খেলাপি ঋণ ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বাড়িয়েছে: ডিসিসিআই

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০১-২১ ১০:০৬:২৪


যে সকল গ্রাহকরা ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে, তবে কোনো উদ্যোক্তা যদি সময়মতো গ্যাস, বিদ্যুৎ, অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে থাকেন, তাদেরকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত নয়। খেলাপি ঋণের ফলে ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় বেড়েছে।  এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ। সভায় তিনি বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থা বেসরকারি খাতে দেয়ার প্রস্তাবও করেন।

ডিসিসিআই ২০২০ সালে বর্ষব্যাপী কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য এ সভার আয়োজন করে । এতে ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এনকেএ মবিন, সহসভাপতি মোহাম্মদ বাশিরউদ্দিন, পরিচালক আরমান হক, আশরাফ আহমেদ, দীন মোহাম্মদ, এনামুল হক পাটোয়ারী, ইঞ্জিনিয়ার মো. আল আমিন, মো. রাশেদুল করিম মুন্না, মো. জিয়া উদ্দিন, মনোয়ার হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার শামসুজ্জোহা চৌধুরী, এসএম জিল্লুুর রহমান, ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপস্থাপিত তথ্যচিত্রে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ রফতানি বহুমুখীকরণ, মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি, পুঁজিবাজার, জ্বালানি নিরাপত্তা, ভ্যাট-ট্যাক্স, বৈদেশিক বিনিয়োগ, ব্যবসা পরিচালনার সূচকে উন্নয়ন, গবেষণা ও উদ্ভাবন, অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, এসডিজি প্রভৃতি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

রফতানি বহুমুখীকরণ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, তৈরি পোশাক আমাদের রফতানির প্রধান খাত হলেও রফতানি আরো বাড়ানোর লক্ষ্যে অন্যান্য খাতে উন্নতি করতে হবে। তিনি জানান, আমাদের রফতানির মোট ৮০ শতাংশ হয় উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয়। এক্ষেত্রে তিনি পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং বাজার সম্প্রসারণের ওপর জোরারোপ করেন।

দক্ষতা উন্নয়ন প্রসঙ্গে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, এটুআই প্রকল্প পরিচালিত গবেষণা অনুসারে অটোমেশনের ফলে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, কৃষি ও খাদ্য, পর্যটন এবং চামড়া খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৪০ শতাংশ হুমকির মধ্যে রয়েছে। এ লক্ষ্যে মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সব খাতে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে প্রশিক্ষণ প্রদান ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের আহ্বান জানান তিনি।

ব্যাংকিং খাত নিয়ে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, বৈশ্বিক অসহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থার বিবেচনায় বাংলাদেশ একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে। খেলাপি ঋণের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে, তবে কোনো উদ্যোক্তা যদি সময়মতো গ্যাস, বিদ্যুৎ, অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে থাকেন, তাদেরকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত নয়। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের ফলে ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় বেড়েছে।

পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে শামস মাহমুদ বলেন, আমাদের একটি শক্তিশালী সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেট থাকা জরুরি। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশনাই যথেষ্ট। তিনি কোম্পানি বাই-ব্যাক ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দেন এবং সুশাসনের ওপর জোরারোপ করেন।

ভ্যাট প্রসঙ্গে সভাপতি বলেন, বর্তমানে যারা ১৫ শতাংশ ভ্যাটের আওতায় পড়ে, তারা ভ্যাটের ওপর রিবেট পেয়ে থাকেন। তবে তিনি অন্যান্য স্ল্যাবের ওপর যথা ৫, ৭, ৭ দশমিক ৫ এবং ১০ শতাংশ ভ্যাটের ওপর রিবেট প্রদানের আহ্বান জানান।

জ্বালানির দাম প্রসঙ্গে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিদ্যুতের দাম যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, একই সঙ্গে এর মানের বিষয়টিও অত্যন্ত আবশ্যক। বর্তমানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ মোট চাহিদার চেয়ে বেশি। তবে তিনি বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থা বেসরকারি খাতে দেয়ার প্রস্তাব করেন। যেসব শিল্প গ্রিন টেকনোলজি ব্যবহার করে বিদ্যুতের অপচয় ও ব্যবহার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে, সেসব শিল্পকে বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার প্রস্তাবও করেন তিনি। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনার ওপর জোরারোপ করেন। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে গ্যাসকূপ অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানো এবং দেশীয় উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব করেন।

জিএসপি প্রসঙ্গে সভাপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের জিএসপি সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও সেখানে আমাদের রফতানি বেড়েছে। তৈরি পোশাক খাতে ফরওয়ার্ড লিংকেজের উন্নতি হলেও এ খাতসহ টেক্সটাইল খাতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ আশানুরূপ হারে অগ্রসর হয়নি। তিনি জিএসপি সুবিধা পেতে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। সূত্র-বণিক বার্তা

সানবিডি/এনজে