দেশে ১১-১৬ লাখ তরুণ কর্মসংস্থান হারাতে পারে
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৮-১৯ ০৮:৫৭:৩৩
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোও বিপর্যস্ত। অর্থনীতির নিষ্ক্রিয়তায় এসব দেশে সংকুচিত হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে তরুণ জনগোষ্ঠীর ওপর। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, কভিড-১৯-এর প্রভাবে বাংলাদেশে স্বল্পমেয়াদে কর্মসংস্থান হারাবে ১১ লাখ তরুণ। আর দীর্ঘমেয়াদে এ সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
‘ট্যাকলিং দ্য কভিড-১৯ ইয়থ এমপ্লয়মেন্ট ক্রাইসিস ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৬৬ কোটি তরুণ জনগোষ্ঠীর তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা দূর করতে জরুরি ভিত্তিতে বড় আকারের ও লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ জানিয়েছে এডিবি-আইএলও।
এডিবি ও আইএলও ২০২০ সালে কর্মসংস্থান হারানো ও বেকার তরুণদের আনুমানিক হিসাব তুলে ধরেছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের যেসব দেশ এর আওতায় রয়েছে, সেগুলো হলো বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ফিজি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।
এই প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছর কাজ হারানো ও বেকার মিলিয়ে স্বল্পমেয়াদে বাংলাদেশে তরুণের সংখ্যা দাঁড়াবে ১১ লাখ ১৭ হাজার। দীর্ঘমেয়াদে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার তরুণ এ তালিকায় যুক্ত হতে পারে। ১৩টি দেশের এ তালিকায় কর্মসংস্থান হারানো ও বেকার তরুণের সংখ্যার প্রক্ষেপণে শীর্ষে রয়েছে ভারত। দেশটিতে চলতি বছর স্বল্পমেয়াদে ৪০ লাখ ৮৪ হাজার ও দীর্ঘমেয়াদে ৬১ লাখ ১৩ হাজার তরুণ কাজ হারাবে এবং বেকার হতে পারে বলে প্রক্ষেপণ দিয়েছে এডিবি-আইএলও।
ভারতের পরই সবচেয়ে বেশি কাজ হারানো এবং বেকার তরুণের সংখ্যা পাকিস্তান। দেশটিতে স্বল্পমেয়াদে ১৫ লাখ ৬ হাজার এবং দীর্ঘমেয়াদে ২২ লাখ ৫৮ হাজার তরুণ কাজ হারাবে ও বেকার হতে পারে। ইন্দোনেশিয়ায় স্বল্পমেয়াদে ১২ লাখ ৬৩ হাজার ও দীর্ঘমেয়াদে ১৮ লাখ ৮১ হাজার তরুণ কাজ হারাবে ও বেকার হতে পারে। ফিলিপাইনে স্বল্পমেয়াদে ৬ লাখ ৮৭ হাজার ও দীর্ঘমেয়াদে ১০ লাখ ১৯ হাজার তরুণ কর্মহীন থাকতে পারে বলে প্রক্ষেপণ দিয়েছে এডিবি-আইএলও।
প্রতিবেদনে ১৩টি দেশের মোট সাতটি খাতের কাজ হারানো সম্ভাব্য তরুণের হার প্রকাশ করা হয়েছে। সাতটি খাতের মধ্যে আছে কৃষি, খুচরা বাণিজ্য, হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট, অভ্যন্তরীণ পরিবহন, অন্যান্য সেবা, নির্মাণ, বস্ত্র ও পোশাক খাত। বাংলাদেশের কৃষি খাতে কাজ হারানো তরুণদের হার ২২ দশমিক ৯ শতাংশ, খুচরা বাণিজ্যে ১২ দশমিক ১ শতাংশ। বাংলাদেশের হোটেল ও রেস্টুরেন্টে কাজ হারানো তরুণদের হার ২ দশমিক ৬ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ খাতে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য সেবা খাতে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশের নির্মাণ খাতে কাজ হারাতে পারে এমন তরুণের হার ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমঘন শিল্প খাত বস্ত্র ও পোশাকে কাজ হারানো তরুণদের হার ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বাংলাদেশের সাতটি খাতে কাজ হারাতে পারে এমন মোট তরুণের হার ৭৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনে এডিবি-আইএলও বলেছে, এশিয়া ও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর তিনটি বাদে বাকি সবগুলোর মোট ৩৫টি খাতের তরুণদের ৭০ শতাংশ বা তার বেশি কাজ হারাতে পারে। ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদনমুখী শিল্পের বস্ত্র খাতে সবচেয়ে বেশি কাজ হারাতে পারে বলে উল্লেখ করে এডিবি-আইএলও বলছে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও শ্রীলংকার বস্ত্র খাতে কাজ হারানো তরুণদের হার ১০ শতাংশের বেশি, ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে এ হার ১৫ শতাংশ। ১৩টি দেশের মধ্যে মোট চারটি দেশে সবচেয়ে বেশি কাজ হারানো তরুণ কৃষি খাতে।
প্রতিবেদনের প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে এশিয়া ও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৩টি দেশের ১ থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ তরুণ কাজ হারাতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনভাবে তরুণরা
প্রভাবিত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তরুণরা যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে আছে কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা ও লে-অফের ফলে কাজে বিঘ্ন ঘটছে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার অপেক্ষায় থাকা তরুণদের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কর্মজীবনে রূপান্তর প্রক্রিয়াটিতে জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছে তরুণরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে দীর্ঘ চার মাস লকডাউন থাকায় চাকরির বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একই সঙ্গে বিরূপ প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। গত মাস থেকে সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে, ধীরে ধীরে অর্থনীতির চাকা সচল হতে শুরু করেছে। তবে নভেল করোনাভাইরাস পুরোপুরিভাবে বিদায় নেয়নি। যে কারণে চাকরির বাজার স্বাভাবিক হতে হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। তবে কতদিন সময় লাগবে এটা এখন বলা মুশকিল। এটা নির্ভর করবে নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিদায় নেয়ার ওপর। নেতিবাচক পরিস্থিতি পরিবর্তনে সরকার এরই মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে। এ প্রণোদনা প্যাকেজ যত তাড়াতাড়ি খাতসংশ্লিষ্ট লোকের কাছে পৌঁছবে, তত তাড়াতাড়ি পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এই প্রতিবেদনে এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ১৩টি দেশের জিডিপি প্রক্ষেপণও দেয়া হয়েছে। সংস্থা দুটির হিসাবে দেখা গেছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) হবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। হিসাবের আওতায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি। এডিবি-আইএলওর হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের পরই আছে ভিয়েতনাম। দেশটির প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১ শতাংশ। ভিয়েতনামের পরই আছে নেপাল। চলতি বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি আনুমানিক ২ দশমিক ৩ শতাংশ। হিসাবের আওতায় থাকা মোট ১৩টি দেশের মধ্যে আর সবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।