সংকটের মুখে অস্ট্রেলিয়ার তুলা শিল্প

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৩-০১ ১১:২৭:১৪


অস্ট্রেলিয়ার কৃষি ও পরিবেশের জন্য ২০১৯ সাল ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের একটি বছর। বছরের শুরু থেকে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ খরার কবলে পড়ে দেশটি। এ ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে দেশটির বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে দেখা দেয় ভয়াবহতম দাবানল। একের পর এক বৈরী আবহাওয়ার ধাক্কা অস্ট্রেলিয়ার কৃষি, প্রাণ-প্রতিবেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এ পরিস্থিতি দেশটির তুলা শিল্পকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

স্বল্প বৃষ্টিপাত, খরা ও দাবানলের পর দেশটিতে তুলার আবাদ অর্ধেকের বেশি কমেছে। এর জের ধরে অস্ট্রেলিয়ায় তুলা উৎপাদন কমেছে ৪৫ শতাংশ। কমতির দিকে রয়েছে দেশটি থেকে পণ্যটির রফতানিও। সংকট আরো জোরদার করতে পারে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। খবর এগ্রিমানি ও স্টারট্রিবিউন।

মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিকূল আবহাওয়ার জের ধরে ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ১ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর তুলা আবাদ হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫৫ দশমিক ২৬ শতাংশ কম। ২০১৮ সালে দেশটিতে ৩ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর তুলা আবাদ হয়েছিল। অর্থাৎ বছরজুড়ে অনাবৃষ্টি, খরা ও দাবানলের কারণে এক বছরেই অস্ট্রেলিয়ায় ২ লাখ ১০ হাজার হেক্টর তুলার আবাদ কমেছে।

তবে অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড রিসোর্স ইকোনমিকস অ্যান্ড সায়েন্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার ধাক্কা সামলে ২০১৯-২০ মৌসুমে দেশটিতে সাকল্যে ৬১ হাজার হেক্টর তুলা আবাদ হতে পারে, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ৮২ শতাংশ কম। সেচের পানি ও মাটির আর্দ্রতাসংক্রান্ত সমস্যা রয়ে গেলে পণ্যটির আবাদ ৫০ হাজার হেক্টরের নিচে নেমে আসতে পারে। ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে দেশটিতে এ পরিমাণ জমিতে তুলা আবাদ হয়েছিল।

প্রতিকূল আবহাওয়া ও আবাদ কমার জের ধরে মন্দার মুখে পড়েছে অস্ট্রেলিয়ার তুলা উৎপাদন খাত। বিদায়ী বছরে দেশটিতে সাকল্যে ১২ লাখ বেল (প্রতি বেলে ৪৮০ পাউন্ড) তুলা উৎপাদন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইউএসডিএ, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ কম। ২০১৮ সালে দেশটিতে ২২ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হয়েছিল। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়ায় তুলা উৎপাদন কমেছে ১০ লাখ বেল।

একদিকে আবাদ কমে আসা, অন্যদিকে উৎপাদনে রেকর্ড পতন—এ দুইয়ের জের ধরে অস্ট্রেলিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার রফতানিও কমতে শুরু করেছে। ইউএসডিএর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ তুলা রফতানিকারক দেশ। ২০১৮ সালে দেশটি থেকে পণ্যটির রফতানি আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ কমে ৩৬ লাখ ৩২ হাজার বেলে নেমে এসেছিল।

প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে গত বছর দেশটির রফতানিকারকরা সাকল্যে ১৭ লাখ বেল তুলা রফতানি করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ কম। অর্থাৎ গত বছর অস্ট্রেলিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলা রফতানি অর্ধেকের বেশি কমেছে। এর আগে ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৬১ লাখ ৬৮ হাজার বেল তুলা রফতানি হয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ান কটন শিপার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দিনগুলোয় তুলা রফতানি খাতের সামনে প্রতিকূল আবহাওয়া, তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত, সেচের পানির সংকট, জমির আর্দ্রতা কম থাকা, প্রভৃতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে যেতে পারে। তবে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো চীনসহ বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার।

এর জের ধরে এরই মধ্যে চীনের বাজারে অস্ট্রেলিয়া থেকে তুলা রফতানি স্থবির হয়ে পড়েছে। মার্চের শেষ নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে না এলে বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) অস্ট্রেলিয়ার তুলা রফতানি খাত বড় ধরনের পতনের সম্মুখীন হতে পারে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস