‘চুরির অপবাদে’ কিশোরকে হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে নির্যাতন
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০১-১৩ ১৮:০০:৪১
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে চুরির অপবাদে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে উল্টো করে ঝুঁলিয়ে এক কিশোরকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। রাতে ঘুমন্ত কিশোরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আটকের পর এ নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। পরে দিনের বেলায় শতশত মানুষের সামনে আবারো লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে নির্যাতন চালানো হয় ওই কিশোরের ওপর। ‘গরু চুরির মিথ্যা অভিযোগে’ কিশোর রাফিকুলের ওপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, ঘটনার পর নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরের বড় ভাই রাফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে ১৩ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্ত দুজনকে আটক করে পুলিশ। আটকরা হলো ধুমাইটারী গ্রামের বাবলু মিয়ার ছেলে রানা (৩০) ও একই গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে আইজুল হক (৫০)। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
গত শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকালে সুন্দরগঞ্জের ধুমাইটারী গ্রামে নির্মম নির্যাতনের ঘটনার সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওচিত্রটি অজ্ঞাত ব্যক্তির কাছে পেয়ে তা ছড়িয়ে দেয় নির্যাতনের শিকার রাফিকুলের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম। রবিবার সন্ধ্যার পর পরেই নির্যাতনের ভিডিওচিত্রের বিষয়টি নজরে আসে গণমাধ্যমকর্মীদের। নির্যাতনের শিকার কিশোর রাফিকুল বর্তমানে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। সুন্দরগঞ্জের ধুমাইটারী গ্রামের দরিদ্র পরিবারের ১৩ বছরের কিশোর রাফিকুল স্থানীয় ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে।
নির্যাতিত কিশোরের স্বজনদের অভিযোগ, প্রতিবেশী ফজলু, ইয়াজল ও নাজমুলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পারবারিক বিরোধ চলছে তাদের। গরু চুরির মিথ্যা অভিযোগে গত শুক্রবার রাতে ঘুম থেকে রাফিকুলকে ডেকে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে প্রভাবশালীরা। পরে রাফিকুলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা দাবি করে তারা। তাৎক্ষণিক তিন হাজার টাকা দেয় তার পরিবারের লোকজন। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে রাতভর আটক রেখে রাফিকুলকে মারধর করা হয়। পরদিন শনিবার সকালে গ্রামের শতশত নারী-পুরুষের সামনে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে উল্টো করে ঝুঁলিয়ে রাফিকুলকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে ফজলু, ইয়াজল ও নাজমুল।
কিশোর রাফিকুলের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামের সকলের সামনে রাফিকুলের ওপর নির্মম নির্যাতন চালালেও কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। নির্যাতনের শিকার রাফিকুল একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর নির্যাতনকারী ভয়-ভীতি ও হুমকি দেওয়ায় মুখ খুলতে এবং অভিযোগ করতে সাহস পাননি ভুক্তভোগীর পরিবার। মোবাইলে ধারণ করা অজ্ঞাত একজনের নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও দেখে বিষয়টি পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানান তিনি।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. শুধাংশু বলেন, মারধরের শিকার কিশোরের দুই পা-হাত ও শরীরের বিভিন্ন জায়গা জখম হয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
এদিকে, ঘটনার পর গাঢাকা দিয়েছে অভিযুক্তরা। এ বিষয়ে অভিযুক্তদের পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাতেই অভিযান চালিয়ে দুই অভিযুক্তকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরের বড় ভাই রাফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
থানার ওসি আব্দুল্লাহিল জামান বলেন, ভিডিও দেখে ঘটনার বিষয়ে জানতে পরেছি। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে ওই কিশোরের বড়। কিশোর নির্যাতনের ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস