দেশের৬ প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করছে করোনার ওষুধ

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৫-০৬ ০৯:১২:৪৮


পুরো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মারণঘাতি নভেল করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশে। ইতোমধ্যে ওষুধটি তৈরিতে দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ)। কোম্পানি ছয়টি হলো বেক্সিমকো, বিকন, এসকে-এফ, ইনসেপটা ও হেলথকেয়ার। এর মধ্যে এসকে-এফ কোম্পানির রেমডেসিভির ওষুধ আগামী ১৮ মের মধ্যে বাজারে আসবে বলে জানিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ডিজিডিএ) একটি সূত্র।

এর আগে মার্কিন বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় দেশটির কোম্পানি গিলিয়েড সায়েন্সেসের তৈরি রেমডেসিভিরের কার্যকরিতার বিষয়ে তারা সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ কর্তৃপক্ষও (এফডিএ) হাসপাতালগুলোতে সংকটাপন্ন করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে এ ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। গবেষণার বরাত দিয়ে মার্কিন সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফসি দাবি করেন, করোনা আক্রান্তদের সারিয়ে তুলতে রেমডেসিভির প্রায় ৩১ শতাংশ বেশি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। প্রায় ১১ দিনে সুস্থ হয়ে উঠছেন অনেকে। ওষুধটি প্রয়োগে কেউ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হয়নি বলেও জানান তিনি। নিউইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছে, ওষুধটির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গিলিয়েডের সিইও ডেন ও’ডে জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই তারা ব্যাপকভাবে রেমডেসিভির উৎপাদনে যাবে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এ মুহূর্তে প্রায় ১৫ লাখ রেমডেসিভিরের ভায়াল দান হিসেবে উৎপাদন করা হচ্ছে। যদিও তার কয়েকদিন আগেই জানা গিয়েছিল চীনের ট্রায়ালে ওষুধটি ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এখনো এ ওষুধকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি।

জানা গেছে, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার হচ্ছে। রেমডেসিভিরের আগে এ ওষুধটিকেই করোনা চিকিৎসায় সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। যদিও এটির কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবু বাংলাদেশি কয়েকটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, রেমডেসিভিরসহ বিভিন্ন দেশে করোনার চিকিৎসায় ব্যবহৃত সম্ভাবনাময় কয়েকটি ওষুধ উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে ডিজিডিএর কাছে আবেদন করে। এর পরই ডিজিডিএ থেকে রেমডেসিভিরসহ পাঁচটি ওষুধ উৎপাদনের জন্য কোম্পানিগুলোকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। ডিজিডিএ মহাপরিচালক

মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটির (ডিসিসি) অনুমোদন না হওয়া সত্ত্বেও জনস্বার্থে জরুরি প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি ওষুধের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছেÑ রেমডেসিভির ১০০ এবং ১৫০ এমএল ভায়াল ইনজেশন, ফেভিপিরাভির ২০০ এমজি ট্যাবলেট, অ্যাটাজানাভির ৪০০ এমজি ক্যাপসুল, লোপিনাভির ২০০ এমজি প্লাস রিটোনাভির ৫০ এমজি ক্যাপসুল ও ডারুনাভির ৮০০ এমজি প্লাস কোবিসিসটেট ১৫০ এমজি ট্যাবলেট।

জানা গেছে, অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ না থাকায় ওষুধটির উৎপাদন হয় না। যেসব দেশে ইবোলার প্রাদুর্ভাব আছে সেখানেই কেবল রেমডেসিভির উৎপাদন হয়। ঔষধ প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ অনুমোদিত রেমডেসিভির বাংলাদেশেও ব্যবহার হতে পারে এমন ধারণা আমাদের ছিল। তাই আমরা আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের যারা উৎপাদক আছে তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়। এর পরই কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ওষুধটি উৎপাদনে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং এর কাঁচামাল আমদানি করে উৎপাদনের প্রস্তুতি নেয়। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ওষুধটি বাজারে ছাড়তে পারবে বলে জানিয়েছে। ওষুধটি আমাদের দেশের করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিজিডিএ পরিচালক মো. রুহুল আমিন বলেন, আমাদের দেশে যে ছয় প্রতিষ্ঠানকে রেমডেসিভির তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। একটি হচ্ছে এসকে-এফ ফার্মাসিটিকলস এবং আরেকটি বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউকলস। এর মধ্যে এসকে-এফ অনেকটা এগিয়ে গেছে, তাদের ওষুধ আগামী ১৮ মের মধ্যে বাজারজাত করবে।

তিনি আরও বলেন, যেসব কোম্পানি রেমডেসিভির উৎপাদন করবে তারা এর গুণগতমান নিশ্চিত করবে। কোম্পানিগুলো ওষুধের স্যাম্পল আমাদের কাছে জমা দেবে। আমরা সেই স্যাম্পল আমাদের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে মান যাচাই করবো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান ও ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটির (ডিসিসি) সদস্য অধ্যাপক ডা. শীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, করোনা ভাইরাসের চিকিৎসাকার্যে রেমডেসিভির ও ফেভিপিরাভিরসহ কয়েক ধরনের ওষুধ উৎপাদনে ডিজিডিএ অনুমোদন দিয়েছে। এসব ওষুধ চিকিৎসকের প্রেসক্রাইব অনুযায়ী ব্যবহার করা যাবে। এরই মধ্যে রেমডেসিভির উৎপাদন শুরু হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যে সেটি পাওয়া যাবে। এটি ট্রায়াল পর্যায়ে আছে। ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণিত। এখন আমাদের দেশে যারা তৈরি করবেন, তারা এর নিরাপত্তা কার্যকারিতা নিশ্চিত করেই বাজারে ছাড়বে। তবে এরই মধ্যে ফেভিপিরাভির আমাদের দেশের বাজারে চলে এসেছে। কিছু কিছু হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ম্যানেজমেন্টে চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করছেন।

সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়