ফেসবুক খুলে না দেয়ায় রাবি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

প্রকাশ: ২০১৫-১১-২৬ ১৮:০৯:০৫


Fecebookএক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বন্ধ রাখায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।

অল্প সংখ্যক ব্যবহারকারী বিকল্প পদ্ধতিতে এগুলো ব্যবহার করলেও অধিকাংশরাই তা ব্যবহার করতে পারছেন না। এতে বাকস্বাধীনতা ক্ষুন্ন করা হচ্ছে বলেও অনেকে অভিযোগ করেন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় বাংলামেইলের প্রতিনিধির সঙ্গে।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেয়ায় জনগণের বাকস্বাধীনতা ক্ষুন্ন হচ্ছে কি না এ প্রশ্নের জবাবে আইন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগর বাংলামেইলকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অবশ্যই বাক স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হচ্ছে। তবে রাষ্ট্র ইচ্ছা করলে জরুরি পরিস্থিতিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু বর্তমান সময়ে সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারুক খান বলেন, ‘বাংলামেইলে “খুলে গেল ফেসবুক!” শিরোনামটি পড়ে খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম। ভাবলাম-যাক এবার তাহলে ফেসবুক খুলেছে। কিন্তু পূর্ণ নিউজটি পড়ে জানলাম ‘না’ সাময়িক সময়ের জন্য খোলা হয়েছিল। আবার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে আবারো হতাশ হয়ে পড়ি।’

জানতে চাইলে রাবি শাখা ছাত্র ফ্রন্টের সহ-সভাপতি তাসনুভা তাহরীন অন্তরা বাংলামেইলকে বলেন, ‘সমাজিক মাধ্যমকে কেউ ভালো কাজে আবার কেউ খারাপ কাজে ব্যবহার করে। তবে সবার অধিকার কেড়ে নিয়ে এভাবে সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করে রাখা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়।’ এটা সরকারের লোক দেখানো কাজ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে, ক্ষোভ প্রকাশ করে সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আহসন হাবিব রকি বাংলামেইলকে বলেন, ‘একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার জরুরি অবস্থা জারি করলে সেটা মেনে নেয়া যায়। কিন্তু ফেসবুক বন্ধ করার মতো কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। আসলে এটা সরকারের চেক প্রোজেক্ট। ভবিষ্যতে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা আরো ঘটবে বলে মনে হচ্ছে।’

রাবি শাখা ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দীলিপ রায় বাংলামেইলকে বলেন, ‘যখন গণতন্ত্রের আড়ালে সামরিক শাসন চলে তখন শাসকরা বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। মানুষকে বিচ্ছন্ন করতে চায়। সামাজিক মাধ্যমগুলো বন্ধ করা সেই অপ্রচেষ্টারই অংশ। এভাবে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।’

বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রিয়াঙ্কা দত্ত বলেন, ‘সামাজিক যোগযোগের মাধ্যম ফেসবুক এখন শুধুমাত্র শখের বশে ব্যবহার করা হয় না। এ মাধ্যম এখন চলন্ত জীবনের অপরিহার্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুব সহজেই একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা, খবর পড়া, ইত্যাদি কারণে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কাছে তো এর কদর আরো বেশি।’

ফেসবুক বন্ধ রাখা হলেও ভিন্ন উপায়ে ফেসবুকে যাতায়াত করছেন কেউ কেউ। কথা হয় এমন একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। বললেন, ভিন্ন উপায়ে মাঝে মধ্যে ফেসবুক ব্যবহার করছি। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আবার ভয়ও কাজ করছে তদারকি করে আইনি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না।’

ফাইনান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মারুফ হাসান জানালেন, ক্লাসের প্রাত্যহিক রুটিনগুলো ক্লাস ক্যাপ্টেন তাদের ফেসবুক গ্রুপ পোস্ট দেন। সেখান থেকে সবাই একবারেই তথ্যটি জেনে যায়। কিন্তু ফেসবুক বন্ধ থাকায় ফোন করে সবাইকে জানাতে হয়। যা কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল।’

প্রসঙ্গত, গত ১৮ নভেম্বর প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে বুধবারে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী কুমার দেবুল দে ফেসবুক খুলে দিতে আইনি নোটিশ দিয়েছেন। কিন্তু কবে নাগাদ এ মাধ্যমগুলো খোলা হবে তা জানা যাচ্ছে না।