বাস ভাড়া ৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৫-৩০ ০৯:৩৫:২৩
দুই মাসের বেশি সময় পর ১ জুন থেকে চালু হচ্ছে গণপরিবহন। এ ব্যাপারে ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত আসন ফাঁকা রেখে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে গতকাল। পাশাপাশি বাসে দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী না নেয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় বাস ভাড়া ৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন পরিবহন মালিকরা।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সড়ক পরিবহন চালুর বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতা ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার একটি সূত্র জানিয়েছে, দাঁড়িয়ে যাত্রী না নেয়া ও ২৫-৩০ শতাংশ আসন ফাঁকা রাখলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। এ যুক্তি দেখিয়ে বাস ভাড়া ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন মালিকরা। প্রস্তাবে বলা হয়, বাড়তি এ ভাড়া সরকার ভর্তুকি হিসেবে পরিবহন মালিকদের দিতে পারে বা তা যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা যেতে পারে।
তবে বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভাড়ার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়। বিআরটিএর যে ভাড়া নির্ধারণী কমিটি রয়েছে, সে কমিটির সদস্যরা আজ একটি সভা করবেন। সেখান থেকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বিআরটিএর কার্যালয়ে গতকাল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ওই সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভার এক পর্যায়ে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, গণপরিবহন চালুর পর স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব ও শারীরিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। বাস টার্মিনালে কোনোভাবেই ভিড় করা যাবে না। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রীরা গাড়ির জন্য লাইনে দাঁড়াবেন ও টিকিট কাটবেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, স্টেশনে পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাসে কোনো যাত্রী দাঁড়িয়ে যেতে পারবে না। বাসের সব আসনে যাত্রী নেয়া যাবে না। ২৫-৩০ শতাংশ আসন খালি রাখতে হবে। পরিবারের সদস্য হলে পাশের সিটে বসানো যাবে অন্যথায় নয়। যাত্রী, চালক, সহকারী, কাউন্টারের কর্মী সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ট্রিপের শুরুতে ও শেষে বাধ্যতামূলকভাবে ভেতরের দিকসহ পুরো গাড়িতে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে। যাত্রী ওঠানামার সময় শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। চালক, কন্ডাক্টরদের একটানা ডিউটি দেয়া যাবে না। তাদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোয়ারেন্টিন বা বিশ্রাম দিতে হবে।
মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে কোনো বিরতি না দেয়ার পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, চা বিরতি এড়াতে পারলে ভালো, কারণ সংক্রমণ কোনখান থেকে হবে তা কেউই জানে না। যাত্রীদের হাতব্যাগ, মালামাল জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করতে হবে।
বিআরটিএর বৈঠকে উপস্থিত আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির একজন শীর্ষ নেতা বাস ভাড়া দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি যুক্তি হিসেবে বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী তুলতে হলে ৫০ শতাংশ যাত্রী কম তুলতে হবে। তাই ভাড়া দ্বিগুণের কম বাড়ানো হলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।
রাইডশেয়ারের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেই: বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, গণপরিবহন চালুর বিষয়ে গতকাল যে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়, তাতে রাইডশেয়ারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ফলে ১ জুন থেকে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা চালু হবে কিনা, তা নিশ্চিত করতে পারেননি বিআরটিএর কর্মকর্তারা।
১০ দিন পর্যবেক্ষণ করে বাড়ানো হবে লঞ্চের ভাড়া: ৩১ মে থেকে চালু হতে যাচ্ছে নৌ-পরিবহন। এ বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কার্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ১০ দিনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আপাতত লঞ্চযাত্রীদের কাছ থেকে আগের ভাড়াই আদায় করবেন লঞ্চ মালিক-শ্রমিকরা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক। এতে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম লঞ্চ মালিক সমিতির চেয়ারম্যান মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডাররা অংশ নেন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, স্বাস্থ্যবিধি ও নৌবিধি পালন করে নৌপথে ৩১ মে থেকে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করবে। সব নদীবন্দরে যাত্রীদের জন্য জীবাণুমুক্ত টানেল বসানো হবে। লঞ্চে যাত্রী পরিবহনের আগে থার্মোমিটারের মাধ্যমে যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাত্রীদের লঞ্চে ওঠার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, মাস্ক পরার মতো বিষয়গুলো সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।