বৈশ্বিক ফার্নিচার বাজারের ৩১ শতাংশ চীনের দখলে
দক্ষতা ও নীতি সহায়তার অভাবে পিছিয়ে বাংলাদেশ
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০১-২৩ ১৭:২৯:৫৮
দেশের অভ্যন্তরে ফার্নিচারের বাজার ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে রফতানি বাজারে বাংলাদেশের উপস্থিতি এখনো সীমিত। ফার্নিচারের বৈশ্বিক বাজার এখন প্রায় ৪৮ হাজার কোটি ডলারের। গত অর্থবছরে দেশের রফতানি ছিল মাত্র সাড়ে ৭ কোটি ডলার বা প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা। বৈশ্বিক বাজারে দেশের ফার্নিচার খাতের প্রবেশের প্রধান বাধা দক্ষতার ঘাটতি। এছাড়া কর, ভ্যাট, অর্থায়ন ও নীতি সহায়তারও অভাব রয়েছে। এসব বাধা দূর করতে পারলে বৈশ্বিক বাজারে সহজেই বড় অংশ দখলে নিতে পারবে বাংলাদেশ।
ফার্নিচার খাত নিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের সহায়তায় পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের শিক্ষকরা। গবেষক হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীয়ত উল্লাহ, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসাইন, ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এবং ড. গাজী মোহাম্মদ হাসান জামিল।
গতকাল রাজধানীর এসএমই ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে গবেষণা প্রবন্ধটি উপস্থাপন করা হয়। সভায় এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম শাহীন আনোয়ার।
গবেষণায় উঠে এসেছে বিশ্বে ৪৮ হাজার ৭০ কোটি ডলারের ফার্নিচারের বাজারের ৩১ দশমিক ৭ ভাগই চীনের দখলে। ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বে ফার্নিচার খাতের বাজার হতে পারে ৬৫ হাজার ৪৬০ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরে মাত্র ৭ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের ফার্নিচার রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা মোট রফতানির শূন্য দশমিক ১৮ ভাগ। তবে ইতিবাচক দিক হলো, গত অর্থবছরে দেশের মোট রফতানি ১০ দশমিক ৫৫ ভাগ বাড়লেও ফার্নিচার রফতানি বেড়েছে ১৮ দশমিক ৫২ ভাগ। আর ২০২২ সালে দেশের ফার্নিচার রফতানি ১০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন গবেষকরা।
এ বিষয়ে ড. মোহাম্মদ শরীয়ত উল্লাহ বলেন, বৈশ্বিক বাজারে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি। আমাদের বাজার প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো। তবে মোট অংশীদারে অনেক কম। নীতি সহায়তার মাধ্যমে আর্থিক, ট্যারিফ এবং অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি ফার্নিচার খাতে শ্রমিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানো গেলে বিশ্ববাজারের একটা বড় অংশ দখলে নিতে পারবে বাংলাদেশ। তাছাড়া বিদেশের পাশাপাশি দেশের বাজারে ফার্নিচার খাতের সম্প্রসারণে আরো নীতি সহায়তা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি ফার্নিচার পণ্যের গুণগত মান আরো বাড়াতে হবে। এছাড়া দেশের বাজারে সম্প্রসারণে বড় বাধা ট্যারিফ সিস্টেম। সেটি পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
গতকালের সভায় ফার্নিচার খাতের শীর্ষ উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফার্নিচার খাতের সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মতামত নিয়ে শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করবে এসএমই ফাউন্ডেশন। গতকালের বৈঠকে ফার্নিচার খাতের ব্যবসায়ীরা বেশকিছু মতামত তুলে ধরেন। তাদের মতে, কর কাঠামো পুনর্বিবেচনা, উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা, আলাদা ফার্নিচার শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠা, ভ্যাট কাঠামো সহজ করা এবং এ খাতের উদ্যোক্তা ও কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানো গেলে চীনের দখলে থাকা ফার্নিচার বাজারের একটা বড় অংশ দখলে নিতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের সব কয়টি দেশ ছাড়াও আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ফার্নিচার রফতানি করছে দেশের ১৫-২০টি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান ফার্নিচার খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। বড় ব্র্যান্ডগুলো তাদের পণ্যের নিত্যনতুন নকশা ও উন্নত মানের কারণে দেশের ফার্নিচার বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস