কিডনিতে পাথর কেন হয়, কী করণীয়
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-১০-২১ ১৩:২৬:৪৯
পেটের ব্যথা প্রত্যাশিত কিছু নয়, কিন্তু তারপরও সাধারণ কোনো কারণে পেটব্যথা হতে পারে। ব্যথা খুব তীব্র হলে বুঝতে হবে এটি জটিল কোনো রোগের লক্ষণ। যেমন- কিডনিতে পাথর। এই পাথর মূলত কিডনিতে পুঞ্জিভূত খনিজের শক্ত স্তূপ।
শিকাগোতে অবস্থিত রুশ ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার কুগান মনে করেন, ১০ শতাংশ লোকের কিডনিতে পাথর হতে পারে। ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদের কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। যেসব লোকের কিডনিতে ইতোমধ্যে পাথর হয়েছে তাদের ১০ বছরের মধ্যে আরেকটি পাথর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু কিডনিতে পাথর হলে কীভাবে বুঝবেন? কিছু উপসর্গ আপনাকে এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিতে পারে।
হঠাৎ তীব্র ব্যথা : প্রাপ্তবয়স্কদের কিডনিতে পাথর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তখন ধরা পড়ে যখন তারা হঠাৎ তীব্র পেটব্যথা বা পিঠব্যথা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। পেট বা পিঠের একপাশে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে কিডনি পাথরের অন্যতম পরিচিত উপসর্গ। এ প্রসঙ্গে লুথেরান জেনারেল হসপিটালের ইমার্জেন্সি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডগলাস প্রপ বলেন, ‘কিডনির পাথরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যথা হঠাৎ করে আসে এবং তা খুব তীব্র হয়। অনেক নারী এ ব্যথাকে প্রসব বেদনার সঙ্গে তুলনা করেন।’
এই ব্যথা সাধারণ পিঠ ব্যথা ভেবে ভুল হতে পারে, কারণ ব্যথার শুরুটা পিঠের উপরিভাগ থেকে হয়। পাথর মূত্রাশয়ের কাছাকাছি চলে এলে ব্যথার অবস্থান নিচের দিকে নেমে আসবে। একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে: কিডনির পাথরের সঙ্গে সম্পৃক্ত পিঠব্যথা সাধারণ ব্যাক স্ট্রেইনের পিঠ ব্যথার মতো নয়, অর্থাৎ কিডনিতে পাথর জনিত পিঠ ব্যথার সঙ্গে নড়াচড়ার সম্পর্ক নেই।
কীভাবে বুঝবেন কোন কিডনিতে পাথর হয়েছে? ডা. কুগান বলেন, ‘সাধারণত যে কিডনিতে পাথর হয় ব্যথা সে পাশে হয়ে থাকে।’ কিডনির পাথরের আকারে তারতম্য হতে পারে। কিডনির পাথরের গড় আকৃতি ৫ মিলিমিটার। কিন্তু একজন লোক কত বেশি ব্যথা পাবে তা অবশ্যই কিডনির পাথরের আকারের ওপর নির্ভর করবে এমন নয়, এমনকি একটা ছোট পাথরও প্রচুর ব্যথায় ভোগাতে পারে।’
প্রস্রাবে রক্ত : কিডনিতে পাথরের আরেকটি সম্ভাব্য সতর্ককারী লক্ষণ হচ্ছে প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি। মনে রাখতে হবে, প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি কখনোই স্বাভাবিক অবস্থা নয়। উপসর্গ দেখা মাত্র পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এছাড়াও অন্য লক্ষণগুলো হচ্ছে- বমিভাব, বমি, ঘাম ঝরা, ব্যথায় বিবর্ণতা। কিডনির পাথর থেকে কখনো কখনো ইনফেকশনও হতে পারে। ইনফেকশনের একটি উপসর্গ হচ্ছে, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া অথবা জ্বর।
শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা
এক্স-রে, আল্ট্রাসাউন্ড অথবা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে কিডনিতে পাথর শনাক্ত করা যেতে পারে। ডা. প্রপ বলেন, ‘অধিকাংশ রোগীর কিডনিতে থাকা পাথর বের হয়ে যেতে পারে, ফলে তারা উপসর্গ থেকে মুক্তি পেয়ে থাকে। কিন্তু কিছু পাথর অপসারণ করতে সার্জারির প্রয়োজন হয়। পাথর যত ছোট হবে এটি নিজে নিজে বের হয়ে আসার সম্ভাবনা তত বেশি।’
প্রতিরোধের উপায়
কিডনিতে পাথর প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, কারণ পানিশূন্যতাকে কিডনিতে পাথরের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আপনি প্রতিদিন কতটুকু সোডিয়াম (লবণ) খাচ্ছেন লক্ষ্য রাখতে হবে। উচ্চ সোডিয়ামের ডায়েট প্রস্রাবে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। ক্যালসিয়াম ও অক্সালেট বা ফসফরাসের সমন্বয়ে কিডনিতে পাথর তৈরি হয়। দৈনিক ২,৩০০ মিলিগ্রামের বেশি সোডিয়াম খাবেন না। আপনার অতীতে কিডনিতে পাথর হয়ে থাকলে সোডিয়ামে গ্রহণের পরিমাণ ১,৫০০ মিলিগ্রামের মধ্যে সীমিত করুন।
প্রাণীজ প্রোটিন সীমিতকরণও আপনাকে সাহায্য করতে পারে। লাল মাংস, পোল্ট্রি, ডিম ও সামুদ্রিক খাবারের মতো প্রাণীজ প্রোটিন অত্যধিক পরিমাণে খেলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ইউরিক অ্যাসিড হচ্ছে কিডনিতে পাথরের আরেকটি দায়ী উপাদান।