নগরীর বাজারগুলোয় উপচে পড়া ভিড়
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৪-০৯ ১৮:১০:৪৩
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রাজধানীর বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা। বাজারগুলোয় কেনাকাটায় লেগেছে উপচেপড়া ভিড়। স্বাভাবিক সময়ের মতো ঠেলাঠেলি আর হুড়োহুড়ি করে বাজার করছেন অধিকাংশ ক্রেতা। ক্রেতাদের মুখে নিম্নমানের মাস্ক পরা থাকলেও বেশির ভাগ বিক্রেতারা ব্যবহার করছেন না মাস্ক কিংবা গ্লাভস। বেসামল পরিস্থিতি সামল দেওয়ার যেন নেই কেউই। সুপারশপগুলোয় ক্রেতাদের জন্য হ্যান্ডস্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হলেও অলিগলির খোলা বাজারে তাও নেই। এতে করোনা ভাইরাস ঝুঁকিতে আছে সকল পর্যায়ের মানুষ। নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, গত ৮ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩১ দিনে দেশে ২১৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২৩ জন ঢাকা মহানগরীর। করোনা ভাইরাসের সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের আশঙ্কায় ঢাকা মহানগীর মানুষেরা। এখনো পর্যন্ত রাজধানীর ৫৪ এলাকা লকডাউনের খবর পাওয়া গেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে বিধি না মেনে চলছে কেনাকাটার ধুম। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দিনের বেলায় মানুষের উপস্থিতি দেখে বোঝার উপায় নেই যে সারা বিশ্বে করোনার ভাইরাসে ভয়াবহ অবস্থা চলছে। উলটো অনেক জায়গায় দেখে মনে হচ্ছে মানুষ এখন ঈদের বাজার করতে আসছেন।
দেশের চিকিত্সক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখোমুখি দাঁড়ালে একজন থেকে অপরজনের সামাজিক দূরত্ব হতে হবে ছয় ফুট আর সারি বেঁধে দাঁড়ালে তিন ফুট দূরত্ব থাকা চাই। এক্ষেত্রে করোনা সংক্রামণের আশঙ্কা কম।
বেশির ভাগ ক্রেতারা বলছেন, নিজ এলাকা লকডাউনের আশঙ্কা, আগামীতে আরো কড়াকড়ি এবং বৃহস্পতিবার পবিত্র শবেবরাতের কারণে বেশি করে বাজার করছেন তারা। সামনে কি হয় না হয় তা বলা কঠিন। এজন্য প্রয়োজনীয় যা কিছু তা কিনে রাখছেন ক্রেতারা।
করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধ ঠেকাতে সরকার অফিস আদালতসহ দেশের সব প্রতিষ্ঠান গত ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান, ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার খোলা রাখা হয়েছে মানুষের প্রয়োজনে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, ওষুধের দোকান বাদে সব ধরনের দোকানপাট সন্ধ্যা ৭টায় বন্ধ থাকছে। সুপারশপ ও স্বীকৃত কাঁচাবাজারগুলো ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং পাড়া-মহল্লার মুদিদোকান বন্ধ হয় বেলা ২টায়।
সরেজমিন রাজধানীর কাওরান বাজারে দেখা যায় কাঁচাবাজার ও ফল মার্কেটে ঢুকতে গাদাগাদি আর ঠেলাঠেলি অবস্থা। ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়েই প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন তারা। কিছু এলাকায় পুলিশ ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই বেশির ভাগ মানুষের। দোকানিরাও এ ব্যাপারে সতর্ক করছে না। বিক্রেতারা ব্যবহার করেননি মাস্ক বা গ্লাভস।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কাঁচাবাজার কাওরান বাজার থেকে ঢাকার অন্যান্য জায়গায় সরবরাহ করা হয় বলে এখানে বরাবরই জটলা লেগেই থাকে। ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এই কাওরান বাজারের এক সিকিউরিটি গার্ড মারা গেছেন। এই কাঁচা বাজারের এক শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত। জীবনহানির শঙ্কার মধ্যেও কাওরান বাজারে ভিড় থামছেই না। আর রাত ১০টার পর তো রীতিমতো কাঁচাবাজারের পণ্য নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া চলে।
নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট, মিরপুর, কল্যাণপুর, শ্যাওড়াপাড়া, হাতিরপুল, কাঁঠালবাগান ও পান্থপথের বাজারেও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার যে নির্দেশনা বা সতর্কতা—কোনোটাই মানা হচ্ছে না এসব বাজারে। বুধবার সকাল ১১টায় কল্যাণপুরের নতুন বাজারে দেখা গেছে, উপচেপড়া ভিড়ের মধ্যে হঠাত্ দুটি সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে যায়।
শ্যামলীর লিংক রোডে প্রিন্সবাজার সুপারশপে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতারা সুপারশপে প্রবেশের আগে হাতে হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করানো হচ্ছে। আর পায়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। তবে সুপারশপের ভেতরে কেনাকাটার সময়ে ক্রেতারা মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। সুপারশপে ব্যবহার হলেও আমাদের দেশের বেশিরভাগ বাজারে হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু পাশ্ববর্তী ভারতে লকডাউনের মধ্যে বাজার কমিটিগুলো বাজার ব্যবস্থা কঠোরভাবে মনিটরিং করছে।