‘চেহারায় তো হিন্দু মনে হচ্ছে না’

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৩-০১ ১৪:৫৫:৩১


বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে সহিংসতায় উত্তাল হয়ে উঠে ভারতের রাজধানী শহর দিল্লি। সেখানে ব্যাপক সহিংসতায় অন্তত ৩৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন কয়েকশ’ মানুষ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, পোশাক দেখেই বোঝা যায়, কারা সহিংসতা করছে।

উত্তর-পূর্ব দিল্লির মৌজপুর এলাকায় গিয়ে সেই মন্তব্যের কথাই মনে পড়েছিল দিল্লির এক সাংবাদিক ফাতিমা খানের।
সম্প্রতি জাফরাবাদ-মৌজপুর এলাকায় সংবাদসংগ্রহের জন্য গিয়ে জনতার মুখোমুখি হন তিনি ও এক সহকর্মী। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এর সমর্থনে স্লোগান থেকে আচমকাই শুরু হয় ‘গোলি মারো শালে কো’ ধ্বনি।

ফাতিমা একটি ওয়েবসাইটে লিখেছেন, ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন তার সঙ্গী সাংবাদিককে ফাতিমার নাম জিজ্ঞাসা করেন। সঙ্গী সাংবাদিকটা চটপট একটি ‘হিন্দু’ নাম বলেন। লোকটির সন্দেহ কাটেনি। তাকে ফাতিমা বলতে শোনেন, ‘শাকাল সে হিন্দু নেহি দিখতি’, চেহারা দেখে তো হিন্দু মনে হচ্ছে না।

তবে সন্দেহ করলেও আর বেশি এগোয়নি লোকটি। তবে এর পর এক দিন উপদ্রুত এলাকায় ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দেওয়া জনতার একজন লাঠি নিয়ে ফাতিমা এবং আরেক সাংবাদিকের পিছু নেন।

মৌজপুরের পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে মোটামুটি একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল সাংবাদিক ইসমত আরারও। একটি ওয়েবসাইটে ইসমত লিখেছেন, ওখানে যাওয়ার আগে অনেকে তাকে সতর্ক করেছেন বারবার। মৌজপুর এলাকায় ঢুকে তাই তিনি আর মোবাইল ফোন বের করেননি। কেবল এলাকায় হেঁটেছেন।

এক ব্যক্তিকে দেখে ইসমত প্রশ্ন করেছেন, ‘‘ভাই, এখানে কী হচ্ছে?’’ জবাব আসে, ‘‘সব কিছু হচ্ছে। আপনি দেখে আসুন না…।”

ইসমত লিখেছেন, মৌজপুরে ঠিক কী কী দেখতে হয়েছে তাকে। তার কথায়, ‘‘এক জায়গায় দেখলাম ইটের টুকরো জড়ো করে রাখা।”

বন্ধু তারিক এসেছিলেন তাকে ওখানে ছাড়তে। দু’জনেই নিজেদের অন্য নাম ভেবে রেখেছিলেন। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে কী বলবেন, আগে থেকে ভেবে রেখেছিলেন তা-ও। কিছুটা হাঁটার পর একটা বড় জমায়েত দেখতে পান ইসমত। তার দাবি, সেখানে গেরুয়া পোশাকে একজন উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি গেরুয়া পোশাকধারীর পরিচয় জানতে চেয়েছিলেন।

তখন ইসমতকেই প্রশ্ন করা হয়, তিনি কে? ইসমত জানাচ্ছেন, কোনও মতে এড়িয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলেও কিছু লোক তার পিছু নেয়। সঙ্গী তারিকও ফোন করে জানান, কয়েকজন অনুসরণ করছে তাকে। মৌজপুরের অলিগলি ঘুরে একটি বাড়ির সামনে থামেন ইসমত। সেখানে কয়েকজন মহিলা বসেছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেন। অনুসরণকারীরা যখন তার উপরে চড়াও হতে যাচ্ছিল, তখন ওই মহিলারাই তাকে বাঁচান।

এরপরে বড় রাস্তা পর্যন্ত এগোতে গিয়ে তাকে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে বলে দাবি ইসমতের। মোট তিন ঘণ্টা মৌজপুরে ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অন্য এক সংবাদমাধ্যমের কর্মী তাকে গাড়িতে তুলে মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দেন। এখন ইসমত বলছেন, ‘‘অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছি।” সূত্র: আনন্দবাজার
সানবিডি/ঢাকা/এসএস