নোভেল করোনাভাইরাস

সনদ না থাকায় বিপাকে বাংলাদেশে থাকা কুয়েতপ্রবাসীরা

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৩-০৫ ১৯:২১:২৮


প্রায় ২৭ বছর ধরে কুয়েত আছেন মধ্যবয়সী হাসিনা বেগম।তিন মাসের ছুটিতে দেশে বেড়াতে এসেছেন।আগামী ২৬ মার্চ ফিরতি ফ্লাইটে কুয়েত ফিরে যাওয়ার কথা তার।

বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রবেশদ্বারের সামনে ঘোরাঘুরি করছিলেন। তার মতো আরও অনেক কুয়েতপ্রবাসী এখানে সমবেত হয়েছেন। হাসিনা বেগম যাকেই কাছে পাচ্ছিলেন তার কাছেই মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদানের ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক খবর আছে কি-না, তা জানতে চাইছিলেন। চোখেমুখে ছিল চিন্তার ছাপ।

হাসিনা বেগম বলেন, কুয়েত দূতাবাস থেকে তাকে এ প্রতিষ্ঠানে রক্ত পরীক্ষা করে করোনামুক্ত মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহের জন্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখানকার কর্মকর্তারা কেউ দেখা করছেন না। তারা নিরাপত্তারক্ষীর মাধ্যমে জানিয়েছেন, তারা মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নন।

কথাবার্তার একপর্যায়ে হাসিনা বেগম কুয়েতে ফিরে যেতে পারবেন কি-না, তা জানতে চেয়ে বলেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে স্বামী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে বিদেশে থাকি। কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠাই। এখন আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য কি কেউ নেই?

এ প্রশ্ন শুধু হাসিনা বেগমের একার নন, আজ সকাল থেকে আইইডিসিআরের সামনে সমবেত হওয়া শতাধিক কুয়েকপ্রবাসীর। তাদের মধ্যে যাদের আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কুয়েত ফেরার কথা রয়েছে, তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।

ছুটি কাটাতে আসা এসব প্রবাসীর কারও কারও আকামাও (কাজের অনুমতিপত্র) শেষ হতে চলেছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে তাদের কপাল পুড়েছে। কুয়েত দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, কুয়েতপ্রবাসী বাংলাদেশিদের আইইডিসিআর থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে করোনামুক্ত সার্টিফিকেট নিয়ে তবেই কুয়েতে ফিরতে হবে।

কুয়েতপ্রবাসী মো. হারিস কুয়েত দূতাবাস থেকে দেয়া একটি কাগজ দেখিয়ে বলেন, ‘আগামী শনিবার আমার ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এখান থেকে বলা হচ্ছে, এ প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট দেয়া হবে না।’

আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশে কোনো করোনাভাইরাস রোগী পাওয়া যায়নি। কুয়েতপ্রবাসী যারা বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন, তারা কোনো রোগীর সংস্পর্শে আসেননি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত উপসর্গ বা লক্ষণও নেই, তাই তাদের পরীক্ষা করা কিংবা তাদের মেডিকেল সার্টিফিকেট গ্রহণ প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন না।

তিনি জানান, বুধবার দুপুরের পর থেকে কুয়েতপ্রবাসীরা মেডিকেল সার্টিফিকেট গ্রহণের জন্য আইইডিসিআরে আসতে শুরু করে। কিন্তু কুয়েত দূতাবাস থেকে কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা এ ধরনের পরীক্ষা করতে হবে বলে জানাননি।

ডা. ফ্লোরা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত তাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি বলে তিনি জানান।

প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বাংলাদেশসহ ১০ দেশের নাগরিকদের কুয়েত প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে দেশটির সরকার। এই ১০ দেশের নাগরিকরা কুয়েত দূতাবাসের দেয়া সনদ দেখাতে পারলে কেবল তাদের সে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। সেই সনদে লেখা থাকবে ‘ওই যাত্রী করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত’।

মঙ্গলবার (৩ মার্চ) কুয়েতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। ৮ মার্চ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রভাবশালী দৈনিক গালফ নিউজ।

বুধবার (৪ মার্চ) কুয়েতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে, এ স্বাস্থ্য সনদ অবশ্যই কুয়েত দূতাবাস থেকে অনুমোদিত হতে হবে। উল্লেখিত দেশের মধ্যে যেসব দেশে কুয়েতের দূতাবাস নেই, সেসব দেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যায়িত সনদ থাকতে হবে। অন্যথায় নাগরিককে ফেরত পাঠানো হবে।

কুয়েতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, নির্দেশ অমান্য করা কোনো নাগরিককে ফেরত পাঠাতে অর্থ গুনবে না কুয়েত সরকার। নিজ খরচে তাকে ফিরে যেতে হবে। পাশাপাশি নির্দেশ অমান্য করার কারণে বহনকারী বিমান সংস্থাকে জরিমানা করা হবে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানের পর কুয়েতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে। সুত্র-জাগো নিউজ

সানবিডি/এনজে