সন্তানকে দূরে ঠেলে রোগীর পাশে চাঁদপুরের চিকিৎসক দম্পতি
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৫-১১ ১০:২৭:৫৭
দেশে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়া মারণঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রমণের দুর্যোগে শিশু সন্তানকে দাদার বাড়ি পাঠিয়ে রোগীদের নিরলস সেবা দিচ্ছেন চাঁদপুরের এক চিকিৎসক দম্পতি।
নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে এরই মধ্যে ওই দম্পতির একজন ডা. সাজেদা বেগম ‘করোনাযুদ্ধের জেনারেল’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক গত ৬ মে চট্টগ্রাম বিভাগের ১৪ জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে করোনাভাইরাস যুদ্ধের ‘জেনারেল’ হিসেবে উপাধি দেয় বলে জানিয়েছেন চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ।
শুধু সাজেদাই নন, তার স্বামী ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেলও রোগীদের সেবায় দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।
তাদের একমাত্র সন্তানকে তার দাদা-দাদির কাছে রেখে তারা নেমে পড়েছেন এ লড়াইয়ে।
ডা. সাজেদা বেগম পলিন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। আর ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা (আরএমও)।
এ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেলকে করোনাভাইরাস বিষয়ক ‘ফোকাল পারসন’ ও মেডিকেল টিমের প্রধান হিসেবে মনোনীত করেছে।
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, এ চিকিৎসক দম্পতি শহরের আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবা, নমুনা সংগ্রহ ও সচেতনতায় শুরু থেকে সক্রিয় রয়েছেন।
ডা. সাজেদাকে ‘জেনারেল’ উপাধিতে ভূষিত করার প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন বলেন, “ওই পরিচালকের মতে, চাঁদপুরে করোনাযুদ্ধে কাজ করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক হলেন ডা. সাজেদা।”
চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী কোভিড-১৯ রোগীদের সেবায় এ জেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২৪৭ জন চিকিৎসক কাজ করছেন।
ডা. সাজেদা বেগম বলেন, “চিকিৎসা সেবাদানের ক্ষেত্রে আমার কোনো হাসপাতাল নেই।”
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করা, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি টিম পাঠিয়ে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা, সন্দেহভাজন, আক্রান্ত, মৃতদের বাসা লকডাউন করার কাজ প্রতিদিনই করে যাচ্ছেন তিনি বলে জানালেন।
পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘কোভিড-১৯’ নামের এক ফেইসবুক পেইজ থেকে লাইভে প্রতিদিন এ রোগ বিষয়ক তথ্য, পরামর্শ, চিকিৎসা ও সতর্কতা তুলে ধরছেন তিনি। এ লাইভে মানুষের বিভিন্ন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও।
“এছাড়া ২৪ ঘণ্টা মোবাইলফোনের মাধ্যমে করোনা বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছি”, বলেন তিনি।
তার স্বামী ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, “স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমরা দুই জনই এ কাজ করে যাচ্ছি। শুধু চাকরি নয়, মানবিক কারণে আমরা এগুলো করে যাচ্ছি।”
মাঝে মধ্যে ক্লান্তিও আসে জানিয়ে তিনি বলেন, “পিছু হটলে তো হবে না। নিজেদের করোনাযুদ্ধের প্রহরী মনে করে আবার এগিয়ে যাই।”
সদর হাসপাতালের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি চিকিৎসা নিতে আসা করোনাভাইরাসের সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেলও।
তাদের প্রাথমিক চিকিৎসাপত্র দেওয়া, শনাক্ত রোগীদের হাসপাতাল অথবা বাসায় চিকিৎসাপত্র দেওয়া, আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রোগীদের বাড়তি নজর রাখাসহ মৃত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত করাসহ সব কিছু দেখভাল করতে হয় তাকে।
“পাশাপাশি সংবাদকর্মীদেরও তথ্য দিতে হয় প্রতিনিয়ত”, যোগ করেন তিনি।
আইইডিসিআর’র করোনাভাইরাস বিষয়ক প্রশিক্ষণে এ জেলা থেকে শুধুমাত্র এ দু’জন চিকিৎসক অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। পরে ভিডিও কনফারেন্সের আরো কয়েক দফা প্রশিক্ষণ নেন তারা।
সন্তানকে দূরে ঠেলে মানবকল্যাণে দিন-রাত খাটুনির চিত্র এ জেলায় দ্বিতীয়টি না থাকায় এ দম্পতি ‘বিরল দৃষ্টান্ত’ স্থাপন করেছেন বললেন জেলার সিভিল সার্জনই।