চীনা কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের ভিসা স্থগিত

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৩-০২ ১০:১৫:২৪


বাংলাদেশ-চীন জিটুজি প্রকল্প

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আতঙ্কে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন (জিটুজি) প্রকল্পে কর্মরত চীনা কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের ভিসা স্থগিত রেখেছে বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস। আর বাংলাদেশে পর্যটন বা ব্যবসার কাজে আসতে চাইছেন যেসব সাধারণ চীনা নাগরিক, তাদের ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিকদের বড় একটি অংশ বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত। আর অন্যরা বাংলাদেশে রয়েছেন ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বা বিবাহ সূত্রে। বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে চীনা প্রকৌশলী, ব্যবস্থাপক ও দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় আট হাজার। ব্যবসার কাজে বা বিবাহ সূত্রে বসবাসরত চীনা নাগরিকের সংখ্যা বাংলাদেশে দুই হাজারের কম। এ হিসাবে বাংলাদেশে চীনাদের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। মেগা প্রকল্পগুলোতে কর্মরত চীনা নাগরিকদের বড় অংশ বার্ষিক ছুটিতে নিজ দেশে রয়েছেন। জিটুজির ভিত্তিতে নেয়া মেগা প্রকল্পগুলোর এসব কর্মকর্তা ও শ্রমিককে এখনই বাংলাদেশে না আসার বিষয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

চীনে ভিসা প্রদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা চীনাদের ভিসা দিচ্ছি। আমাদের কার্যালয়ও খোলা রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি যেহেতু স্বাভাবিক নয়, তাই ভিসা আবেদনই কম। মেডিকেল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে আমরা ভিসা দিচ্ছি। তবে তা নিয়ন্ত্রিতভাবে দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে কেস বাই কেস কিছু ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। আর সরকারি প্রকল্পে চীনা নাগরিকদের ভিসা এক মাস বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভিসা ইস্যুও স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

গত এক মাসে ইস্যু করা ভিসার সংখ্যা সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, বর্তমানে বেইজিংয়ে মানুষ আসতে পারছে না। সে কারণে ভিসা আবেদন কমেছে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। তবে কী পরিমাণ ভিসা ইস্যু করা হয়েছে, তার তথ্য দিতে চাননি তিনি।

বাংলাদেশে বেশকিছু মেগা প্রকল্পে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে। এসব প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকদের অর্ধেকের বেশি নববর্ষের ছুটিতে নিজ দেশে গেছেন। বর্তমানে ভিসা ইস্যু বন্ধের ফলে প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। পদ্মা প্রকল্পে কর্মরত যেসব চীনা নাগরিক ছুটিতে নিজ দেশে গিয়েছিলেন, তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ফিরতে পারবেন না। আর ছুটিতে যাওয়া বেশকিছু চীনা নাগরিক এ প্রকল্পের প্রধান চালিকাশক্তি। ভিসা স্থগিতের ফলে প্রকল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। একই রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে। এ প্রকল্পের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ চীনা শ্রমিক ও কর্মকর্তা ছুটিতে গিয়েছেন। ফলে প্রকল্প এগিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা শহরের চারদিকে বৃত্তাকার রেল লাইন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। প্রকল্পটিতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের, যেখান থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে।

এছাড়া ভাষানচর দ্বীপে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প, এস আলমের তাপভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, ডিপিডিসির পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ ও সম্প্রসারণ, দাসেরকান্দি পয়োনিষ্কাশন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্প, সিঙ্গেল মুরিং ডাবল পাইপলাইন প্রকল্প, টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেক্টিভিটি আধুনিকায়ন প্রকল্প, বরিশালে ৩৫০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, কচা নদীর ওপর অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু প্রকল্প ও চীন-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের মতো প্রকল্পগুলোতে করোনাভাইরাসের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে শুধু চীনা শ্রমিক বা কর্মকর্তারা আসতে পারছেন না তা নয়, সেই সঙ্গে প্রকল্পগুলোতে ব্যবহার করার জন্য যে কাঁচামাল প্রয়োজন তার উৎপাদন ও সরবরাহও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এতে করে প্রকল্প ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কূটনীতিক বণিক বার্তাকে বলেন, চীনের ভিসা আবেদন শূন্যে নেমে এসেছে। ফলে এক অর্থে ভিসা দেয়া বন্ধ রয়েছে বলা যায়। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বেইজিং প্রায় রুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। দুই ঘণ্টার জন্য দোকান খুলছে শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহের জন্য। ফলে সাধারণ চীনারা এর মধ্যে কেউ ভিসা আবেদনের জন্য আসছে না। আর যারা ভিসা আবেদন করছে তাদের ভিসা আবেদনের সঙ্গে বিভিন্ন নথি চাওয়া হচ্ছে। আর দুই দেশে চলাচলকারী উড়োজাহাজগুলোকেও সঠিক ভিসা ও হেলথ সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো যাত্রীকে বহন না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, জিটুজি প্রকল্পগুলোতে নতুন করে চীনাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। আর যারা ছুটিতে গিয়েছিলেন, পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাদের সেখানেই থেকে যেতে বলা হয়েছে। ভিসা আবেদনের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রণপত্র দরকার হয়। বর্তমানে এ ধরনের কোনো আমন্ত্রণপত্র ইস্যু করা হচ্ছে না।

এরই মধ্যে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ঢাকায় চীনের নাগরিকদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা সাময়িকভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা। এছাড়া বাংলাদেশে যেসব চীনা নাগরিক থাকছেন মাস খানেক তাদের দেশে ছুটিতে যেতে বারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশে চলমান চীনের প্রকল্পগুলোতে নতুন করে কোনো চীনা নাগরিককে না আনতে বলা হয়েছে। ঢাকায় অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা বন্ধ থাকলেও চীনা নাগরিকদের নিয়মিত ভিসা খোলা রাখার কথা সরকার থেকে জানানো হয়েছে। আর এ ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে বেইজিং ও কুনমিং মিশনে। সে ক্ষেত্রে আবেদনের সঙ্গে অবশ্যই একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট দিতে হবে।

এ বিষয়ে বণিক বার্তার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে চীনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, যারা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে যেতে ইচ্ছুক এমন ভিসা আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে চীন সরকার থেকে ইস্যুকৃত হেলথ সার্টিফিকেট দেখা হয়। সেই সঙ্গে ভিসা আবেদনকারীকে আমন্ত্রণ জানানো বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানকে আবেদনকারীর কোয়ারান্টাইনের সব দায়িত্ব নিতে হবে—এমন নিশ্চয়তা ভিসার সঙ্গে চাওয়া হচ্ছে। আর জিটুজি প্রকল্পে মন্ত্রণালয় থেকে যারা আমন্ত্রণপত্র বা ছাড়পত্র আনতে পারবে, শুধু তাদেরই ভিসা ইস্যু করা হবে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস