৩০ কোটি টাকায় লাউয়াছড়া বন উন্নয়ন প্রকল্প

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৩-২১ ২০:০১:০৩


আজ সারাবিশ্বে বন দিবস পালিত হচ্ছে। বন সুরক্ষিত রাখার প্রত্যয় নিয়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। অথচ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়ায় প্রাকৃতিক বন ধংসের দ্বারগোড়ায়। এমনিতেই বৃক্ষশুন্য হয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে বনে। তার ওপর “ইকোট্যুরিজম” এর আওতায় ২২ কোটি টাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা নিয়েছে বনবিভাগ।

প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সংরক্ষিত বনের রীতিমতো ইট পাথরে পরিণত হবে এমন ধারনা পরিবেশকর্মী ও গবেষকরা। তাদের আশংকা বন, বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র বিপদে পড়বে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লাউয়াছড়াসহ আরো মোট তিনটি ইকোপার্ক উন্নয়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বন বিভাগ কাজ করছে। তার অংশ হিসাবে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ‘লাউয়াছড়া-সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক বনায়ন ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করেছে। প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের উন্নয়নে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনায় আছে অনেকগুলো পরিকল্পনা। যার মধ্যে রয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন একটি দ্বিতল রেস্ট হাউজ নির্মাণ, ৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০টি আরসিসি বসার বেঞ্চ ও ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পর্যটক চলাচলের জন্য ব্রিজ, ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে পর্যটকদের জন্য গোলঘর (ছাতাযুক্ত) নির্মাণ, ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে পাহাড়ের ওপরে পর্যটক যাওয়ার জন্য আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ, ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে আরেকটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ , ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পর্যটকদের জন্য লাউয়াছড়া এবং লাউয়াছড়ার বাঘমারা বিটে ৮টি টয়লেট নির্মাণ, লাউয়াছড়ার বাঘমারা বিটে পর্যটনের জন্য ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রবেশ গেইট নির্মাণ, ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে টিকিট কাউন্টার নির্মাণ, ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে গাড়ি পার্কিং স্থান নির্মাণ, ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ফুল ট্রেইল নির্মাণ, ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে লেক ও পুকুরে সিঁড়ি নির্মাণ, স্টাফ ও কর্মকর্তাদের জন্য আরো ৭টি স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। যার সবই হবে লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনে মূল অংশে ও বাঘমারা এলাকায়।

এই পরিকল্পনার মধ্যে আরও আছে ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে কালভার্ট নির্মাণ, ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও একটি বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ ও প্রায় ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গাইডওয়াল নির্মাণ।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানকে ঘিরে এ মহাপরিকল্পনার খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন পরিবেশবাদী ও গবেষকরা। তাদের অভিমত, এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ইট পাথরের পাশাপাশি বনটি বোটানিক্যাল গার্ডেনের মতো রূপ নেবে।

লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সম্পাদক আহাদ মিয়া বলেন, হাজার হাজার পর্যটক এমনতেই ঢুকছে। গাছ চুরি হচ্ছে, বন্ধ হচ্ছে না। এটা বন্ধ না করে উল্টো বন ধংসের পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা প্রতিহত করব।

মৌলভীবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামে সম্পাদক নুরুল মোহাইমিন মিল্টন বলেন, এ প্রকল্প নিলে লাউয়াছড়ার বারোটা বাজবে। জীব বৈচিত্র্য নষ্ট হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে লাউয়াছড়া একটি পিকনিক স্পট হবে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. আনিসুর রহমান বলেন, আমরা যা করছি সেটা বনের ভালোর জন্য করছি। এখানে নেগেটিভ কিছু নেই। মূলত লাউয়াছড়ার ভেতর থেকে পর্যটকদের চাপ কমাতে আমরা এক পাশে নিয়ে যাচ্ছি।’