রাজধানীর প্রবেশ পথে পুলিশের কড়াকড়ি
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৪-০৭ ১২:০৯:০৪
মানুষ যাতে রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ এবং বাইরে যেতে না পারে, সে লক্ষ্যে প্রবেশপথগুলোয় নিরাপত্তা আরও জোরদার করেছে পুলিশ। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনার পরদিন সোমবার সকাল থেকেই ঢাকার সব প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হয়েছে। তবে এই কড়াকড়ির মধ্যেও নানা ছুতোয় অনেকে ঢুকে পড়েছেন রাজধানীতে। আবার অনেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয়েছে। তবে অধিকাংশকেই চেকপোস্ট থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে যারা হেঁটে ঢাকায় প্রবেশ করছেন তাদেরকে পরিচয়পত্র দেখে ঢুকতে দেয়া হয়। সোমবার গাবতলী, পোস্তগোলা ব্রিজ, বাবুবাজার ব্রিজ, সদরঘাট, উত্তরার আবদুল্লাহপুর, পূর্বাচল ৩০০ ফুট, কাঁচপুর ব্রিজসহ বেশকিছু পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি দেখা গেল। পুলিশের কড়াকড়ির কারণে ঢাকায় প্রবেশ ও ঢাকার বাইরে যাওয়া গাড়ির সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় সোমবার কিছুটা হলেও কমে আসে। গাবতলী চেকপোস্টে দেখা গেছে, জরুরি কাজে নিয়োজিত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়িকে ঢাকায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
জানতে চাইলে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকায় ঢোকার কারণগুলো অযৌক্তিক মনে হওয়ায় অনেক গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। যেসব মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করে চালাচ্ছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে। তবে যারা হেঁটে ঢাকায় প্রবেশ করতে চাচ্ছেন তাদের পরিচয়পত্র দেখে অনুমতি দেয়া হচ্ছে। তবে যারা বের হতে চাচ্ছেন, তাদের বের হতে দেয়া হচ্ছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর অংশের চেকপোস্টেও বেশ কড়াকড়ি দেখা গেল। সোমবার দুপুরে কাঁচপুর এলাকায় লোকজনকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
তাদের কেউ কুমিল্লা, কেউ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কেউ সিলেটে যাওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজছিল। কথা হয় কাঁচপুর এলাকায় গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের বাসিন্দা আজমল মিয়ার সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বাড়িতে জরুরি প্রয়োজন ছিল, তাই বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। মনে করেছিলাম ট্রাকে বা কোনো প্রাইভেট কারে যেতে পারব। কিন্তু কাঁচপুর এলাকায় হাইওয়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে। একটা ট্রাকে উঠেছিলাম, ট্রাকটি ফিরিয়ে দিয়েছে। এখন দেখছি যাওয়ার আর কোনো উপায় নেই। বাসায় ফিরে যেতে হবে। আজমল মিয়ার মতো অনেকেই যে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেট কার বা মোটরসাইকেলে যতদূর যাওয়া যায়, যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। রাস্তায় যারা গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাদেরকে পুলিশ রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
পোস্তগোলা দেখা গেল, ব্রিজ এলাকা দিয়ে অনেকেই ঢাকায় ঢোকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু চেকপোস্টের কারণে ঢুকতে পারেননি অনেকেই। ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ এই রোড দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেন। যে কারণে চেকপোস্টে নজরদারি ছিল বেশ কড়া। এ চেকপোস্টে প্রত্যেকটি যানবাহনকে জিজ্ঞাসার মুখে পড়তে হয়েছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ থেকে যাতে ঢাকায় লোকজন প্রবেশ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে এলাকায় নজরদারি রয়েছে।
এদিকে রাজধানীর উত্তরার আবদুল্লাহপুর সড়কে পুলিশের কঠোর নজরদারি ছিল চোখে পড়ার মতো। পূর্বাচলের তিনশ’ ফুটে একাধিক চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এ পথে কাউকে প্রবেশ করতে বা বের হতে দেয়া হয়নি। কথা হয় এক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, যে গাড়িগুলো চলাচলে অনুমতি আছে সেগুলো আমরা প্রবেশ করতে দিচ্ছি। যেগুলো বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় বের হয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। এদিকে ঢাকার বাইরে থেকে আসা যানবাহন ঠেকাতে বিমানবন্দরের মূল সড়কে পুলিশকে তৎপর দেখা যায়। সেখানে কোনো প্রাইভেট কারকেই চেক করা ছাড়া ঢুকতে দেয়া হয়নি।
চেক করার সময় পুলিশের একজন কর্মকর্তা একটি প্রাইভেট কারের মালিককে উদ্দেশে করে বলছিলেন, ঢাকার বাইরে থেকে যানবাহন প্রবেশ নিষেধ- এ সরকারি নির্দেশ কি আপনি জানেন না, ব্যাক-ডালা ভর্তি বাজার-সদায়। আর বলছেন, উত্তরা থেকে আসছি। গাড়ি সাইড করেন। দেখছি আপনি কোথা থেকে এসেছেন? এভাবে রাজধানীর বিভিন্ন চেকপোস্টেও পুলিশি তল্লাশির মুখে পড়তে হয়েছে প্রাইভেট কার নিয়ে বের হওয়া মানুষকে। জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি মিডিয়া সোহেল রানা যুগান্তরকে বলেন, আমরা প্রবেশ এবং প্রস্থানের পথগুলোয় চেকপোস্ট বসিয়েছি। জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো পরিবহনকে ঢাকায় প্রবেশ বা বের হতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে শুধু পুলিশ নয়, একযোগে সবাইকে কাজ করতে হবে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস