ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাব

১ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৫-২২ ১১:১০:২১


দেশের উপকূলে বুধবার আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আগে আঘাত হেনে ঘূর্ণিঝড়টি অনেকটা দুর্বল হয়ে বাংলাদেশের স্থলভাগ অতিক্রম করায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা এড়ানো গেছে। তার পরও বিভিন্ন জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে পটুয়াখালীতে দুজন, যশোরে তিনজন, চুয়াডাঙ্গায় দুজন এবং ভোলা, পিরোজপুর ও সাতক্ষীরায় একজন করে প্রাণ হারান।

দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৪৬টি জেলার প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমির ২০ ধরনের ফসল নানা মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই ঝড়ে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে মৌসুমি ফল, সয়াবিন, বোরো ধান, মুগ ডাল ও গ্রীষ্মকালীন সবজি।

এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ৪৭ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান, ৩ হাজার ২৮৪ হেক্টর ভুট্টা, ৩৪ হাজার ১৩৯ হেক্টর পাট, ২ হাজার ৩৩৩ হেক্টর পান, ৪১ হাজার ৯৬৭ হেক্টর সবজি, ১ হাজার ৫৭৫ হেক্টর চীনা বাদাম, ১১ হাজার ৫০২ হেক্টর তিল, ৭ হাজার ৩৮৪ হেক্টর আম, ৪৭৩ হেক্টর লিচু, ৬ হাজার ৬০৪ হেক্টর কলা, ১ হাজার ২৯৭ হেক্টর পেঁপে, ৩ হাজার ৩০৬ হেক্টর মরিচ, ৬৪০ হেক্টর সয়াবিন, ৭ হাজার ৯৭৩ হেক্টর মুগ ডাল এবং ৬ হাজার ৫২৮ হেক্টর জমির আউশ ধানের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বৃহষ্পতিবার ডিজিটাল মাধ্যমে (জুম) সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় ঘূর্ণিঝড়ে ফল ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানেই সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। কোথাও কোথাও আক্রান্ত ফসল থেকে কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হবে। সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ৬০-৭০ ভাগ আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায় ঝরে পড়া আমগুলো ত্রাণ হিসেবে দুস্থ জনগণের মাঝে বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া লিচু, কলা, সবজি, তিল ও অল্প কিছু বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব নিরূপণের কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বীজ, সার ও উপকরণ দিয়ে সহায়তা করবে কৃষি মন্ত্রণালয়। তাছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ভর্তুকি কার্যক্রম থেকেও কৃষকদের সহায়তা দেয়া হবে।

বৃহষ্পতিবার দেশের বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বাগেরহাটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চিংড়ি ঘের।

ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে জেলা প্রশাসন যে প্রাথমিক তালিকা করেছে তাতে দেখা যায়, ৪ হাজার ৬৩৫টি চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ হাজার ৩৪৯টি ঘের আর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৪৭টি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান গতকাল এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে ২৬টি জেলায় প্রায় ১১০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হচ্ছে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এসব জেলায় ঘরবাড়ির প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব ঘরবাড়ি সংস্কার ও নির্মাণে প্রতি জেলায় ৫০০ বান্ডিল টিন এবং ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও পটুয়াখালীতে পাট, আম, লিচু ও মুগ ডালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি, তবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার আমের ক্ষতি হয়েছে। ২০০টি ব্রিজ ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার বেশির ভাগ বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলায় অবস্থিত। প্রায় ১৫০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৮৪টি জায়গায় বাঁধে ফাটল ধরেছে। যদিও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক দাবি করেছেন ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দেশের ১৩ জেলার মোট ৮৪টি পয়েন্টে প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার বাঁধ ভেঙেছে।

সানবিডি/এনজে