‘চাকরি আর বেতন ছাড়া আমাদের হারাবার কিছু নেই’
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৫-০২ ১৯:৫৪:৪৮
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যেই কর্মস্থলের দিকে ছুটেছেন পোশাক শ্রমিকরা। সড়কে তাদের সহ্য করতে হচ্ছে সীমাহীন ভোগান্তি।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটে, ভ্যানে, ভাড়ায় মোটরসাইকেল, পিক আপ, অটোরিকশা কিংবা পণ্যবাহী ট্রাকে করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে ঢাকা ও গাজীপুরের দিকে ছুটে আসছেন এসব শ্রমিকরা।
শনিবার তাদের কারখানায় যোগ দিতে বলা হয়েছে বলে জানান এসব শ্রমিকরা। অন্যথায় তাদের ছাঁটাই করারও হুমকি দেয়া হয়েছে। একে তো করোনা, তারওপর সামনে ঈদ। তাই এ অসময়ে চাকরি খোয়াতে চাচ্ছেন না শ্রমিকরা। তাই তারা অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে ছুটে আসছেন রাজধানীতে।
স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে কাজ শুরু হয়েছে গত ২৭ এপ্রিল থেকে। এরপরই ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের পোশাক কারখানা শ্রমিকরা কর্মস্থলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। শুক্রবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা, এমসি বাজার ও জৈনা বাজার এলাকায় শত শত শ্রমিকের ঢাকামুখী স্রোত দেখা যায়।
মহাসড়কে খোলা ট্রাক ও পিক আপের শ্রমিকদের বিভিন্ন চেক পয়েন্টে আটকে দিচ্ছে পুলিশ। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নারী শ্রমিকদের।
শ্রমিকরা জানান, সামনে ঈদ, চাকরিতে যোগদান না করলে বেতন না পাওয়া এবং ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাই তারা কর্মসংস্থানের সংকটের কথা বিবেচনা করেই এভাবে কষ্ট করে কাজে ফিরছেন। কারণ চাকরি আর বেতন ছাড়া আমাদের হারাবার কিছু নেই।
এ সম্পর্কে এক শ্রমিক জানান, কারখানা ছুটির পর বাড়ি গিয়ে সেখানে আটকে পড়েছিলেন তিনি। কারখানা খোলার খবর শুনে শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহের বাইপাস মোড় থেকে প্রথমে একটি পিকআপে ওঠেন। কিছুদুর আসার পর ত্রিশাল চেকপোস্টে পিক আপ থেকে সব যাত্রীদের নামিয়ে দেয় পুলিশ। পরে সেই চেকপোস্ট পার হয়ে ভালুকায় আর একটি চেকপোস্টে গাড়ি আটকে নামিয়ে দেয় পুলিশ। পরে ভালুকা থেকে পাঁচ জনে মিলে জনপ্রতি আড়াইশ টাকা ভাড়ায় মাওনা চৌরাস্তা আসেন তিনি।
এরকম একজন নন, অসংখ্য শ্রমিক এভাবেই ভেঙে ভেঙে নানা যানবাহনে করে ঢাকায় আসছেন। উদ্দেশ্য কাজে যোগ দিয়ে চাকরি ঠেকানো।
প্রায় দেড় মাস ধরে কারখানা বন্ধ। ফলে হাতে একেবারেই টাকাপয়সা নেই। এদিকে সামনেই ঈদ। এই একমাস কাজ করে যদি বেতন নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন তবে ঈদে কিছুটা স্বস্তি মিলবে। প্রিয়জনদের হাসিমুখ দেখারও সুযোগ হবে। এ কারণেই এত কষ্ট করে কাজে ফিরছেন তারা। মোটামুটি সবার একই ভাষ্য।
প্রসঙ্গত, গাজীপুরের নিবন্ধন প্রাপ্ত ছোট বড় মাঝারি কারখানার সংখ্যা ৪৭৬৫টি। করোনাকালের আগে চালু ছিল ২৩৬৮টি কারখানা। এর মধ্যে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ-এর নিয়ন্ত্রণাধীন কারখানা ৮৬২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে কয়েক লাখ শ্রমিক। গত ২৬ এপ্রিল কিছু কারখানা খোলা হলেও শনিবার থেকে খুলছে গাজীপুরের বাকি কারখানগুলো।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস