পিকে হালদার,শাওন,সামসুলসহ ২২ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৯-১০-২৪ ১৪:১৪:১৫
পুঁজিবাজারের আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পিকে হালদার) ২২ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।
দুদক সূত্র বলছে, ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশযাত্রার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা।
২২ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত চিঠি গত বুধবার পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর পাঠানো হয়েছে। দুদকের এ-সংক্রান্ত অনুসন্ধান দলের প্রধান ও সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন এ চিঠি পাঠিয়েছেন।
দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে। দুদকের অনুসন্ধানে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। বিশ্বস্ত সূত্রে দুদক জেনেছে, অভিযোগসংশ্লিষ্টরা দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই তারা যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন, সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হলো।
যাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে তাদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। পাশাপাশি সন্দেহভাজনদের নামও আছে এ তালিকায়। তাদের একজন প্রশান্ত কুমার হালদার ২০১৫ সালের জুলাই থেকে পরবর্তী তিন বছর এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তার আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ফিন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দেশের বাইরে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক, এনবিআর ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এর আগে প্রশান্ত কুমার হালদারের ব্যাংক হিসাব তলব ও স্থগিত করা হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় এখন তার দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল দুদক।
অভিযোগ আছে, প্রশান্ত কুমার হালদার পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। পুঁজিবাজারের বাহিরেও তার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে নির্বাচিত সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাব লিমিটেডের মহাসচিবও তিনি। ক্লাবটিতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান নিয়ে মন্তব্যের পর সমালোচনার মুখে পড়েন এ সংসদ সদস্য। অভিযান নিয়ে সে সময় তিনি বলেন, চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবে র্যাবের অভিযানে ক্লাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। কোনো ক্লাবে যদি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জুয়া বা ক্যাসিনো ব্যবসা চলে, তা নিশ্চিত হয়ে এবং খোঁজখবর নিয়েই অভিযান চালানো উচিত।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ব্যাংক হিসাব জব্দের পর এবার তার বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো। বর্তমানে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাওন একসময় সংগঠনটির ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার হাত ধরেই ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন বলে জানা যায়। সম্রাটের কাকরাইলের অফিসে শাওনের জন্য একটি কক্ষও বরাদ্দ ছিল।
এছাড়া যাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন কথিত যুবলীগ নেতা এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া, মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক মো. লোকমান হোসেন ভূইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান)। তাদের সবাই র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।
তালিকায় আরো আছেন গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও তার ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রুপন ভূইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান, লোকমান হোসেন ভূইয়ার স্ত্রী নাবিলা লোকমান। গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাই, ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ (আজাদ রহমান), রাজধানীর কাকরাইলের জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাকির হোসেন ও সেগুনবাগিচার শফিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শফিকুল ইসলামের বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যাবে, তাদের সবারই বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। আগামী কয়েক দিনে আরো অনেকে এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এজন্য পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। পরে আরো দুজনকে দলে যুক্ত করা হয়। অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেন। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র্যাব ও বিএফআইইউ প্রধানরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে গত সোমবার জিকে শামীম ও খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। গতকাল আরো দুটি মামলা হয়েছে গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও তার ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রুপন ভূইয়ার বিরুদ্ধে।