ব্যাংকে প্রশান্ত হালদারের ১৬৩৫ কোটি টাকা

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০১-২১ ১৪:৩০:১৫


এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারের প্রায় ৫শ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেশে থাকার তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব সম্পদ ক্রোকের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুদক। অভিযোগ রয়েছে, প্রশান্ত কুমার হালদার কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুর অবস্থান করছেন।

জানা গেছে, প্রশান্ত কুমার হালদার নিজ নামে ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন সময়ে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা জমা করেছেন। যার মধ্যে তার নিজ নামে পরিচালিত হিসাবগুলোতে ২৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, তার মা লীলাবতীর নামে পরিচালিত হিসাবে ১৬০ কোটি টাকার তথ্য পাওয়া গেছে। অবশিষ্ট ১ হাজার ২৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে জমা করা হয়েছে- যা পরে বিভিন্ন সময়ে উত্তোলন করে অন্যত্র স্থানান্তর, রূপান্তর, হস্তান্তরপূর্বক তিনি এসব অর্থের অবস্থান গোপন করেন এবং অবৈধ উপায়ে অর্জিত এসব অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। তার নামে-বেনামে ঢাকায় ফ্ল্যাট, বাড়ি ও গাড়িসহ আরও সম্পদ রয়েছে বলে মনে করে দুদক।

দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে একটি অভিযোগ দুদকে জমা পড়ে। কমিশন অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করতে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরীকে নিযুক্ত করে। ওই কর্মকর্তা অনুসন্ধান শুরুর পরই পুলিশের গোয়েন্দা শাখা চিঠি দেয়, প্রশান্ত কুমার যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন। কিন্তু দেশত্যাগে এ নিষেধাজ্ঞা জারির আগেই তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। দুদকের ওই

কর্মকর্তা বলেন, আমরা তার ওপর নজর রাখছি। তিনি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, প্রশান্ত কুমার হালদার অবৈধভাবে ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকা অর্জন করেছেন-দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারায় যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে গত ৮ জানুয়ারি মামলা করা হয়েছে। অনুসন্ধানকালে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির শীর্ষপর্যায়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে ২৮৭ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেতন-ভাতাসহ ১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া গেলেও অবশিষ্ট ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকা আয়ের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, প্রশান্ত কুমার হালদারের দেশে যে পরিমাণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে, তা ৫শ কোটি টাকার মতো হতে পারে। এখন এ সম্পদ ক্রোকের অনুমতির জন্য আমরা আদালতে যাব। আদালতে আবেদন করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, প্রশান্ত কুমার হালদারের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ করার বিষয়ে আদালতে আবেদন করতে গতকাল সোমবার সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ করার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করতে কমিশনের অনুমোদন প্রয়োজন। এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশান্ত কুমার হালদারের নামে ঢাকায় একাধিক বাড়ি, প্লট ও ফ্ল্যাট থাকার পাশাপাশি নামে ও বেনামে একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি অবৈধ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ উৎস থেকে অর্জিত সম্পদের বেশিরভাগই বিদেশে পাচার করেছেন। অবৈধ পন্থায় অর্জিত সম্পদের বিষয়ে পরে তদন্তকালে আন্তঃরাষ্ট্রীয় যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করা হবে। মামলার তদন্তকালে আর কোনো সম্পদ অবৈধ উপায়ে অর্জন করেছেন মর্মে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুদকের অনুসন্ধানকালে প্রশান্ত কুমার হালদারের আয়কর নথি ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তার নিজ নামে ৩২ কোটি ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭২৬ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে, যা অর্জনের সপক্ষে আয়ের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া প্রশান্ত কুমার হালদার ৮টি কোম্পানিতে তার নিজ নামে, নিকটাত্মীয় ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে এবং বেনামে ৬৭ কোটি ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৯ টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যার সপক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে তিনি ৯৯ কোটি ৬১ লাখ ২ হাজার ৯২৫ টাকার সম্পদ অর্জনের আয়ের সপক্ষে বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি।

এ ছাড়া প্রশান্ত কুমার হালদার ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের ৯টি দলিলমূলে ভালুকা উপজেলার হাতিবেড় এবং উথুরা মৌজায় সর্বমোট ৫৮৯ শতক জমি নিজ নামে ১ কোটি ৩৪ হাজার টাকায় ক্রয় করেছেন। ওই স্থাবর সম্পদ অর্জনের পক্ষে কোনো বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস