ছাগল পালনে স্বাবলম্বী হলেন বেকার যুবক
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০১-০৪ ১২:১৩:১১
তিন বছর আগে শখের বসে দু’টি ছাগল পালন শুরু করেছিলেন বেকার যুবক শিবলী নোমান। সেই ছাগল থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এখন তার খামারে ছাগলের সংখ্যা ১০০। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। তার খামারে দেশি ছাগলের পাশাপাশি রয়েছে বিদেশি প্রজাতির ছাগল। শিবলীর সফলতা দেখে অনেকেই ছাগলের খামার করতে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।
হিলির দক্ষিণ বাসুদেবপুরের মহিলা কলেজপাড়া এলাকা শিবলী তার বসত বাড়ির পাশেই গড়ে তুলেছেন ছাগলের খামার। অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় শখের ছাগল পালন এখন তার পেশা।
শিবলী জানান, ‘২০০১ সালে এসএসসি পাসের পর নানা রকম প্রতিবন্ধকতায় বন্ধ হয়ে যায় আমার পড়াশোনা। এরপর জীবিকার তাগিদে বাবার ডিশের ব্যবসা থেকে শুরু করে কৃষি কাজ কোনও কিছুই বাদ দেইনি। কিন্তু কোনও কাজেই সফলত হতে পারিনি। পরে ২০১৬ সালে শখের বসে ১০ হাজার টাকায় দু’টি ছাগল কিনে লালন-পালন শুরু করি। এক বছরের মধ্যে ছাগল দু’টি ৮টি বাচ্চা দেয়। ওই ছাগলগুলো বিক্রি করে তা থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। এরপর সিদ্ধান্ত নেই ছাগলের খামার করার। এরপর উপজেলা প্রাণী সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শক্রমে যমুনা পাড়ি, তোজাপাড়ি, হরিয়ান ও ব্লাক বেঙ্গল প্রজাতির ছাগল কিনে ম্যাচিং পদ্ধতিতে খামার গড়ে তোলেন। এখন খামারে চার প্রজাতির ১০০টি ছাগল রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই ছাগলের খাওয়ানো পরিচর্যা থেকে শুরু করে ছাগলের সবকিছু দেখাশুনা করে থাকি। তবে এ কাজে আমার পরিবারের লোকজনও সহযোগিতা করে। এছাড়াও বাড়ির পাশের পতিত জায়গায় আবাদ করেছেন হাইড্রোপ্রোনিক ঘাস (মাটি ছাড়া ট্রেতে আবাদ করা ঘাস)। যা ছাগলের জন্য উৎকৃষ্টমানের খাবার সেই ঘাস দিয়েই ছাগলের খাবারের বেশিরভাগ চাহিদা মেটাচ্ছেন।’
তিনি আরও জানান, এই একটি মাত্র প্রাণী যার বছরে দু’বার প্রজনন ক্ষমতা রয়েছে। প্রতিবার প্রজননে একাধিক বাচ্চা দেয়। রোগ-বালাইও কম হয়। বছরে একবার পিপিআর, গডপক্স ভ্যাকসিন দিলেই আর কোনও ওষুধ লাগে না। তাই অল্প খরচে বেশি আয় করা সম্ভব। যেখানে একটি বিদেশি গাভি পালন করলে প্রতিদিন ৩০০ টাকার খাবার খায়। আর সেখানে ৩০০ টাকা হলে প্রতিদিন ৩০টি ছাগলকে খাওয়ানো যায়। ছাগলের খাদ্য হিসেবে খাওয়ানো হয় গম, ভুট্টা ও ছোলা বুটের গুড়ো সেই সঙ্গে সয়াবিন ও খড়ের ছন। যা ছাগলের জন্য খুবই পুষ্টিকর। এছাড়াও দেশের বাজারে ছাগলের বেশ চাহিদার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই ছাগল রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা সম্ভব।
শিবলী বলেন, ‘ প্রতিদিন আমার ছাগলের খামার দেখতে লোকজন আসছেন। তারা আমার কাছে এ সম্পর্কে ধারণা ও নানা ধরনের পরামর্শ নিচ্ছেন। তারাও ছাগলের খামার গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।’
হাকিমপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, ছাগল পালন করে মোটামুটিভাবে সফল হয়েছেন শিবলী। আমরা নিয়মিত তার ওই ছাগলের খামার পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে দিচ্ছি। এখন অনেকেই ছাগলের খামার গড়ে তুলতে পরামর্শের জন্য আমাদের কাছে আসছেন। তাদেরকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।