মুসলিম উম্মাহ হিজরী নববর্ষ উদযাপন করবে যেভাবে!
:: প্রকাশ: ২০২০-০৮-২০ ০৭:৩৪:৫৩
পহেলা মুহররম হিজরী নববর্ষ।হিজরী নববর্ষ মুসলিম উম্মাহর এক অনন্যোজ্জ্বল গৌরবগাথা ও ইতিহাসের দিন। হিজরী নববর্ষ আমাদের অস্তিত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নব চেতনায় উদ্দীপ্ত করে।হিজরী সন ইসলামী ঐতিহ্যের বাস্তব নমুনা। যা নিজ ঐতিহ্যকে অনুসরণ, অনুকরণ করতে শেখায়। মুসলমানদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় সকল আচার অনুষ্ঠান ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধি-বিধান বা ইবাদত এই হিজরী তারিখের উপর নির্ভরশীল। তাই হিজরী নববর্ষের গুরুত্ব অত্যাধিক।
বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষে আমাদের দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে। আরবি নববর্ষের অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য থাকা সত্ত্বেও উল্লেখ করার মতো কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না।যার কারণে আমরা অনেকেই অবগত নই কোন মাসে হিজরী নববর্ষ। অথচ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এই হিজরী তারিখের উপর নির্ভরশীল।
যেমন- রোজা, ঈদ, হজ,লাইলাতুল কদর, লাইলাতুল বরাত, আশুরাসহ সকল ধর্মীয় উৎসব পালন করতে হয় হিজরী তারিখ তথা চাঁদের হিসেবের উপর। তাই ইসলামে এ সন সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য এক বিশেষ স্মারক।
মুসলিম উম্মাহ যেভাবে হিজরী নববর্ষ উদযাপন করবে:
ইসলাম সর্বক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহকে সর্বোচ্চ আদর্শ, সভ্যতা এবং সংস্কৃতি শিক্ষা দিয়েছে। হিজরী নববর্ষ কিভাবে উদযাপন করবে তার সর্বোত্তম শিক্ষাও ইসলাম দিয়েছে।
নতুন বছর বা নতুন মাস শুরু করার ইসলামী নীতি এবং সুন্নত পদ্ধতি হলো।নতুন মাসের চাঁদ দেখার বিশেষ গুরুত্ব দেয়া।এটা বিশ্ব নবী সা: এর সুন্নত।আর যখন চাঁদ দেখবে তখন নতুন চাঁদ দেখার দুয়া পড়বে। এই সুন্নত পদ্ধতিতে বরকত, হেফাজত এবং সাওয়াব রয়েছে।আর সমস্ত কুসংস্কার এবং অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকবে।
দু’য়াটি হলো:
”اللھم أَھِلَّہ علینا بالیُمْنِ والإِیْمَانِ والسَّلامَةِ والإِسلامِ، ربِّيْ ورَبُّکَ اللہ“․ (ترمذي ٣٤٥١.مسند أحمد بن حنبل، مسند أبي محمد طلحہ بن عبید اللہ، رقم الحدیث: ۱۳۹۷، ۲/۱۷۹، دارالحدیث، القاھرة)
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল-য়ুমনি ওয়াল ঈমানি, ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলামি- রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য এই চাঁদকে সৌভাগ্য ও ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন।(হে চাঁদ)আল্লাহই আমার ও তোমার রব। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৫১)
নবী করিম (সা.) চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে পুরো মাসের জন্য কল্যাণের দোয়া করেছেন। দোয়ার প্রতিটি শব্দ দ্বারা শান্তি ও নিরাপত্তার আবেদন করা হয়েছে। ‘আহিল্লাহু’ শব্দের অর্থ হচ্ছে উদিত করুন। অর্থাৎ এই চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সুরক্ষা ও ঈমান দিন। ‘বিল আমনি’ অর্থ বিভিন্ন ধরণের মসিবত থেকে আমাদের নিরাপদে রাখুন। ‘ওয়াল ঈমানি’ অর্থ ঈমানের ওপর সুদৃঢ় রাখুন। ‘ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলামি’ অর্থ দ্বীন ও দুনিয়ার সব ধরণের ক্ষতি থেকে হেফাজত করুন। ‘রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ’ শব্দ দ্বারা নতুন চাঁদকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, আমি তোমাকে দেখে দোয়া পড়েছি কিন্তু তোমার স্রষ্টা ও আমার স্রষ্টা এক ও অভিন্ন।
ছোট্ট একটি দোয়ার হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহতায়ালার কাছে অনেক কিছু প্রার্থনা করেছেন। নবী করিম (সা.) প্রত্যেক মাসের নতুন চাঁদ দেখে এ দোয়া পড়তেন।
আমরা দুনিয়ার বিপদ-আপদ থেকে বাঁচার জন্য, নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি মাসের শুরুতে আল্লাহতায়ালার কাছে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য দোয়া করতেন।
এজন্য প্রত্যেক মুমিনের উচিত, প্রতি মাসের শুরুতে নিজেকে ভালো কাজের জন্য প্রস্তুত করা এবং চাঁদ দেখা কমিটির দিকে না তাকিয়ে নিজেই এই সওয়াবের অংশিদার হওয়া। চাঁদ দেখার সুন্নতের ওপর আমল করা।
হিজরী বর্ষ অনুসরণে ইসলামী শরিয়তের বিধান কি?
হিজরী সন মুসলমানদের সন। মুসলমানদের উচিত এর অনুসরণ করা। এক্ষেত্রে উদাসীনতা কাম্য নয়।ইসলামী ফিকাহবিদগণ চান্দ্রবর্ষের হিসাব রাখাকে মুসলমানদের জন্য ফরজে কিফায়া বলেছেন।অর্থাৎ কেউ কেউ এর খবরা-খবর রাখলে সবার দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে।কিন্তু সবাই যদি এ বিষয়ে উদাসীনতা দেখায় তাহলে প্রত্যেকে গুনাহগার হবে।এতে সন্দেহের অবকাশ নেই, চান্দ্রমাসের হিসাবের অনুসরণ নবীজি (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত। যাদের অনুসরণ আমাদের জন্য পুণ্যময় ও কল্যাণকর আমল।
হজরত মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.) বলেন, সৌর হিসাব রাখা ও ব্যবহার করা একেবারেই নাজায়েজ নয়। বরং এই এখতিয়ার থাকবে, কোনো ব্যক্তি নামাজ, রোজা, জাকাত, ইদ্দতের ক্ষেত্রে চান্দ্রবর্ষের হিসাব ব্যবহার করবে। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য বিষয়ে সৌর হিসাব ব্যবহার করবে। কিন্তু শর্ত হলো, সামগ্রিকভাবে মুসলমানদের মধ্যে চান্দ্র হিসাবের প্রচলন থাকতে হবে। যাতে রমজান, হজ ইত্যাদি ইবাদতের হিসাব জানা থাকে। এমন যাতে না হয়, শুধু জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ছাড়া অন্য কোনো মাসই তার জানা নেই।
হিজরী নববর্ষের মুসলমানদের করণীয়:
হিজরী নববর্ষের মুসলমানরা কোন আনন্দ উৎসব করবে না,তবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সহকর্মীদের ত্যাগের কথা স্মরণ করে ব্যক্তি,পরিবার,সমাজ ও মানবতার জন্য ত্যাগ স্বীকার করার শিক্ষা গ্রহণ করবে। হিজরি নববর্ষে মুসলমানদের নব উদ্যমে উদ্দমী হতে হবে। জীবনের সর্বস্তরে ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষা নিয়ে এগোতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।আমীন।
মুফতী মাহমুদ হাসান।
*দারুল হাদীস (এম.এ,ইসলামিক স্টাডিস)
জামিয়াতুল আবরার বসুন্ধরা ঢাকা।
*আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ(অনার্স) ঢাকা।
*দারুল ইফতা (ইসলামিক আইন ও গবেষণা বিভাগ) ঢাকা।