করোনা পুঁজি করে সয়াবিনের দাম বাড়ালেন ব্যবসায়ীরা

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৩-৩১ ১৯:৫২:১৯


করোনাভাইরাসের আতঙ্ককে পুঁজি করে পণ্যের দাম না বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান করা হলেও একশ্রেণির ব্যবসায়ী সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁওয়া, মালিবাগ ও রামপুরা অঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর খোলা (লুজ) ও বোতল উভয় সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে দাম বেড়েছে পাম অয়েলের।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিকরা হঠাৎ করেই সয়াবিল তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে খুচরায় দাম বেড়েছে।

তবে করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়ানোর পর নতুন করে দাম বাড়ানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে সয়াবিন তেলের বড় যোগানদাতা সিটি গ্রুপ।

খুচরা পর্যায়ের সয়াবিন তেলের দামের চিত্র তুলে ধরে দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘দাম বাড়লে আমরা কী করব? আমরা কি বেচা-কেনা করছি? আমরা শুধু ডেলিভারি দিচ্ছি।’

আপনারা কি দাম বাড়িয়েছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মানুষের দুর্যোগের মধ্যে আপনারা কী ধরনের প্রশ্ন করেন? আমরা কোনো দাম বাড়াইনি। যদি কেউ দাম বাড়ায় আপনারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলে অভিযোগ করেন।’

সিটি গ্রুপের এই কর্মকর্তা দাম বাড়নো হয়নি বললেও খুচরা ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসেই একাধিকবার সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেও সপ্তাহ ও মাসের হিসাবে দাম বেড়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। আর এক লিটারের বোতলের সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। পামঅয়েলের দামও বেড়েছে ৫ টাকা পর্যন্ত।

মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। আর এক লিটারের বোতলের সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। পামঅয়েলের দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত।

খুচরা ব্যবসায়ীরা এখন প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন ৯৫ থেকে ১০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৮৮ থেকে ৯০ টাকা। আর এক মাস আগে ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।

ভালোমানের পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৮০ থেকে ৮৩ টাকা। আর এক মাস আগে ছিল ৭৫ টাকার মধ্যে। সাধারণ পামঅয়েল এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে সাধারণ পামঅয়েলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে এক মাস আগে সাধারণ পামঅয়েলের কেজি ৭০ টাকা ছিল।

এদিকে এক লিটার বোতলের সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। আর এক মাস আগে ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা।

খুচরা ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যের পাশাপাশি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য পর্যালোচনা করেও দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহ ও মাসের ব্যবধানে সয়াবিন তেল এবং পামঅয়েলের দাম বেড়েছে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের দামের সঙ্গে টিসিবির দামের কিছুটা পার্থক্য পাওয়া গেছে।

টিসিবির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৯৩ থেকে ৯৭ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৯০ থেকে ৯৩ টাকা। আর এক মাস আগে ছিল ৮৫ থেকে ৮৮৮ টাকা।

ভালোমানের পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৬ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭৫ থেকে ৮৩ টাকা এবং এক মাস আগে ছিল ৭৫ থেকে ৭৯ টাকা। আর এক লিটার বোতলের সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা এবং এক মাস আগে ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা।

সয়াবিন তেলের দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমে গেছে। সেইসঙ্গে পাইকারিতে দামও বেড়েছে। ফলে আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। আমরা কম দামে কিনতে পারলে তখন আবার দাম কমিয়ে দেব।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস