নতুন কিছু করুন যাতে চাঁদপুরকে মানুষ মডেল মানে :ডিসি চাঁদপুর
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৩-০২ ২১:৪৮:০৬
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মাজেদুর রহমান খান বলেছেন, আমার চাকুরী জীবনের প্রথমে জীবন বীমা কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে এ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছি। তখন চাকুরীর বাজারে আমরা ভালো লেভেলের চাকুরী খুঁজিছি। আমি একসাথে কয়েকটি চাকুরী পেয়েছি। আজকে আপনাদের বক্তব্য শুনে আমার কাছে ভালো লেগেছে। আমি বলতে চাই, আপনারা এমন কিছু করেন, এমন কিছু দেখান, যাতে করে সচেতন যারা আছে, তারা তাদের সকল কিছুর সাথে একটিকে কমন রাখবে, অর্থাৎ আমার বীমা আছে। সেই কাজটি কিন্তু এখনো হয়নি। আপনাদের বক্তব্য থেকেই আমি জানতে পেরেছি।
রোববার সকাল ১০টায় চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে এই প্রথম জাতীয় বীমা দিবস উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আজকে আপনি একজন মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন ব্যাংক একাউন্ট আছে কার কার। যার পকেটে টাকা আছে, তারই ব্যাংক একাউন্ট আছে। টাকার পরিমাণ যখনে বেশি হয়ে যায়, তখন সে মনে করে টাকা পকেটে রাখা নিরাপদ নয়, তখনেই ব্যাংকে রাখে। যখন বাজারে বিকাশ আসলো, তখন কত % দখল করেছে কল্পনা করা যাবে না। ভালর সাথে সাথে মন্দও দখল করেছে। অনেক সন্ত্রাসি বিকাশকে তার অবলম্ব হিসেবে ব্যবহার করছে। কোটি কোটি টাকা বিকাশে চলেগেছে। কারণ এত সহজ ব্যাংকি দেশে চলে আসছে বাংলাদেশের মানুষের কাছে। বাংলাদেশের মানুষের হাতে এখন প্রচুর টাকা, প্রচুর সম্পদ জড়ো হয়েছে। মানুষের যখন টাকা বেড়ে যায়, তখন ব্যাংকে রাখে। যখন সে বুঝে ব্যাংকে টাকা অলস পড়ে আছে, তখন সে অন্য উপকরণ খুঁজে।
জেলা প্রশাসক উদাহরণ স্বরূপ বলেন, যে কোন একটি পরিবারের দিকে লক্ষ্য করুন একটি পরিবার এক সময় ঢেকিতে চাল মাড়াই করে ভাত খেতো। সে এখন প্যাকেটের চাল কিনে। যে আগে গম কিনে ভাঙিয়ে বাড়িতে আটা রেখে রুটি বানিয়ে খেতো, সে এখন প্যাকেট ময়দা কিনে খায়। এই চাঁদপুর শহরে আপনি এখন কোথাও গম খুঁজে পাবেন না। কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। তাদের হাতে প্রচুর পরিমাণে অর্থ থাকার কারণে স্বাস্থ্য সম্মত খাবার কষ্ট করে খেতে চায় না। লাল চাল এখন আর বাজারে পাওয়া যায় না। এখন সব বিদেশি পন্য দেশে চলে আসছে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সকল ক্ষেত্রে আধুনিকতা চলে আসছে। পন্যের দোকানগুলোতে গেলেই দেখা যায় অবস্থা। আমাদের দেশের তৈরী পন্য গুলো তেমন চোখে পড়ে না। যার কারণে আমাদের দেশের টাকা গুলো বিদেশে চলে যাচ্ছে। চায়নাই আমাদের দেশের বাজার দখল করে আছে। তবে এখন ভাইরাসের কারণে আমদানি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশ থেকে রপ্তানি তেমন একটা নেই।
জেলা প্রশাসক বলেন, মানুষের প্রচুর অর্থগুলো কেন হুন্ডি হয়ে ইউরোপ আমেরিকায় চলে যাচ্ছে। কেন আপনাদের কাছে আসছে না। এটিই হচ্ছে আমার প্রশ্ন। এই প্রশ্ন আমার অনেক দিনের। আমি এইসব কথাগুলো জীবন বীমা কর্পোরেশনের চোরম্যানকেও বলেছি। আপনাদের নতুন আইডিয়া কোথায়, আপনাদের বিকাশ কোথায়। একজন ভিক্ষুকেরও অনেক আয়। সে প্রতিদিন ২০টাকা করে সঞ্চয় করতে চায়। আমি যশোরে ভিক্ষুকদের নিয়ে কাজ করেছি। একজন ভিক্ষুককে যখন ৬শ’ টাকা দিয়ে বাদাম কিনে দিলাম, তারপর থেকে সে প্রতিদিন ১হাজার টাকা আয় করে। রাস্তার টোকাই, সে বলছে স্যার আমি যদি ১০ বছরও বাঁচি, তাহলেও আমি হাজার হাজার টাকা সঞ্চয় করতে পারি। আমার টাকা কোথায় রাখবো। বাবাত সব টাকা নিয়ে যায়। আমিত প্রতিদিন ১০-৩০টাকা সঞ্চয় করতে চাই। আমি তাকে একটি ব্যাংক দেখিয়ে দিলাম। সেত ৩ তলা ভবনে গিয়ে সঞ্চয় করারমত সময় নেই। সে তার খুবই নিকটে সঞ্চয় করতে চায়।
মাজেদুর রহমান খান বলেন, আমি জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রস্তাব করেছি যে এমন একটি ব্যবস্থা চালু করেন, যা খুব সহজেই সঞ্চয় করা যায় এবং টাকাটা নিরাপদ থাকে। সেটি হতে পারে প্রাইজবন্ড বা তার মতো অন্য কিছু। কেউ রাজী হলো না। আমি বলবো আপনারা চালু করেন। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি এটি খুবই চলবে। মানুষের হাতে প্রচুর টাকা আছে, টাকা রাখার জায়গা পাচ্ছে না। এখানে আজকে অনেক শিক্ষার্থী এসেছে কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করতে। কারণ তাদের মেধা আছে, মেধা দিয়ে পুরস্কার নিয়ে যাবে। কিন্তু আপনি বীমা কর্মী হওয়ার জন্য আহবান করেছেন, কেউ আসে না। আপনার ডাকেও সাড়া দিবে, তবে আপনি পথ দেখাতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, গত ১দিন আগে একজন বাবা এসেছেন তিনি মাদ্রাসায় চাকুরী করেন সামান্য বেতনে। তিনি তার মেয়েকে মাগুড়া মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন ১০-২০হাজার টাকা লাগবে। তাকে যদি আপনি এমন কোন পলিসি দিতে পারেন, যে সে মেডিকেল পাস করবে এবং চাকুরী পাবে তারপর সে আমার টাকা ফেরৎ দিবে। মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে এটিই তার গ্যারান্টি। তাকে আপনি প্রতি মাসে মাসে টাকা দিবেন। আপনি ওই বাবার সাথে ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি করবেন। এই ধরণের কাজে কিন্তু আপনারা যান না।
তিনি বলেন, চাঁদপুর জেলার বহু মাদ্রাসা ও স্কুলের ছাত্র পাস করে আইন বিষয়, মেডিকেল এবং অন্যান্য বিষয়ে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু তাদের পড়ার জন্য টাকা নেই। তাদের জন্য আপনারা কোন নতুন পদ্ধতি চালু করুন। এসব কথায় আমার উদ্দেশ্যে হচ্ছে একটাই। এই সোনার বাংলা বিণির্মানে সবার ভাগ ও অংশ গ্রহন প্রয়োজন। এই অংশগ্রহনের জন্য বিজ্ঞাপন বক্তৃতা নয়, দরকার হচ্ছে সত্যিকারের মননশীল মানুষ। দেশপ্রেম নিয়ে আপনাকে এগিয়ে আসতে হবে।
আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, এমন কিছু নিয়ে আসুন, যাতে মানুষ বীমাকে প্রথম হিসেবে গ্রহণ করবে। সরকার আইন করে দিয়েছে। কিন্তু সব সময় আইন প্রয়োজন হয় না। আপনারা মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা খুঁজেন। দেখবেন আপনাদের নিকট কোটি কোটি মানুষ আসবে। আসুন কোন নেগিটিভে নয়, প্রজেটিভে থাকি। নতুন কিছু তৈরী করুন যাতে চাঁদপুরকে মানুষ মডেল হিসেবে নেয়।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম জাকারিয়ার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মেঘনা লাইফের ইনচার্জ কবির হোসেন বকাউল, ডেলটা লাইফের ইনচার্জ কে এম লোকমান হোসেন, ন্যাশনাল লাইফের ইনচার্জ মো. মোকাররম মজুমদার, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ইনচার্জ মো. আজাদ হোসেন, জীবন বীমা কর্পোরেশনের ম্যানেজার জামিলুর রহমান, পপুলার লাইফ এর জেলা সমন্বয়কারী মো. দেলোয়ার হোসেন উজ্জল, মেট লাইফ আলিকোর ব্রাঞ্চ ম্যানেজার রো. মো. মাকসুদুর রহমান প্রমূখ।
আলোচনা সভার শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করেন পপুলার ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তা মাওলানা মো. সফিকুর রহমান, গীতা পাঠ করেন ডেল্টা লাইফের কর্মকর্তা বাসু দেব রায়।
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা রচনা প্রতিযোতিায় অংশগ্রহনকারী বিজয়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের হাতে প্রধান অতিথি পুরস্কার তুলে দেন।
আলোচনা সভা পূর্বে শহরের হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম জাকারিয়া ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহেদ পারভেজ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে আউটার স্টেডিয়ামে এসে শেষ হয়।
সুত্র- ফোকাস বাংলা