বিশ্বের শীর্ষ দামি ব্র্যান্ড খুচরা বিক্রেতা আমাজন

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৩-০২ ১২:৩৯:০৩


কখনো পণ্যের গুণ-মান ও বিক্রির ধুমধামে কোম্পানির ব্যবসায় তরতর করে বেড়ে যায়, আবার কখনো কখনো কোম্পানির নামে পণ্য ব্যাপক হারে বিক্রি হয় বা বাজারে শক্তপোক্ত অবস্থান করে নেয়। আর এটাই হলো ব্র্যান্ড, যা পণ্য বা কোম্পানির সুনাম-সুখ্যাতি, জনপ্রিয়তা এসব দিগ্‌বিদিকে ছড়িয়ে দেয়। ফলে ওই পণ্য কিনতে বা কোম্পানির নামে মানুষ ভীষণ আগ্রহী হয়ে ওঠে। পণ্য বা কোম্পানির ব্র্যান্ড মূল্য দারুণভাবে বেড়ে যায়।

বাজারের গ্রহণযোগ্যতায় বিশ্বব্যাপী যেসব পণ্য বা কোম্পানির ব্র্যান্ড মূল্য এখন প্রায় আকাশছোঁয়া, তাদের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে অনলাইনভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান আমাজন, যার ব্র্যান্ড মূল্য ২২ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। ‘বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ব্র্যান্ড ২০২০’ শীর্ষক এই তালিকায় ১৬ হাজার কোটি ডলার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে প্রযুক্তি খাতের সার্চ ইঞ্জিন গুগল। এতে ১৪ হাজার ১০০ কোটি ডলারের ব্র্যান্ড মূল্য নিয়ে অ্যাপল তৃতীয় ও ১১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার নিয়ে মাইক্রোসফট চতুর্থ ও ৯ হাজার ৪০০ কোটি ডলার নিয়ে স্যামসাং গ্রুপ পঞ্চম অবস্থানে আছে। তিনটিই প্রযুক্তি খাতের কোম্পানি। তালিকার সেরা দশে থাকা বাকি পাঁচ ব্র্যান্ড হলো যথাক্রমে আইসিবিসি (ব্যাংক) ৮ হাজার ১০০ কোটি, ফেসবুক (প্রযুক্তি) ৮ হাজার কোটি, ওয়ালমার্ট (খুচরা বিক্রেতা) ৭ হাজার ৮০০, পিং (বিমা) ৬ হাজার ৯০০ কোটি ও হুয়াওয়ে (প্রযুক্তি) ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।

এতে দেখা যায় শীর্ষ দশের মধ্যে ছয়টিই প্রযুক্তি খাতের কোম্পানি। দুটি খুচরা বিক্রেতা, একটি ব্যাংক ও একটি বিমা প্রতিষ্ঠান।

সেরা ব্র্যান্ডের এই তালিকা তৈরি করেছে হাউমাচ ডটকম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি এটি প্রকাশ করা হয়। হাউমাচ বলছে, কোনো কোম্পানি বা পণ্যের ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে উঠতে, সুখ্যাতি পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে। তবে ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তি খোয়াতে কিন্তু বেশি সময় লাগে না, একমুহূর্তেই ধুলায় মিশে যেতে পারে সুনাম-সুখ্যাতি সব।

হাউমাচের মতে, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ব্র্যান্ড হচ্ছে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো, যারা বছরে শত শত কোটি মার্কিন ডলারের মুনাফা অর্জন করে থাকে। জনমতের ওপর এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক প্রভাব। তাদের রয়েছে বিশ্বজনীন স্বীকৃতি।

তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ১০০টি ব্র্যান্ডের মধ্যে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার সেরা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোরই জয়জয়কার। শীর্ষ ১০০ কোম্পানির এই তালিকায় ব্র্যান্ড হিসেবে চারটির মূল্য ১০০ কোটি ডলারের বেশি। এর মধ্যে তিনটিই প্রযুক্তি খাতের (গুগল, অ্যাপল ও মাইক্রোসফট), অন্যটি অনলাইনভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান আমাজন, যা ব্র্যান্ড মূল্য ২২১ বিলিয়ন বা ২২ হাজার ১০০ কোটি ডলার।

হাউমাচ বলছে, গত বছরে বেশির ভাগ কোম্পানি মুনাফা অর্জন করেছে। তবে ম্যাকডোনাল্ডসের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান লোকসান দিয়েছে। চলতি ২০২০ সালে এসে ম্যাকডোনাল্ডসের ব্র্যান্ড মূল্য কমে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে নেমেছে, যা গত বছর ছিল ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এক বছরে কোম্পানিটির ব্র্যান্ড মূল্য কমেছে ৭০০ কোটি ডলার।

শীর্ষ ব্র্যান্ডের তালিকায় প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলোর পেছনে রয়েছে মিডিয়া, উৎপাদন ও ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ক্ষেত্রে মিডিয়া কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত ব্র্যান্ড মূল্য হচ্ছে ৩২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। উৎপাদন খাতের কোম্পানিগুলোর সার্বিক ব্র্যান্ড মূল্য ৩৭ হাজার কোটি ডলার। আর ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত ব্র্যান্ড মূল্য ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।

ব্র্যান্ড ফিন্যান্স থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ডের এই তালিকা তৈরি করেছে হাউমাচ ডটকম। এ ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের শক্তি, বিপণন কার্যক্রমে বিনিয়োগ, কোম্পানিতে স্টেকহোল্ডার বা অংশীজনদের শেয়ারের পরিমাণ ও আর্থিক পারফরম্যান্স বা কার্যক্রমে তাঁদের অবদান ইত্যাদি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। মনে রাখতে হবে, তালিকাটি কোম্পানিগুলোর সম্পদ মূল্য নয়, ব্র্যান্ড মূল্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।

সেরা ১০০ কোম্পানির তালিকায় প্রত্যাশিতভাবে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশীয় কোম্পানিগুলোরই প্রাধান্য। এর বাইরে একটিমাত্র কোম্পানি স্থান পেয়েছে, সেটি হলো মধ্যপ্রাচ্যের আরামকো। সৌদি আরবের এই তেল কোম্পানির ব্র্যান্ড মূল্য ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। তবে এই কোম্পানির বর্তমান মার্কেট ভ্যালু বা বাজারমূল্য ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার (১ ট্রিলিয়নে ১ লাখ কোটি)।

হাউমাচ বলছে, ব্র্যান্ড মূল্যবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো, একটি কোম্পানির বিজনেস মডেল, যা সরাসরি গ্রাহক বা ভোক্তাদের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে নানাভাবে মূল্য বাড়িয়ে দেয় বা প্রভাব ফেলে। বদৌলতে ব্র্যান্ড হিসেবে একটি কোম্পানির নিজস্ব ভাবমূর্তি বেশ বৃদ্ধি পায়।