করোনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সংবাদ সম্মেলন আজ
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৪-০৫ ০৬:৫৩:১৯
চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাবে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ একটি বিশেষ কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করবেন। এতে দেশের উৎপাদনমুখী বড় শিল্প, রফতানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, ব্যক্তি উদ্যোগ, নারী উদ্যোক্তা ও কৃষি খাতের জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনা থাকবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন খাতে ইতোমধ্যে হয়ে যাওয়া ক্ষতি ও আগামীতে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে- এর একটি ধারণা নিয়ে এসব খাতের জন্য তিনি এই বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
আজ রোববার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করবেন। সকাল ১০টায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সংবাদ সম্মেলনে অন্যবারের মতো সাংবাদিকদের সরব উপস্থিতি ও প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকছে না। বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে গণভবন সূত্রে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব নিরসনে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করবেন। সংবাদ সম্মেলনটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও সরাসরি সম্প্রচার করবে। গণভবন সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জন্য পৃথক একটি প্রণোদনা পাকেজ ঘোষণা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ব্যবসায়ীদের জন্য যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি প্যাকেজের কথা ইতোমধ্যে বলেছেন, তারও একটি ব্যাখ্যা আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হতে পারে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রভাব মোকাবেলা করতে ইতোমধ্যে রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক কর্মচারীদের বেতনভাতা দেয়ার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি নীতিমালা জারি করা হয়েছে। এ নীতিমালা নিয়ে দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা আপত্তি উপস্থাপন করেছেন।
করোনার কারণে সৃষ্ট মন্দা কাটাতে উদ্যোক্তাদের কিভাবে সহায়তা করা যায় সে বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে প্যাকেজে। এর আওতায় রফতানিমুখী শিল্প, বড় শিল্প, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতে কম সুদে ঋণের জোগান বাড়ানো, বিভিন্ন সরকারি সেবা ও রাজস্ব খাতে বিশেষ ছাড় দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এর পরে বিভিন্ন সংস্থা আলাদাভাবে এসব বিষয়ে নীতিমালা ঘোষণা করবে। এর আলোকে সরকারের দেয়া প্রণোদনার বিষয়গুলো ব্যবহৃত হবে।
এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে শনিবার রাতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি জরুরি বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে করোনার প্রভাবের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি ও তা কটিয়ে ওঠার জন্য করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে স্বল্প ও দৈনন্দিন আয়ের মানুষের জন্য মাসব্যাপী সহায়তা দিতে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া এবং উৎপাদন খাতকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাসম্ভব সচল রাখার বিষয়েও আলোচনা হয়।
সূত্র জানায়, করোনার প্রভাবে রফতানি কমে যাওয়ায় এ খাতের শিল্পগুলো তারল্য সংকটে পড়েছে। একইভাবে দেশের বাজারে পণ্য বিক্রি করতে না পাড়ায় দেশীয় শিল্পগুলোতেও অর্থ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এই সংকট কাটিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সচল করতে প্রথমে তাদের কম সুদে ঋণের জোগান দিয়ে তারল্য প্রবাহ বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে ব্যবসা খরচ কমানোর জন্য বিভিন্ন সেবার বিপরীতে বিশেষ ছাড় দেয়া হবে। এর মধ্যে রাজস্ব, বন্দর, বিদ্যুৎ, গ্যাস রয়েছে।
আরও জানা গেছে, লকডাউন-পরবর্তীতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়াতে পাঁচ দফা প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি বর্তমানে বিবেচনাধীন রয়েছে। এর আওতায় রফতানি খাতে প্রণোদনা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি উন্নয়ন তহবিল থেকে উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার সীমা বাড়ানো হবে, করোনার প্রভাবে যেসব পণ্য ‘স্টক লট’ হয়ে যাবে সেগুলো কম দামে বিক্রির জন্য বিশেষ ছাড় দেয়া হবে। এছাড়া রফতানি খাতে অন্যান্য ছাড়ও দেয়া হবে।
করোনার প্রভাবে দেশে কর্ম হারানোর সংখ্যা বেড়ে যাবে। ফলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর বেশি জোর দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে বড় শিল্পগুলোকে নতুন নতুন ইউনিট স্থাপন করে কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করা হবে। দেশে সরাসরি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয়। এছাড়া পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে সারা দেশে কর্মসংস্থান ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি অর্থের প্রবাহ বেড়ে যায়। এ কারণে এ দুটি খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ দুটি খাতে ঋণপ্রবাহ, অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ানোসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নিয়েছে। ইতোমধ্যে সব খাতে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সীমা বাড়ানো হয়েছে। এটি আরও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
বর্তমানে কৃষিপণ্যের বিপণনে সমস্যার সৃষ্টি হওয়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ কারণে কৃষিতে যাতে উৎপাদন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য এ খাতে টাকার প্রবাহ বাড়ানো হবে। টাকার অভাবে যাতে কোনো জমি চাষের বাইরে না থাকে সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হবে। এ খাতে অন্যান্য প্রণোদনাও দেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।