মেননের বক্তব্যে বিব্রত নয় ১৪ দল

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-১০-২২ ১৯:৩৮:৫৫


জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বক্তব্যে ১৪ দল বিব্রত নয় বলে জানিয়েছেন জোটের সমন্বয়ক এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম।

তিনি বলেন, ১৪ দল কোনো ব্যক্তির নয়, এটা জোটবদ্ধ সংগঠন। তবে জোটের বৈঠকে রাশেদ খান মেননের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে বলে জানান নাসিম।

মঙ্গলবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৪ দল আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ভারত সমঝোতা স্মারক’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, জোটের বৈঠকে এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তারপর করণীয় ঠিক করা হবে। গোলটেবিল বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা উপস্থিত থাকলেও রাশেদ খান মেনন আসেননি।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, তার পার্টির সেক্রেটারি এসেছেন। তিনি কেন আসেননি, তা আমি বলতে পারব না।

গোলটেবিল আলোচনায় মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের স্বর্ণ অধ্যায় চলছে এখন। একটি মহল এখনও এ বন্ধুত্বকে বাঁকা চোখে দেখছে। যারা এ বন্ধুত্বকে বাঁকা চোখে দেখছেন, তারা কোনো কিছুই সোজা চোখে দেখেন না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন গুজব আর অপপ্রচার চলছে। এ সব গুজব ও অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে তথ্য দিয়ে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, একটি মহল স্বাধীনতার পর জাতির স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে, দেশের স্বার্থ বিলিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে বলে জিকির তুলে আসছে। কিন্তু তারা বারবার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু কোনো চুক্তিই বাতিল করেনি।

তিনি বলেন, তারা পাকিস্তানের চশমা দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে দেখছে। পাকিস্তানের চশমা দিয়ে দেখলে দেশ লাভবান হয়েছে, অর্থনৈতিক সুবিধা বেড়েছে- এ সব চোখে পড়বে না।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এ দেশে আশ্রয় দিয়ে, অস্ত্রের ট্রেনিং দিয়ে, তাদের জন্য দশ ট্রাক অস্ত্র এনে ভারতের কাছে মাফ চেয়েছে। তারা যে কোনো সমস্যাকে আরও বড় সমস্যা তৈরি করে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দেবেন না। তিনি জান থাকতে মান দেবেন না।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, একাত্তরে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, তাদের বিরুদ্ধে এখনও যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আগে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করতে হয়েছে। এখন তাদের গুজব-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিরোধী মহলের কাছে ভারত বিরোধিতা তুরুপের তাস। তারাই ক্ষমতায় থাকলে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে। সুতরাং তাদের এ সব বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়ার কোনো কারণ নেই।

তিনি বলেন, চুক্তির ক্ষেত্রে আমরা দেখব দেশ কতটুকু লাভবান হয়েছে। সংবিধানের প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। চুক্তি কিন্তু সরকারের একার বিষয় নয়, রাষ্ট্রের বিষয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে যে সব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে তা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে শান্তির সম্পর্ক থাকার কারণে উন্নয়ন এগিয়ে যাচ্ছে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ দেখার পাশাপাশি ভারতের মতো প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ পেতেই পারেন। বিএনপি বলছে বঙ্গোপসাগারে রাডার স্থাপনের মাধ্যমে ভারত চীনের ওপর নজরদারি করবে। কিন্তু এ রাডারের মালিকানা বাংলাদেশের। যা দিয়ে আমরা সমুদ্রসীমার ওপরে কঠোর নজরদারি রাখতে পারব।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম মাহবুবের মূল প্রবন্ধের উপরে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

গোলটেবিল বৈঠকে আরও আলোচনা করেন জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, গাজী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইয়ূম, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের সভাপতি এ আরাফাত, সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার প্রমুখ।