বাউল ঐতিহ্য যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় : প্রধানমন্ত্রী

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০১-২২ ১৯:২২:৩৬


বাউল ঐতিহ্য যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, একজন বাউল শিল্পীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখানে বাউল গানের তো কোনো দোষ নেই। বাউল গানে সম্পৃক্ত কেউ যদি কোনো অপরাধে সম্পৃক্ত হন- তাহলেও আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আইন অনুযায়ী অপরাধের বিচার হবে।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব কথা বলেন। আইসিটি মামলায় টাঙ্গাইলের বাউল শরিয়ত বয়াতীর গ্রেপ্তারের বিষয়ে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, প্রশ্নকর্তা কী এমন কোনো গ্যারান্টি দিতে পারবেন- বাউল গান করছেন বলেই ওই শিল্পী কোনো অপরাধে জড়িত নন। নিশ্চয়ই তিনি এমন কোনো অপরাধ করেছেন, যার জন্য তার বিরুদ্ধে এমন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন সরকার বাউল গানকে বিশ্ব ঐতিহ্য করার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। তাই অনুরোধ করবো, বাউল গানে সম্পৃক্তরা যেন এমন কোনো কাজ না করেন, যাতে বিশ্ব ঐতিহ্য বাউল গান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

এর আগে রাজবাড়ীর পাংশার বাউল সম্প্রদায়ের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসকদের মতো এখনও যদি চুল কেটে দেওয়ার মতো কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে সরকার সেটা দেখবে। কারণ অহেতুক চুলকাটা বা বাউলদের প্রতি যে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি গ্রহণযোগ্য নয়।

কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানের বাউল সম্প্রদায়ের কল্যাণে তাঁর সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন তিনি আরো বলেন, পঁচাত্তরের পর সামরিক শাসকদের যারাই ক্ষমতায় এসেছে- তাদের মধ্যেই এমন প্রবণতা দেখা গেছে। ক্ষমতায় এসে প্রথমেই তারা চারপাশটা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করতে শুরু করেন, অর্থাৎ সুইপারের দায়িত্ব তারাই নিয়ে নেন। যারা ক্ষমতায় আসেন, তাদের কেউ টিশার্ট পড়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেন, কৃচ্ছতা সাধনের কথা বলেন, কেউ সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাওয়া শুরু করেন। পরে দেখা যায় তারাই সবচেয়ে দামি গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়ান, প্যারিস থেকে স্যুট নিয়ে আসেন, শিফন শাড়ি নিয়ে আসেন। মানুষের চুলকাটাসহ এসব কাজগুলো তারাই করেছেন। অবশ্য তাদের এমন উদ্যোগ বেশি দিন টেকে না। তারপরই দেখা যায় তারা নিজেদের আসল রূপকে প্রকাশ করে ফেলেন।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সঠিক বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ধনী, গরীব নির্বিশেষে সকলের জন্য সমতার ভিত্তিতে সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার ব্যবস্থায় দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধন করে সামাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহারে যেমন বহুমাত্রিক অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি প্রযুক্তি ব্যবহার করেই অপরাধীদেরকে আইনের জালে ধরে ফেলা হচ্ছে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি ও বেসরকারিভাবে সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকের পণ্য উৎপাদন, বিক্রি ও বাজারজাত করার পদক্ষেপ বিদ্যমান রয়েছে। যাতে কৃষকরা অধিক লাভবান হবে। পুরনো সমবায় আইনকে যুগোপযোগী করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী

সরকারি দলের শহীদুজ্জামান সরকারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকারের উদ্যোগ ও গবেষণার ফলে মৌসুমী তরিতরকারি ও শাকসব্জি সারা বছর উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। এসব তরিতরকারি প্রক্রিয়াজাত করার জন্যও সরকার উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারজাত করা কিংবা রপ্তানি করার সুযোগ পান। বেসরকারি উদ্যোগে তরিতরকারি রপ্তানি করা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আগামীতে এই প্রক্রিয়ার আরও আধুনিকায়ন করা হবে।

আইন শৃঙ্খলায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান সাফল্য হলো- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা। বর্তমান সময়ে মাদক সমস্যা সমাজের একটি বিষফোঁড়া। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। মাদক সংক্রান্ত মামলাসমূহের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেছি। মাদকের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও বর্তমানে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকার নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের লক্ষ্যে ৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গঠন করা হয়েছে, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধসমূহের যে দ্রুত বিচার সম্পন্ন হচ্ছে তার প্রমাণ চাঞ্চল্যকর ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলা। মাত্র ৬২ কার্যদিবসে এ মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, আমাদের সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। দুর্নীতির মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের দুর্নীতির মামলাসহ অন্যান্য চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির মামলাসমূহ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

সরকার দলীয় অপর সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য সর্বদা সচেষ্ট। অসৎ মুনাফাখোর কতিপয় ব্যবসায়ী মাঝে মধ্যে নিত্য পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন এবং অধিক মুনাফা লাভের চেষ্টা করে থাকে।

সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য মমতা হেনা লাভলীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু ঝুঁকি ইনডেক্সে বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও অনাবৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে। দেশজ উৎপাদন উৎপাদনশলিতা ব্যাহত হচ্ছে যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্থ করছে।

তিনি জানান, বায়ু মণ্ডলে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বিগত ১০০ বছরে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১৭ থেকে ২১ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এর ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, ছোট ছোট দ্বীপ এবং নিম্নাঞ্চলসহ এক পঞ্চমাংশ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় লবণাক্ততা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ, প্রতিবেশসহ কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা মে মাসে এক ডিগ্রি এবং নভেম্বর মাসে দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের লোনা পানি দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ কিলেমিটার পর্যন্ত নদীতে প্রবেশ করছে। গড় বৃষ্টিপাতও বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ১৯ জেলার ৭০টি উপজেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস