স্বশাসিত সংস্থার উদ্বৃত্ত অর্থ কোষাগারে নেওয়ার বিল পাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক || প্রকাশ: ২০২০-০২-০৬ ০৯:২৪:৪৭ || আপডেট: ২০২০-০২-০৬ ০৯:২৪:৪৭

স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফিন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহারের আইন করার প্রস্তাব তীব্র বিরোধিতার মুখে গতকাল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বিলটি পাসের প্রতিবাদে সংসদে থেকে ওয়াকআউট করেছে বিএনপি। অন্যদিকে বিলের বিরোধিতায় ওয়াকআউট না করলেও ‘না’ ভোট দেন প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) এমপিরা।
বুধবার ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফিন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান বিল-২০২০’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হওয়ার আগে বিলের ওপর দেয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো উত্থাপনের সময় এর বিরোধিতা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির সংসদ সদস্যরা। বিরোধিতাকারীরা বিলটিকে ‘কালো আইন’ বলে আখ্যা দেন।
১৫ জানুয়ারি বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিলটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায়। ওইদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, রাষ্ট্রের স্বশাসিত সংস্থাগুলোর আর্থিক স্থিতির পরিমাণ বর্তমানে ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এ টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসাবে আছে।
বিলে বলা হয়েছে, এসব সংস্থা চালাতে যে খরচ হয় এবং নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরে যে অর্থ লাগে, তা তাদের নিজস্ব তহবিলে জমা রাখা হবে। পাশাপাশি আপত্কালীন ব্যয় মেটানোর জন্য পরিচালন ব্যয়ের আরো ২৫ শতাংশ অর্থ তারা সংরক্ষণ করতে পারবে। এছাড়া কর্মীদের পেনশন বা প্রভিডেন্ড ফান্ডের অর্থও এসব প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ করবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, পাবলিক নন-ফিন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ অন্য স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী আয়-ব্যয় ও বছর শেষে তাদের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। ব্যাংকে রক্ষিত হিসাবের স্থিতি থেকে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমে আছে। সংস্থাগুলোর তহবিলে রক্ষিত উদ্বৃত্ত অর্থ জনগণের কল্যাণ সাধনে ব্যবহার করা সমীচীন।
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, এটা একটা কালো আইন। আইন করে সব টাকা তুলে নেবে। উন্নয়ন-অর্থ দরকার আছে। কিন্তু সামর্থ্য কতটুকু? এ টাকাগুলো ব্যাংকে জমা আছে। টাকা নেয়া হলে ব্যাংকগুলো মারাত্মক বিশৃঙ্খলায় পড়বে। প্রতিষ্ঠানগুলোর স্পৃহা ধ্বংস হয়ে যাবে। ক্ষমতার অতিরিক্ত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। বিদেশী বিনিয়োগ নেই। শেয়ারবাজার ধ্বংস করে ফেলেছি। আমি এ বিলটি প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানাব।
জাপার কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বিলটি পাস হলে অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে যাবে। ব্যাংকিং খাতের অবস্থা নাজুক। জনগণের স্বার্থে যদি উন্নয়ন করতে চান, তবে ভ্যাটে অটোমেশন করলেন না কেন? রাজস্ব বোর্ড অটোমেশন করতে দিচ্ছে না। টাকা চুরি করছে। ট্যাক্স নিচ্ছেন না, নিচ্ছেন ঘুষ। এটাকে সহজ করছেন না। টাকার মালিক জনগণ। জনগণের গচ্ছিত টাকা। পাচার হওয়া টাকা উদ্ধার করেন।
পাস হওয়া বিলে মোট ৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা ওয়াসা, চট্টগ্রাম ওয়াসা, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ইত্যাদি।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
-
মুন্সীগঞ্জ শিল্প পার্কে সাড়ে চার লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে: শিল্পমন্ত্রী
-
অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, পণ্য সরবরাহ বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ
-
অতীতের সব রেকর্ড ভাঙলো স্বর্ণের দাম, ভরি ৮২৪৬৬ টাকা
-
এখনই জ্বালানির দাম বাড়ানোর চেষ্টা আত্মঘাতী: এফবিসিসিআই
-
বেনাপোলে দুর্বল অবকাঠামো: কমছে আমদানি-রফতানি ও রাজস্ব
-
সব জায়গায়-ই অনিয়ম রয়েছে : ভোক্তার ডিজি