কারখানাগুলো পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত ‘অপরিপক্ক’ : বিশেষজ্ঞ

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৪-২৮ ১৫:৩৪:৪৫


বাংলাদেশে মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও ইতোমধ্যে মালিকপক্ষ কারখানাগুলোর কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই ধরনের ‘অপরিপক্ক’ সিদ্ধান্তের ফলে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব হতে পারে।

তারা বলছেন, দেশে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব ক্রমবর্ধমান থাকায় সম্প্রদায় সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) রোধে কারখানা, মার্কেট বা বাজার পুনরায় চালু করার পরিবর্তে অন্তত ঈদুল ফিতর পর্যন্ত লকডাউন কঠোরভাবে অব্যাহত রাখতে হবে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এখনই লকডাউন শিথিল করা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরায় চালু করার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত যথার্থ নয়, কারণ করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

তারা আরও বলছেন যে, জীবিকা ও অর্থনীতি সচল রাখার জন্য মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যঝুঁকির সঙ্গে আপস করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতের উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান শনিবার বলেন, অর্থনীতি বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে দেশের রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো অবশ্যই ধীরে ধীরে আবার চালু করতে হবে।

শনিবার এফবিসিসিআই আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা সুইডেন মডেল আমাদের সামনে রেখেছি, তারা লকডাউন প্রয়োগ করেনি। চীনের উহানে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপ চলছে। জার্মানি ও ফ্রান্স এখনো ভুগছে, নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তবে তারা এরইমধ্যে তাদের কারখানা চালু করছেন।’

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করছি যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন খারাপের দিকে যাওয়ার সময় কারখানাগুলো পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত যথার্থ নয়।’

‘আমরা এখনো লকডাউন যথাযথভাবে প্রয়োগ এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মানুষজনকে বাধ্য করতে পারিনি। মানুষ এখনো এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, আমরা যদি কারখানাগুলো আবার চালু করি, আমাদের চরম মূল্য দিতে হবে।,’ সতর্ক করেন তিনি।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য আরও বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর করোনাভাইরাসের হটস্পট (সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত এলাকা), যেখানে বেশিরভাগ কারখানা অবস্থিত। আমরা যদি এসব এলাকার শ্রমিকদের কারখানায় কাজ করার অনুমতি দেই, তবে ভাইরাসটি ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়বে। করোনা আক্রান্ত কর্মীর মাধ্যমে অন্য সব সহকর্মীদের মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমিত হতে পারে।

ড. কনক উল্লেখ করেন, ‘সম্প্রতি করোনার কোনো উপসর্গ ছাড়াই এ রোগে আক্রন্তের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি আমাদের অনেক ডাক্তার ও নার্স সতর্ক থাকা সত্ত্বেও এবং মাস্ক ও পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) পরেও করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন। সেজন্য আমরা যদি আমাদের কর্মীদের কারখানায় কাজ করার অনুমতি দেই, তাহলে আমরা দেশের জন্য একটি বিরাট বিপদ ডেকে আনব। করোনার সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে আমরা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোমবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫২ জনে। এছাড়া এ পর্যন্ত মোট ৫ হাজার ৯১৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সরকার।

চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনে (বিডিএফ) তথ্যমতে, রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার সময় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রবিবার পর্যন্ত ৩৭৩ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই ২৮৩ জন এবং অন্য ছয় বিভাগে ৯০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস