হারিয়ে গেছে হলদে পাখিটা
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২০-০১-১৫ ১০:৫৮:৫৩
বাড়ির পেছনে বড় বাঁশঝাড়।সেই বাঁশঝাড়ে সারাক্ষণ পাখির কিচির-মিচির লেগেই থাকে।হরেক রকমের পাখির এক নির্ভয় আশ্রয়স্থল এটা।এছাড়াও এখানে বাস করে শিয়াল,খেঁকশিয়াল,বেজী, বনবিড়াল সহ আরো কিছু ক্ষুদ্র প্রাণী।পাখিদের মধ্যে রয়েছে দোয়েল,কোকিল,শ্যামা,দাঁড়কাক,ফিঙ্গে,বুলবুলি,টুনটুনিসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
এছাড়াও এই বাঁশঝাড়ে মনের সুখে দিন কাটচ্ছিল একজোড়া হলদে পাখি।তাদের মনে কোন কষ্ট ছিল না।বিভিন্ন পোকামাকড় খেয়ে তারা দিনাতিপাত করতো।বাঁশঝাড়ের অন্যান্য পাখিদের সাথে ছিল তাদের দারুন ভাব।তারা মনের সুখে একে অপরের সাথে গল্প করতো গান গাইতো।পুরুষ হলদে পাখিটি প্রতিদিন অন্য জঙ্গলে এবং নদীর তীরে যেত পোকামাকড় কুড়িয়ে আনতে।তারপর সেগুলো খেয়ে তারা ক্ষুধা নিবারণ করতো।অন্যান্য দিনের মতোই একদিন পুরুষ হলদে পাখিটি খাবারের খোঁজে উড়াল দিল দূর বনে।
সেদিন ঠিক দুপুরবেলা হঠাৎ করে কোথা হতে কয়েকজন পাখি শিকারী এসে বাশঁঝাড়ে হানা দিল। তারা অত্যন্ত নির্মমভাবে তীর-ধনুক দিয়ে পাখিদের হত্যা করতে লাগলো।
তাদের প্রত্যেকটি নিশানায় ছিল অব্যর্থ।হঠাৎ তাদের চোখে পড়ে বনের সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে হলদে পাখিটির দিকে।একজন নিষ্ঠুর শিকারী নির্মম হাসিমুখে মেয়ে হলদে পাখিটির দিকে ধনুক তাক করে।এরপর,পাখিটির বুক বরাবর ছুঁড়ে দেয় তার বিষমাখানো তীর।তীরটি পাখিটির বুক এফোঁড়-ওঁফোড় করে বেড়িয়ে যায়।পাখিটি টুপ করে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে।একটুখানি ঝাঁকুনি দিয়ে বেড়িয়ে যায় তার প্রাণপাখি।পাখিটিকে তুলে নিয়ে থলেতে ভরে অন্য বনের দিকে চলে যায় শিকারির দল।
সন্ধ্যোবেলায় দূর বন থেকে পোকামাকড় নিয়ে নীড়ে ফিরে আসে পুরুষ হলদে পাখিটি।বাঁশঝাড়ে এসে প্রিয় সঙ্গীনিকে দেখতে না পেয়ে চিৎকার করে ডাকতে থাকে।কিন্তু কোথাও তার কোন সাড়া পাওয়া যায় না।বনের এক বুলবুলি পাখি তাকে এসে জানায়।তার প্রিয় সঙ্গীনিকে শিকারী পাখি তীর ধনুক দিয়ে মেরে নিয়ে গেছে।সে তার বাসার পাশের বাঁশগাছে দেখতে পায় ছোপ-ছোপ রক্তের দাগ।প্রিয় সঙ্গীনির বিরহে সে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।যেন অভিশাপ দিতে থাকে নিষ্ঠ্রর শিকারীকে।সে কয়েকদিন যাবত সারাদিন-রাত চিৎকার করে কেঁদে-কেঁদে ডাকতে থাকে তার সঙ্গীনির নাম।তার কান্নায় আশে-পাশের অন্য পাখিরাও নিরবে কাঁদে।তারপর একদিন বুকভরা অভিমান নিয়ে সে চলে যায় অন্য কোথা্ও অজানার উদেশ্যে।আর কখনো সে ফিরে আসেনি এই বাঁশঝাড়ে।
লেখক: নুরুজ্জামান
সানবিডি/এনজে