এজিএম পার্টির অত্যাচার বন্ধ করা হবে:নিজামী

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৯-১০-০৫ ২২:৫২:৪২


বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেছেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নরে স্বর্থে এজিএম পার্টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে কমিশনকে শুধু সূচক উঠা-নামার মধ্য‌ে রাখা হচ্ছে। শুধু সূচক উঠা-নামা করানো কমিশনের কাজ নয়।

শনিবার (০৫ অক্টোবর) রাজধানীতে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির কমপ্লায়েন্স অফিসারদের নিয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) “করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড” সংক্রান্ত আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, আমাদেরকে সূচকের জালে বন্দি রাখা হয়েছে। এখানে লাভ-লোকসান করে দেওয়ার দায়িত্ব যেনো আমাদের। অথচ গত কয়েকদিনে পেয়াঁজের অস্বাভাবিক দাম বাড়লেও কোন মিছিল হয়নি। রমজানে দ্রব্য মূল্য বাড়লেও কেউ মিছিল করে না। রাজশাহীতে বন্যার কারনে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে-সে কারনেও কেউ মিছিল করেনি। তবে দৈনিক শেয়ারের দাম কেনো বাড়বে না-এটার জন্য মিছিলের দরকার আছে। সূচক না বাড়লেই আমাদের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করা হয়। রাস্তায় মিছিল করা হয়। এই সমস্ত জায়গায় জনসেচতনতা বাড়ানোর দরকার।

তিনি বলেন,বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যে কাজ করা হয়েছে তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। কমিশনের যে জনবল সংকট রয়েছে তা কেটে যাবে। আজ যারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবার এজিএম পার্টিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কমিশনের দূর্বল মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট নিয়ে সমালোচনা হয় জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, ঘটনা সত্য। জনবলের অভাবের কারনে আমরা সঠিকভাবে এই কাজ করতে পারছি না। নতুন অর্গানোগ্রামের মাধ্যমে আমাদের অবস্থা জোড়দার করতে পারব। ২০০ লোকবল নিয়োগ দিলে কঠিনভাবে মনিটরিং করতে পারব। তবে আমরা চাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসুক। বিশেষ করে স্টক এক্সচেঞ্জ। তবে গত ৫ বছরে যেখানে আক্ষরিক অর্থে জনবল নিয়োগ দিতে দেখিনি, বিজনেস মডিউল কিংবা পরিকল্পনা দেখিনি। সুতরাং সেই স্টক এক্সচেঞ্জ তো আমাদের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না।

তিনি বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জকে গভর্ণেন্সের জন্য শক্তিশালী করা দরকার। কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জে সুশাষন পরিপালন হচ্ছে কিনা- তা সুপারভিশনের দায়িত্ব দিতে পারিনি। এটা দেওয়া উচিত। স্টক এক্সচেঞ্জকে আমি ক্ষমতাবান করতে চাই। স্টক এক্সচেঞ্জকে করপোরেট গভর্ণেন্স গাইডলাইনস কোড পরিপালনে ইনস্পেকশন এবং সুপারভিশনের জন্য ক্ষমতায়ন অতি জরুরী হয়ে গেছে। এজন্য স্টক এক্সচেঞ্জকে দায়িত্ব দেওয়া যায়। কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জ সে সক্ষমতা অর্জন করছে না।

স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) নিয়ে তিনি বলেন, সিইও হিসাবে মাসে ৫-৭ লাখ টাকা নিয়ে ২-৩ বছর শেষে চলে যাবে। আর তার কাছ থেকে কোন ধরনের প্রত্যাশা থাকবে না। এবং তিনি ট্রেকহোল্ডার পরিচালকদের তলপিবাহক থাকবেন। এটা হতে পারে না।

হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, আমরা এই মার্কেটটাকে ইস্যুয়ার নির্ভর মার্কেট করতে চাই। ক্যাপিটাল রেইজিং (আইপিও) মার্কেট করতে চাই, প্রাইমারি নির্ভর মার্কেট করতে চাই। কিন্তু আমরা সেকেন্ডারি মার্কেট নির্ভর করে রেখেছি। যেটা বাহির হওয়ার মার্কেট। এই বাস্তবতায় আপনাদের করণীয় কি কিছুই করার নেই। আমরাই করব এগুলো। সে কারনেই ইস্যুয়ার অনেক জায়গায় বলে শেয়ারবাজারে এসে কি লাভ। যেখানে ব্যাংকের এমডি ২০০ কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার জন্য বাসায় এসে বসে থাকে। তাহলে শেয়ারবাজার থেকে ৫০ কোটি আনতে গিয়ে বছরের পর বছর কেনো বসে থাকব। এরপরেও কোম্পানি নিয়ে বিভিন্ন বদনাম করা হয়। অন্যদিকে আবার আবেদন করে ৪০-৫০ গুণ বেশি।

প্রথমদিনেই ১০ টাকার শেয়ার ৪০-৫০ টাকা হয়ে যাওয়ার ঘটনা কোন দেশের সঙ্গে মিলে না বলে জানান নিজামী। যেখানে উবার, ফেসবুকের মতো কোম্পানির শেয়ার প্রথমদিনেই ২০ শতাংশ দর কমে যায়। এমতাবস্থায় কোথায় যাবেন আপনি।

তিনি বলেন, সেকেন্ডারি মার্কেট হচ্ছে বাহির হওয়ার রাস্তা। অথচ কতবড় আহাম্মক হলে কেউ কেউ আইপিও না দেওয়ার কথা বলে। অন্যদিকে আবার চাহিদা ও সরবরাহের (ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই) কথা বলে। এগুলো কোন দেশে আছে। এখন কমিশনের আর কি করার বাকি আছে? এখন ফিক্সড প্রাইস মেথডে আইপিও আন্ডাররাইটারদের কাছে দিয়ে দেওয়া বাকি আছে। অচিরে সেটিও করা হবে। তাহলে আইপিও নিয়ে কমিশনকে দোষারোপ করা যাবে না। এ প্যাকটিস অন্যান্য দেশেও আছে।

তিনি বলেন, হতভাগ্য স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ আইপিওর ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বলে। অথচ তারা ভুলে গেছে, লিফটের মধ্যে আইপিও শেয়ার বিলিবণ্ঠন এবং সেগুলো নিয়ে কি হয়।

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কমিশনে চাকরী বিধিমালা ছিল না জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, সরকারের মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রন হতো। আমরা কমিশনে আসার পরে চাকরী বিধিমালা করেছি। আমরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ আইন সংসদে পরিবর্তন করেছি, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ সংশোধন করেছি, বিশেষ ট্রাইবুন্যাল করেছি, স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন করেছি এবং অনেক কষ্টে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট করেছি। একেকটি আইন সংসদে যাওয়া সহজ বিষয় নয়। এছাড়া আইওএসকো থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরি পাওয়া সহজ কথা নয়। এছাড়া কমিশনের কর্মকর্তাদের চাকরীর মান উন্নয়ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মানের সমান্তরাল হবে। বিএসইসির কর্মকর্তাদের ভাগ্য ভালো, আমাদের ২ বছর মেয়াদ বাড়ানোর কারনে এটি সম্ভব হয়েছে।

এই কমিশনার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে কমিশনে আসার কারনে বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে শক্ত দর কষাকষির (স্ট্রং বারগেইনিং) সক্ষমতা ছিল।পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এটি কাজ করেছে।

উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা দেখেন ১৯৯৬ সালে কমিশনের মর্যাদা কোথায় ছিল, আর এখন কোথায়। অথচ আজ রাস্তায় কমিশনের বিরুদ্ধে মিছিল করা হয়। যা বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আরো ভবিষ্যতে বন্ধ হবে। এজিএম পার্টিও বন্ধ হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএমবিএর সভাপতি মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক খায়রুল বাশার, সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমানসহ বিভিন্ন কোম্পানির সচিব, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও অন্যান্য কর্মকর্তারা।