ত্রিদেশীয় টার্গেটের বলি হচ্ছে ফিলিস্তিন

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৮-১৮ ০৯:২৭:০০


তিনটি দেশের টার্গেটে পরিণত হয়ে নিজেদের সব হারানোর পথে ফিলিস্তিনি জনগণ। ইহুদিবাদী ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি এবার আরব দেশগুলোও তাদের ছাড়তে শুরু করেছে।

‍আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের ফের বিজয়, মধ্যপ্রাচ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রভাব বিস্তার ও ইহুদিদের চিরদিনের চাওয়া ফিলিস্তিনি ভূমির দখল- এ তিন নজরে কপাল পুড়ছে ফিলিস্তিনের।

নানা বিতর্ক সত্ত্বেও আরেকবার প্রেসিডেন্ট হতে উঠেপড়ে লেগেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জয় নিশ্চিত করতে ইহুদি ভোটের দিকে নজর দিচ্ছেন তিনি।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে আরও প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে মার্কিন অস্ত্র চায় সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর ইসরাইলের চিরদিনের চাওয়া ফিলিস্তিনি ভূমির দখল।

আর তিন পক্ষের এই তিন স্বার্থের বলি হচ্ছে ফিলিস্তিন। কপাল পুড়ছে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের।

গত নির্বাচনের মতো ইহুদিদের ভোট নিশ্চিত এবারও সেই ইসরাইল তোষণকেই কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প।

ক্ষমতায় আসার কয়েক মাস পরই আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করেন তিনি। শুধু তাই নয়, মার্কিন দূতাবাসও সরিয়ে এনেছেন।

ফিলিস্তিন-ইসরাইলের দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে অস্বীকার করে ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামে বিতর্কিত একটি প্রস্তাবও প্রণয়ন করেছেন ট্রাম্প।

সর্বশেষ গত সপ্তাহে (বৃহস্পতিবার) তারই মধ্যস্থতায় উপসাগরীয় অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি ঘৃণ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিরা সংখ্যায় কম হলেও অর্থবিত্ত, জ্ঞান-বিজ্ঞানে তারাই এগিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রায় ৭০ শতাংশের মালিক ইহুদিরা। মার্কিন অর্থনীতিও ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে।

১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ইহুদিরা কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের রাষ্ট্র ইসরাইলের অলিখিত তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে রেখেছে।

শুরু থেকে এই পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রতি বছর দেশটির সেনাবাহিনীর সিংহভাগ খরচ প্রদান করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক প্রেসিডেন্টদের মতো সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছেন ট্রাম্প।

ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৭০ বছর ধরে ফিলিস্তিনের বেশির ভাগ এলাকায় দখলে নিয়েছে ইসরাইল। বর্তমানে ফিলিস্তিন বলতে সংকীর্ণ গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরের একখণ্ড ভূমিকেই নির্দেশ করে।

এবার পশ্চিম তীরের অবশিষ্ট এলাকাও নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পাঁয়তারা শুরু করেছেন ইসরাইলি রাজনীতিকরা। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার নামে ইসরাইলের এই অবৈধ দখলদারিত্বেরও স্বীকৃতি দিচ্ছে আমিরাত।

ফিলিস্তিন ও ইসরাইল সমস্যা নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ প্রণয়নের নেপথ্যের নায়ক মনে করা হয় ট্রাম্পের জামাই ও কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্পের স্বামী জারেড কুশনার।

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক উপদেষ্টা কুশনারও ইহুদি ঘরের সন্তান। এই পরিকল্পনার বিনিময় মূলত ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল করতে চান তিনি।

নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সিভিত্তিক কুশনারের রিয়েল এস্টেট কোম্পানি কুশনার ডাইভার্সিফাইড এলএলসি অধিকৃত ফিলিস্তিনে এখন অবৈধ বসতি নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিন ও মুসলিম বিশ্বের আহ্বান তুচ্ছ করে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা গত সপ্তাহে চুক্তি স্বাক্ষর করেন আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ।

‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’র নেপথ্যেও তার হাত রয়েছে। সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হিসেবে মোহাম্মদ বিন সালমানকে বেছে নিয়েছেন তিনিই। তার নজর মূলত পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণের দিকে।

এজন্য সৌদির সঙ্গে যৌথভাবে একটি ‘মুসলিম বাহিনী’ গড়ে তুলতে চান তিনি। আর এর জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও গোলা বারুদ কিনতে চান যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ইসরাইলের হাত ধরে সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।