পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি কোম্পানি হবে
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-১০-১৪ ১৬:৩৪:৪৮
পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীন একটি কোম্পানি গঠনের বিধান রেখে ‘তেজস্ক্রিয় বর্জ্য এবং ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক জাতীয় নীতি, ২০১৯’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার এতে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয় এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কীভাবে পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হবে সেটা নিয়ে নীতিমালায় অনেকগুলো কথা আছে। বর্জ্য উৎপাদনকারী কারা কারা আছেন, তাদের উৎপাদিত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ও ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি অর্থাৎ যে দূষণ করবে সে টাকা দেবে। এটা আন্তর্জাতিক নীতি। যে দূষণ করবে তাকে টাকা দিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। এটা হল মূলনীতি।’
তিনি বলেন, ‘পারমাণবিক জ্বালানির পরিমাণ যুক্তিসঙ্গতভাবে সীমিত রাখতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ জ্বালানি অ্যাসেমব্লি সিল করা বাক্সে সংরক্ষণসহ পরমাণু চুল্লির রিঅ্যাকটর কোরের পরিচালন সময়কালে যে কোনো সময় আনলোড করতে হবে এমন সম্ভাবনা বিবেচনা রেখে ব্যবহৃত জ্বালানি সংরক্ষণ স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যাতে কমপক্ষে ১০ বছর ব্যবহৃত জ্বালানি সংরক্ষণ করা যায়। এটা যারা করবে তাদের জন্য বাইন্ডিং।’
‘এজন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন একটা এজেন্সি নিয়োগ করবে। এটার নাম হল তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কোম্পানি। অর্থাৎ আরডব্লিউএমসি নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করবে। এদের এক্সপার্টিজ থাকবে, এরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করবে। সারা বাংলাদেশে যত এটমিক এনার্জির বর্জ্য পাওয়া যাবে সেগুলো ব্যবস্থাপনা তারা করবে।’
শফিউল আলম বলেন, ‘আমরা যে আস্ট্রাসনোগ্রাফি করি, এগুলোর মধ্যেও সীমিত পরিসরে এটমিক এনার্জি ব্যবহার করা হয়। এগুলোর জন্য অত বড় কিছু করার প্রয়োজন নেই, কিন্তু এক সময় প্রয়োজন হবে। এজন্য আগে থেকে নীতিমালাটি করা হয়েছে। এই নীতিমালা সব সেক্টর কাভার করবে। এক্ষেত্রে লিড মিনিস্ট্রি হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমাদের দেশে পাবনার রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন আছে ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) আওতায়। আইএইএ-এর গাইডলাইন অনুযায়ী এগুলো পরিচালিত হবে। এটমিক এনার্জি যেহেতু একটি স্পর্শকাতর ও বিপদজনক এনার্জি। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটা গাইডলাইন দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আইএইএ-এর যে গাইডলাইন আছে সেটার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সেই অনুযায়ী এই নীতিমালাটা তৈরি করা হয়েছে। এটা দিয়ে যেন কোনো রকম দুর্ঘটনা বা বিপদের মধ্যে না পড়তে হয়, সেটার জন্য। বর্জ্যটা ব্যবস্থাপনার জন্য বিশাল গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে।’
রূপপুরে দু’টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটার যে বর্জ্য তা চুক্তি অনুযায়ী সরাসরি রাশিয়া, এটা আমরা ডিসপোজ (ধ্বংস) করব না। ওনাদের সাথে চুক্তি হয়েছে যেহেতু তাদের বিশাল দেশ, ডিসপোজালের অনেক জায়গা আছে, আমাদের ওরকম জায়গা নেই, আমাদের ঘণবসতিপূর্ণ জায়গা। চুক্তিতেই বলা হয়েছে, (পারমাণবিক বর্জ্য) তারা সিল করে নিয়ে যাবে এবং ওখানে নিয়ে ডিসপোজাল করবে।’
শফিউল আলম বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী, গবেষণা চুল্লি, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট অপারেশন, চিকিৎসা শিল্প, খনিজ সম্পদ আহরণ, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা, প্রশিক্ষণ বা বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উৎপাদন ও ব্যবহার হয়। এসব ক্ষেত্রে এটমিক ইনার্জি ব্যবহার করা হয়, আমরা হয়ত খবর রাখি না।’
নীতিমালায় পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা কথা উল্লেখ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা বা আইএইএ-এর ইন্সট্রাকশন তো আমাদের আছেই।’
সানবিডি/ঢাকা/এবিএস