তারল্য সংকট মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো এফবিসিসিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২০-০৩-২৩ ২২:০৫:৫৩


তারল্য সংকট মোকাবেলায় সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক সরকারি সিকিউরিটিজ কেনার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।

গত রোববার (২২শে মার্চ) এক সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, কোনো ব্যাংক চাইলে বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ বা এসএলআরের উদ্বৃত্ত ট্রেজারি বন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে পারবে। এর বিপরীতে নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত সুদ পাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কোনো ব্যাংক নগদ টাকার সংকটে থাকলে তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

“এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যেগ। এর ফলে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তারল্য সংকট মোকাবেলা করা সহজ হবে। এতে করোনাভাইরাসের ফলে চাপে থাকা ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ শিল্প পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সফট লোন পেতে সক্ষম হবে। এই কঠিন সময়ে এ সহযোগিতা উদ্যেক্তাদের সাহস যোগাবে,” শেখ ফাহিম বলেন।

“আমি সারাদেশের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের রাজনৈতিক ও আর্থিক খাতের নেতৃত্বের প্রতি এমন সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । দেশের এই চ্যালেঞ্জিং মূহুর্তে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যাংক খাত ও উদ্যেক্তাদের কাছাকাছি থেকে কাজ করে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে এফবিসিসিআই সকল সহযোগিতা প্রদান করে যাবে,” তিনি বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তারল্য ব্যবস্থাপনায় যাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় জোরদারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ (এসএলআর)’ সংরক্ষণের পর অতিরিক্ত সরকারি সিকিউরিটিজ থাকলে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বাজারমূল্যে বিক্রি করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগ সরকারি সিকিউরিটিজের সেকেন্ডারি মার্কেট উন্নয়নের পাশাপাশি মুদ্রানীতির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় এবং প্রয়োজনে তা সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি করে। বাজারমূল্যে ওই লেনদেন করা হয়।
সার্কুলার জারির আগে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং পূর্বনির্ধারিত এ বৈঠকে করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে রোববারের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকে কর্মকর্তারা বলেন, ঋণ চাহিদা না থাকায় এ মুহূর্তে ব্যাংক খাতে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ এখন এক লাখ কোটি টাকার বেশি। তবে জানুয়ারি-জুন সময়ে কোনো গ্রাহক ঋণের কিস্তি না দিলেও তাকে খেলাপি না করার নির্দেশনার ফলে ঋণ আদায় বন্ধ থাকতে পারে। এ সময় কোনো ব্যাংক যেন নগদ টাকার সংকটে না পড়ে, সে লক্ষ্যে আগাম সতর্কতা হিসেবে বন্ড ‘বাইব্যাক’ করা যেতে পারে। এর অর্থ হলো কোনো ব্যাংকের যদি এসএলআরের উদ্বৃত্ত বন্ড থাকে, ওই ব্যাংক তা বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ডিসেম্বরভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর কাছে মোট তারল্যের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ১০ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ পাঁচ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। এ হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল এক লাখ পাঁচ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর এই উদ্বৃত্ত অর্থের বড় অংশই ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করা আছে। বর্তমানে ২, ৫, ১০, ১৫ ও ২০ বছর মেয়াদি বন্ড রয়েছে। আর স্বল্পমেয়াদি ৯১, ১৮২ ও ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিল রয়েছে।