অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে ৬ পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৩-০৪ ১২:০৪:১৭
দেশে ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে রূপকল্প ২০২১-এর লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল ও অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে সরকার সচেষ্ট। কিন্তু চীনের করোনা ভাইরাস পৃথিবীর অর্থনৈতিক গতিকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। করোনার আঁচ বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে শুরু করেছে। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আহরণেও। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩৮ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে পড়েছে।
সূত্র জানায়, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখতে ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ৬ দফা সুপারিশ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিজ নিজ বিভাগের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাণিজ্যিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষতি লাঘবে করণীয় (সুপারিশ) তৈরির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির ধারা অক্ষুণ্ন রাখার বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সচেষ্ট থাকতে বলা হয়।
অন্যদিকে বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে আশু করণীয় নির্ধারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে সুপারিশ করতে বলা হয়। আপৎকালীন অবস্থায় কোনো খাতে অর্থের সরবরাহ বাড়ানোর প্রয়োজেন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেবে। রাজস্ব আহরণে পিছিয়ে রয়েছে এনবিআর। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআরকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মার্চ ও এপ্রিলে আমদানি করা পণ্য বন্দর থেকে একই সঙ্গে বা দ্রুততার সঙ্গে খালাস করতে এনবিআরকে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া করোনার প্রভাব কাটাতে নীতি সহায়তা দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন যেন সঠিক সময়ে হয়, এ জন্য ইআরডি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্য সব বিকল্প নিয়েও কাজ করতে বলা হয়েছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে অর্থ বিভাগ সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করবে বলে বৈঠকে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে এ সংক্রান্ত সভা আহ্বানেও সুপারিশ করবে।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আলোচ্য সময়ে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। এর বিপরীতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুসারে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ৩৭ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। অবশ্য আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মিজ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমদানি কমে যাওয়ায় কাস্টমসে রাজস্ব আদায় কমছে। এ ছাড়া রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত ভ্যাট বাস্তবায়নের জটিলতা ও সঠিক সময়ে ইএফডি সরবরাহ না করতে পারায় ভ্যাট আদায়ে ঘাটতি বাড়ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ডকুমেন্টের সংখ্যা কমিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে বন্দরে ১৪টি ডকুমেন্ট দাখিল করতে হয়। এ সংখ্যা কমিয়ে সাতটি করার কাজ শুরু হয়েছে। এনবিআর সূত্র জানায়, ডকুমেন্টের সংখ্যা কমিয়ে আনার কাজ সংস্থাটিও শুরু করেছে। বিশেষ করে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ইনভয়েস, প্যাকিং লিস্ট ও কান্ট্রি অব অরজিনের মতো তিনটি বিষয়ের প্রয়োজন হয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এসআরও পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আজ বুধবার করোনা ভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করতে বৈঠক হবে। বৈঠকে সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন। সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের ৫ খাতে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের পর্যালোচনায় এ ক্ষতির হিসাব প্রাক্কলন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের এ হিসাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস