে শহরে। প্রতিদিন ত্রিশ মিনিট করে ট্রেনে যাতায়াত করে দূরের শহর থেকে খাওয়ার জল বয়ে আনে এই গ্রামের সব বৃদ্ব আবাল বনিতারা। এই বছর পশ্চিম ভারতে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হলেও তাঁর সিকি ভাগ বৃষ্টির ফোঁটাও পাইনি মহারাষ্ট্রের এই অঞ্চল। যার জেরে তৈরি হয়েছে জলের কষ্ট আর তা মেটাতেই দূর-দূরান্ত থেকে জল আনতে পাড়ি দিতে হয় এই গ্রামের বাসিন্দাদের। সূত্রের খবর, প্রবল বর্ষার জেরে যখন দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তখন এখানে বৃষ্টি হয়েছে ১০০ ভাগের মধ্যে মাত্র ১৪ ভাগ।
তিরিশ মিনিট ট্রেনে করে গিয়ে প্রায় চৌদ্দ কিলোমিটার দূর থেকে বাড়ির জন্য জল নিয়ে আসে মুকুন্দাওয়াদি গ্রামের নয় দশ বছরের বালকেরা। আর স্কুল শেষের পর সহপাঠীদের সঙ্গে খেলা থামিয়ে প্রতিদিন চৌদ্দ কিলোমিটার দূরের শহরে ট্রেনে করে জল আনতে যায় নয় বছরের সাক্ষী গারুদ এবং সঙ্গে যায় তাঁদের প্রতিবেশী সিদ্বার্থ ধাগে। আর এটাই তাঁদের প্রতিদিনের জল নিয়ে আসার নিয়মমাফিক রুটিন বলে জানিয়েছেন মুকুন্দাওয়াদি গ্রামের বাসিন্দা সিদ্বার্থ ধাগে।
একই অবস্থা সাক্ষী গারুদেরও। নয় বছরের ওই ছোট্ট শিশুটি জানিয়েছে, ‘রেল ষ্টেশন থেকে তাঁদের বাড়ির দুরত্ব প্রায় দুশো মিটার’। সে আরও জানিয়েছে, প্রতিদিন স্কুল শেষে তাঁর প্রথম কাজ হল শহরে গিয়ে জল নিয়ে আসা বাড়ির জন্য। আর এই জল আনার জন্য স্কুল শেষের পর সে আর তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে পারেনা বলে জানিয়েছে ছোট্ট সাক্ষী। এটা শুধু মুকুন্দাওয়াদি গ্রামের সমস্যায় নই এই জল কষ্টে ভোগেন ভারতের প্রায় ১৬৩ মিলিয়ন মানুষ। ব্রিটিশ জল সংগঠনের একটি তথ্যে জানানো হয়েছে যে, ভারতে প্রায় ১৬৩ মিলিয়ন মানুষ তাঁদের বাড়ির কাছাকাছি এলাকা থেকে পরিস্রুত জল পাননা এবং এটি একটি ভারতের কঠিন সমস্যা বলে জানিয়েছে ওই সংগঠন।
যদিও ক্ষমতায় আসার পরে কেন্দ্রের মোদী সরকার দেশবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের প্রত্যেকটি বাড়িতে পানীয় জলের পাইপ লাইন তৈরি করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে মোদী সরকারের খরচ পড়বে আনুমানিক ৩.৫ লক্ষ টাকা। জানা গিয়েছে, সাক্ষী, সিদ্ধার্থ ছাড়াও তাঁদের গ্রামের কম বেশি প্রায় একশোটি পরিবারকে জলের জন্য প্রাইভেট ওয়াটার সাপ্লাইয়ের উপর নির্ভর করে থাকতে হয়।
শুধু তাই নয় তাঁরা জানিয়েছেন, বাইরে থেকে এই জলের ট্যাংক গরমকালে কিনতে গেলে তাঁদের জলের দাম হিসাবে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার মূল্য চোকাতে হয়। যদিও এত দাম দিয়ে জল কেনার সামর্থ্য নেই ওই গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দাদের। যার জন্য প্রতিদিন দূর শহর থেকে জল আনতে হয় তাঁদের। জল কেনার প্রসঙ্গে সাক্ষী এবং সিদ্বার্থের বাবা মায়েরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন তাঁদের ঠিকমত কাজ না হওয়ায় এত টাকা দিয়ে প্রাইভেট সাপ্লাইয়ের জল কেনার সামর্থ্য তাঁদের নেই। একই অবস্থা গ্রামের অঞ্জলিদেরও। তাঁদেরও প্রতিদিন জলের জন্য পাড়ি দিতে হয় চৌদ্দ কিলোমিটার দূরের শহরে।
চোদ্দ কিলোমিটার দূরে জল আনতে যাওয়ার সময় সাক্ষীরা সঙ্গে নিয়ে যায় বড় বড় কলসি এবং জলের পাত্র। শুধু তাই নয় গ্রামে জলের অভাব থাকায় গরমের দিনে কেউ কেউ জামাকাপড় সাবান শ্যাম্পু সঙ্গে নিয়ে যায় একেবারে স্নান করে আসার জন্য। দূরের শহরে জল আনতে যাওয়া চোদ্দ বছরের কিশোরী অঞ্জলি জানিয়েছে, মুকুন্দাওয়াদি থেকে ট্রেন অরুনাবাগে এসে দাঁড়ালে তাঁরা ত্রিশ মিনিট সময়ের মধ্যে একটি পাইপ থেকে সমস্ত পাত্রে জল ভরে নেয়। তারপর ফের ওই ট্রেনে করে আবার ফিরে আসে তাঁদের গ্রাম মুকুন্দাওয়াদিতে।
ওই কিশোরী আরও জানিয়েছে এত দূর থেক জল আনার সময় কলসি থেকে অনেক সময় জল গড়িয়ে যায়। এতে অনেক ট্রেন যাত্রী অসন্তুষ্ট হলেও তাঁদের মধ্যে আবার অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাঁদের দিকে। এছাড়াও যখন ট্রেন আবার মুকুন্দাওয়াদি ষ্টেশনে ফিরে আসে সেখানে তাঁদের সন্তানদের জন্য অপেক্ষা করে ধাওগের মা। ট্রেন থেকে ওই বড় বড় জলের পাত্র গুলি দ্রুত নামিয়ে আনতে সাহায্য করে সে। এদিকে মুকুন্দাওয়াদির অনেকেই ঘরে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের একা ফেলে না রেখে এক হাতে বাচ্চা এবং আরেক হাতে কলসি নিয়ে এইভাবেই রোজ জল বয়ে আনার জীবন যুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন তাঁরা।