হাওরে পানি সংকটে উদ্বিগ্ন বোরো চাষিরা
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৩-০৩ ১৮:০৬:১৮
মেীলভীবাজার জেলার নাব্যহ্রাসের কবলে পড়ে ঐতিহ্যবাহী নদী ও হাওর এখন দুর্দশায়।এ জেলায় নাব্যহ্রাসের কারণে বর্ষা মৌসুমে নদী ও হাওরগুলো তীরবর্তী বাসিন্দারা যেমন বন্যা ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকটে ব্যাহত হচ্ছে তাদের চাষাবাদ। দীর্ঘদিন থেকে সংস্কারহীনতায় নদী ও হাওরের তলদেশ ভরাট হওয়ায় এই অযাচিত চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্যজীবী মানুষ। এমন অযত্ন অবহেলায় নদী ও হাওরের জলজ জীববৈচিত্র্য যেমন ধ্বংসের দোরগোড়ায়। তেমনি ব্যাহত হচ্ছে হাওর পাড়ের মানুষের একমাত্র জীবন জীবিকার মাধ্যম বোরো চাষ। সম্প্রতি দেশের সবচেয়ে বড় হাওর জেলার হাকালুকি, কাউয়াদিঘি ও হাইল হাওর ও মনু, ধলাই, ফানাই ও জুড়ী নদীর তীরবর্তী এলাকার বোরো চাষিদের সাথে আলাপে এসময়ে বোরো চাষে পানি সংকটের সমস্যার বিষয়টি জোর দিয়ে জানালেন তারা। কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী হাওর ও নদী তীরের এই বাসিন্দারা জানালেন নদী ও হাওরের বিলগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে তারা চরম পানি সংকটে চাষাবাদ নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। গেল কয়েক বছর থেকে এসময়ে চরম পানি সংকটের দুর্দিন তাদের পিছু ছাড়ছে না।
পানির নির্ভরযোগ্য উৎস ও ভরসাস্থল গুলোতে সময়মত পানি না থাকায় তাদের এই বিড়ম্বনা। কৃষকরা জানান, প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যেও নানা রোগবালাই প্রতিহত করে বোরো ধানের চাষাবাদ করেছেন। এবছর চাষাবাদ ভালো হলেও এখন পানিহীনতায় তাদের সোনালী স্বপ্ন ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কায় উদ্বিগ্ন। চাষিরা জানান অনেক জায়গায় এখনো শেষ হয়নি রোপন কাজ। পানির অভাবে ধীরে ধীরে বোরো রোপণ করা জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। এসময় রোপণ করা ধানের চারাগুলোতে পানি থাকার কথা থাকলেও পানি না থাকায় চাষকৃত ধানি জমিতে তা দেওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া পানি না থাকায় এবছর অনেক জমিও চাষ দেওয়া সম্ভব না হওয়া অনাবাদি রাখতে হয়েছে। যেসব জমিতে ধানের চারা রোপণ করা শেষ হয়েছে পানির অভাবে সেগুলোর তলা শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। চারাগুলোর গোড়াতে প্রয়োজনীয় পানি না থাকায় পরিচর্যাও করা যাচ্ছে না। এতে করে ঘাস ও অন্যান্য আগাছায় ভরে যাচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি হাওরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা অংশের বোরো চাষিরা জানান এই সময়ে রোপনকৃত চারার গোড়ায় পর্যাপ্ত পানি রাখতে হয় ও পরিচর্যা করতে হয়। কিন্তু পানি ধরের রাখার উৎস হাওরের বিলগুলোতে এখন পর্যাপ্ত পানি না থাকায় সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর পানিহীনতায় বোরোর রোপণকৃত চারা ধানগাছগুলি নষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে লাগানো চারার গোড়া ফেটে চৌচির হওয়ার পথে। ধান গাছগুলো লাল হয়ে সবুজ থেকে এখন বীভৎস রং ধারণ করছে। একই অবস্থা কাউয়াদিঘি হাওরেরও। ওই হাওরের মনু নদ সেচ প্রকল্পের মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় শাখা সেচ খাল সংস্কার না হওয়ার কারণে পানির চরম সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। শাখাখালগুলো দীর্ঘ সংস্কারহীনতায় ঘাসে ভরে গেছে। একারণে খালের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পানি পৌঁছাতে পারছে না। কোথাও আবার ইঁদুরের গর্ত দিয়ে পানি বেরিয়ে যাওয়ায় পানিপ্রবাহও চরম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কোথাও বাঁধ ক্ষয়ে নিচু হয়ে যাওয়ায় পানি উপচে অন্যত্র বের হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান মনু প্রকল্পে সেচ সুবিধা থাকার পরও দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার হীনতায় এই প্রকল্পের উপকাভোগী কৃষকরা পুরোপুরি সুফল পাচ্ছেন না। তারা বলছেন, শাখা খালগুলো সংস্কারের পাশাপাশি নতুন করে কিছু পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করলে এই অঞ্চলের কৃষকরা শতভাগ উপকৃত হত। হাইল হাওরের বোরো চাষীরা জানান বিলের তীরবর্তী অনেক এলাকায়ই চরম পানি সংকট থাকায় বোরো ধান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা করছেন তারা। কিছু দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে এ সংকট চরমে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন চাষিরা। এদিকে পানি সংকটে জেলার মনু, ধলাই, ফানাই ও জুড়ী নদীর তীরবর্তী বোরো চাষীরাও পানি সংকটে পড়েছেন। চোখের সামনে পানি সংকটে পড়ে তাদের বোরো ধানের রোপণকৃত চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর জেলা বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর। এপর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ৫১৭ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এখন পর্যন্ত ১৭ হেক্টর আবাদ বেশি হয়েছে। আরো আবাদের সম্ভাবনাও রয়েছে। এ বিষয়ে পাউবো মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রন্দ্রেণ শংকর চক্রবর্তী নদী ও হাওরের নব্যহ্রাসের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করায় এমনটি হচ্ছে। নদী ও হাওরের তলদেশ ভরাট হওয়াতে পানির ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তাই শুষ্ক মৌসুমে পানিহীনতায় খরা। আর বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও জলাবদ্ধা দেখা দেয়। এ দুর্ভোগ থেকে লাগবে ভরাট হয়ে যাওয়া নদী খনন ও মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মনু প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু কিছু জায়গায় এ সমস্যা হচ্ছে। বাঁধের কিছু নিচু জায়গা ঠিক করে দিয়েছি। আমাদের সাধ্যনুযায়ী পানি সমস্যা লাগবে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী জানান, জেলার বিভিন্ন নদী ও খাল খনন করাতে পানির উৎস বেড়েছে। তাই এবছর লক্ষ্যমাত্রার চাইতেও বেশি জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে। তবে এটা সত্য জেলার ভরাট হয়ে যাওয়া অন্যান্য নদী ও হাওর গুলো খনন হলে চাষিরা উপকৃত হত। খরা ও বন্যা সমস্যা তাদের ফসল হানি হতো কম। আর শুষ্ক মৌসুমে অনেক জায়গায় পানি সংকট সমস্যা কিছুটা থাকবেই। তবে এক্ষেত্রে চাষিরা কৌশলী হয়ে চাষাবাদ করার পরামর্শ তার। সুত্র-মানবজমিন
সানবিডি/এনজে