করোনায় অর্থনৈতিক মন্দা

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির পরামর্শ সানেমের

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৪-২০ ০৮:২৯:৫৩


বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি করা যেতে পারে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। সম্প্রতি সানেম আয়োজিত ‘নেটিজেন ফোরাম অন কভিড-১৯ প্যান্ডেমিকের’ তৃতীয় পর্ব  থেকে এমন পরামর্শ দেয়া হয়।

বর্তমানে চলা ভয়াবহ মহামারীর ফলে বিরাজমান সংকট ও আসন্ন সংকটের বিভিন্ন আঙ্গিক ও উত্তরণের উপায় নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরের অর্থনীতিবিদ, গবেষক, উন্নয়নকর্মী, নীতিনির্ধারক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার জন্য একটি ইন্টারনেটভিত্তিক প্লাটফর্ম ‘সানেম নেটিজেন ফোরাম’ গড়ে তুলেছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে এ ফোরামের তিনটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ অনলাইন এ মিটিং পরিচালনা করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান।

অনলাইন এ ফোরামে আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বর্তমান প্রেক্ষাপটে করণীয় বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। সেখানে বলা হয়, অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি করা যেতে পারে এবং এ দেশগুলো মেডিকেলসামগ্রী ও মহামারীসংক্রান্ত নিজেদের অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান করতে পারে।

সরকার ঘোষিত প্রণোদনার বিষয়ে আলোচকরা বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ ও ত্রাণ বিতরণ তদারকির জন্য একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা দরকার। তবে এ কমিটিকে কার্যকরী ভূমিকা পালনের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা প্রয়োজন। কমিটিকে অবশ্যই যথেষ্ট ক্ষমতা দিতে হবে। ত্রাণ ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রমকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।

আলোচকরা মনে করেন, বাজেট ঘাটতি নিয়ে আমাদের এই মুহূর্তে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত হবে না। তারা বলেন, রেমিট্যান্সপ্রবাহের ক্ষেত্রে মহামারীর জন্য নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিদেশফেরত প্রবাসী শ্রমিকদের জাতীয় অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য স্বল্প সুদে ঋণ, টেকনিক্যাল সহযোগিতাসহ একটি সার্বিক নীতি প্রণয়ন করতে হবে। দেশীয় অর্থনীতিতে বিভিন্ন খাতের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করে সেগুলোকে টিকিয়ে রাখা এবং পণ্য বৈচিত্র্যের ব্যবস্থা করতে হবে।

কভিড-১৯-এর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ঝুঁকির বিষয়ে উল্লেখ করে আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের নিম্নমধ্যম বা নিম্ন আয়ের যেসব পরিবার এই বৈশ্বিক মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাবে দরিদ্র হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে, তাদেরকে চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। এই পরিবারগুলোকে ত্রাণের সঙ্গে সঙ্গে অর্থ সাহায্যও দেয়া যেতে পারে। শহর অঞ্চলের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা এক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। এছাড়া দরিদ্র বা সাহায্য প্রয়োজন এমন মানুষদের অবস্থা পর্যালোচনা করার জন্য এবং সাহায্য পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি হেলপলাইন তৈরি করা যেতে পারে।

শিল্প খাতের বিষয়টি উল্লেখ করে সানেমের এ আলোচনায় বলা হয়, ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য ভর্তুকি বৃদ্ধি করা উচিত এবং এসব শিল্পের কাঁচামালের ওপর থেকে কর কমানো উচিত। ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র শিল্প ব্যবসাগুলোর ঋণ পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে ঋণ বিতরণের জন্য ক্ষুদ্র শিল্প ব্যবসাগুলোর সংগঠনগুলোর সহায়তা নেয়া যেতে পারে। তবে ক্ষুদ্র শিল্পগুলোর সহায়তার ক্ষেত্রে এ শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিক ও কর্মচারীদের কথাও মাথায় রাখতে হবে। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট বিলোপ করা কার্যকরী হতে পারে বলেও মতামত দেন আলোচকরা।

এর আগে বৈশ্বিক মহামারীর সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ড. রায়হান আলোচনা শুরু করেন। তার মতে, এই মহামারী আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করেছে এবং মহামারী-পরবর্তী সময়ে অবশ্যই স্বাস্থ্য খাতে আরো বেশি বিনিয়োগের দাবি তুলতে হবে। তিনি বলেন, আগামী তিন-চার মাস চলার মতো খাদ্য বাংলাদেশের থাকলেও দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ ক্রমাগতই কঠিন হয়ে উঠছে। অনেক অসাধু ব্যক্তি খাদ্যশস্য অবৈধভাবে মজুদ করছে বলেই এ অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ সমস্যা মোকাবেলার জন্য বেসরকারি খাত, এনজিও ও সুশীল সমাজকে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণের প্রক্রিয়ায় ভূমিকা পালন করতে হবে বলেও জানান ড. রায়হান।

জিডিপির অনুপাতের দিক থেকে বাংলাদেশের প্রণোদনা প্যাকেজ দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ উল্লেখ করে ড. রায়হান বলেন, শুধু প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দেয়াই যথেষ্ট নয়। যেহেতু বাংলাদেশ আগে কখনো এত বড় প্রণোদনা প্যাকেজ সামলায়নি। সে কারণে অর্থায়ন, বিতরণ ও প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকারিতা নিশ্চিতে তদারকি বা মনিটরিং এ তিনটি ক্ষেত্র নিয়ে চিন্তা করা দরকার।

এ সময় ড. রায়হান প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থায়ন নিয়ে সানেমের প্রস্তাব সম্পর্কে ফোরামকে অবগত করেন। সানেম প্রস্তাবিত চারটি উৎস হলো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ হ্রাস, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ গ্রহণ, দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ এবং টাকা ছাপানো।

 

প্রণোদনা প্যাকেজের সঠিক ব্যবহার ও বিতরণের জন্য একটি বিধিমালা প্রণয়নের ওপর ড. রায়হান জোর আরোপ করেন। ঋণখেলাপিদের এ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতা থেকে বাদ দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।