১ হাজার ৭০০ ডলারের পথে স্বর্ণের আউন্স

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৩-০৮ ১৪:২৩:০১


স্বর্ণের ঊর্ধ্বমুখী বাজারের লাগাম টানা যেন কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিনই একটু একটু করে মূল্যবান ধাতুটির দাম বাড়ছে। এ ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৭০০ ডলারের কাছাকাছি উঠেছে। একই সঙ্গে স্বর্ণের সাপ্তাহিক মূল্যবৃদ্ধি এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। এর পেছনে বিশ্ব্বজুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা বাড়িয়ে দাম ঊর্ধ্বমুখী করেছে। মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানা সম্ভব না হলে আগামীতে মূল্যবান ধাতুটির দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৭০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর সিএনবিসি, মার্কেটওয়াচ ও মাইনিংডটকম।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বশেষ কার্যদিবসে স্বর্ণের স্পটমূল্য আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬৭৮ ডলার ১৫ সেন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। দিনের শুরুতে মূল্যবান ধাতুটির স্পটমূল্য দাঁড়িয়েছিল আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬৮৯ ডলার ৬৫ সেন্ট। ২০১৩ সালের জানুয়ারির পর এটাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্বর্ণের সর্বোচ্চ স্পটমূল্য।

সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটিতে স্বর্ণের স্পটমূল্য আগের সপ্তাহের তুলনায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারির পর এটাই মূল্যবান ধাতুটির সর্বোচ্চ সাপ্তাহিক মূল্যবৃদ্ধি। এদিকে সর্বশেষ কার্যদিবসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি আউন্স স্বর্ণ ১ হাজার ৬৭৯ ডলার ৫০ সেন্টে বিক্রি হয়েছে, যা আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।

আপত্কালীন বিনিয়োগে স্বর্ণ বরাবরই বিনিয়োগকারীদের শীর্ষ পছন্দ। স্বর্ণের বাজারে সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে নভেল করোনাভাইরাস সবচেয়ে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। এরই মধ্যে চীনের গণ্ডি পেরিয়ে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ইতালিসহ বিশ্বের ৮৫টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসটির প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়ার আশঙ্কা ক্রমে বাড়ছে। এ পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণের বাজারের প্রতি আকৃষ্ট করছে। ফলে সেফ হ্যাভেনখ্যাত মূল্যবান ধাতুটির চাহিদা বাড়ছেই। চাহিদার সঙ্গে বাড়ছে বেচাকেনা। আর বাড়তি চাহিদা ও বেচাকেনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দামও।

এ বিষয়ে কোয়ান্টেটিটিভ কমোডিটি রিসার্চের বিশ্লেষক পিটার ফেয়ারটিগ বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শ্লথতা সেফ হেভেন হিসেবে স্বর্ণকে সামনে এনেছে। বিনিয়োগকারীরা সম্ভাব্য লোকসানের আশঙ্কা থেকে শেয়ারবাজার, মুদ্রাবাজার থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। ফলে স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে দাম বাড়ছে।

স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেডের সুদহার অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর কারণে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষত এড়াতে গত সপ্তাহে জরুরিভিত্তিতে বিদ্যমান সুদহার কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে ফেড। এক দফায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ফেডের নতুন সুদহার ধার্য করা হয়েছে ১ থেকে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। ফেডের এ ঘোষণার পর পরই চাঙ্গা হতে শুরু করে স্বর্ণের বাজার। সব মিলিয়ে মূল্যবান ধাতুটির সাপ্তাহিক মূল্যবৃদ্ধি রেকর্ড ছুঁয়েছে।

এ বিষয়ে লন্ডনভিত্তিক ফরেন এক্সচেঞ্জ কোম্পানি সিএসসি মার্কেটের প্রধান বাজার কৌশলবিদ মাইকেল ম্যাকারথি বলেন, সাধারণত মুদ্রানীতি শিথিল হলে, মুদ্রার মান কমে এলে এবং ব্যাংকের সুদহার কমলে স্বর্ণের বাজার সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েক দফায় বিদ্যমান সুদহার কমিয়ে বাজার ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা চালিয়েছে। এর ওপর নতুন বছরের শুরুতেই নভেল করোনাভাইরাসের আঘাত স্বল্প সুদহারের পরিবেশকে আরো দীর্ঘায়িত করেছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ও মুদ্রাবাজারে অর্থলগ্নিতে ভরসা পান না। অবস্থান বদলে তারা ঝোঁকেন স্বর্ণের বাজারে। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি।

বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার আরো বাড়লে স্বর্ণের দাম দীর্ঘমেয়াদে চাঙ্গা থাকতে পারে বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফরেন এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ওএএনডিএ করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক জেফরি হ্যালি। তিনি বলেন, স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধিতে দ্রুত লাগাম টানা সম্ভব না হলে আগামীতে মূল্যবান ধাতুটির দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৭০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস