সরিষার দানায় কৃষকের সফলতার স্বপ্ন
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০১-২৭ ১৫:১৮:২৭
খোলা আকাশের নীচে ফাঁকা মাঠ জুড়ে এ যেন হলুদ রং এর আলপনা। কোথাও সবুজ রং ভেদ করে হলুদ রং দিয়ে রাঙ্গানো আবার কোথাও শুধুই হলুদের আলপনা। মেঠোপথের দুই পাশ জুড়ে হলুদের সমারোহ। মাঠে মাঠে ছেয়ে গেছে সরিষার ক্ষেত। সবুজের আগায় ভরা হলদে সরষে ফুলে মৌমাছির ঘুরপাক। বাতাসে দুলছে সরিষা, সরিষার দানায় দানায় যেন এক একজন কৃষকের স্বপ্ন। সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় বেজায় খুশি কৃষকের মন।
এ অঞ্চলের রবিশস্য হিসেবে গত বছরের তুলনায় ৬ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এখন ভালো দামের আশায় সরিষা ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন উত্তরের চাষীরা।
আর কিছুদিন পর সরিষা ঘরে তোলার সময়। বর্তমান বাজার অনুযায়ী দাম পেলে আগামীতে এ অঞ্চলের সরিষার চাষাবাদ আরো বাড়ছে বলে মনে করছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গেল বছরের তুলনায় এবার রংপুর অঞ্চলে সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বছর রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৩৮ হাজার ৯৪১ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গেল বছরের চেয়ে ৬ হাজার হেক্টরের বেশি।
সূত্র আরও জানায়, রংপুর কৃষি অঞ্চলের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, রংপুর ও নীলফামারী জেলায় এখন পর্যন্ত ২৯ হাজার ৩৮৬ হেক্টরে জমেতে সরিষার আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার মোট উৎপাদন থেকে এবছর ৫৭ হাজার ৪৪১ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, এবছর কুড়িগ্রাম জেলায় ১১ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। যা রংপুর কৃষি অঞ্চলের অন্যান্য জেলার তুলনায় সবচেয়ে বেশি। আর সবচেয়ে কম আবাদ হয়েছে লালমনিরহাট জেলায়। এখানে মাত্র ২ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধায় ৬ হাজার ২৫ হেক্টর, নীলফামারীতে ৫ হাজার ৩৯০ হেক্টর এবং রংপুরে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের বগুড়াপাড়া এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, গত বছরের তুলনায় এবার তার ৩০ শতাংশ জমিতে সরিষার ভালো চাষ হয়েছে। আর দেড় থেকে দুই মাস পরই এ ফসল ঘরে উঠবে। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবারও সরিষা আবাদ করেছেন।
অন্য ফসলের চেয়ে সরিষা উৎপাদনে খরচ অনেক কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় সরষিা চাষে রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকে পড়েছেন বলে জানান, রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সারোয়ারুল হক।
তিনি জানান, সম্পূরক রবি শস্য হিসেবে সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে সরিষা বীজ প্রদান দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চাষকৃত সরিষার বেশির ভাগেই দানা ও ফুল এসে গেছে। আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
এদিকে শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশা বেশি হলে সরিষার ফলনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী।
তিনি বলেন, গত বছর বন্যা ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সরিষার আবাদ কম হয়েছিল। এবার আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূল থাকায় সরিষার আবাদ গেল বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। যদি শৈত্যপ্রবাহের স্থায়ীত্ব কমে আসে তাহলে আবাদে কোন প্রভাব পড়বে না।
সানবিডি/এনজে