মহামারি করোনা
ভ্যাকসিন শিল্প গড়ে তোলার সম্ভাবনা খুঁজছে বাংলাদেশ
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৮-২৫ ০৭:৪৪:৩৭
প্রাণঘাতি মহামারি করোনাভাইরাস বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। এ মারণঘাতি ভাইরাসের কবল থেকে পরিত্রাণ পেতে ভ্যাকসিন বাজারে আনা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছে বিভিন্ন দেশ। এখন পর্যন্ত ছয়টি কভিড-১৯ ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষা-নিরীক্ষার তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশও ভ্যাকসিন শিল্প গড়ে তোলা যায় কিনা তার সম্ভাবনা খুঁজতে শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রধান করে একটি সাবকমিটিও করেছে সরকার।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বেশকিছু ওষুধ কোম্পানির ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে। তারা ফরমুলা পেলে ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবে। দেশেই ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
টিকাদান কর্মসূচির প্রচলিত নিয়ম-পদ্ধতি মূল্যায়নের জন্য ২০০৮ সালের ১২ আগস্ট একটি সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল সাবকমিটি গঠন করা হয়। কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি এটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত সাবকমিটির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। সদস্য হিসেবে রয়েছেন আরো ১৬ জন, যার মধ্যে সংশ্লিষ্ট খাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ও শিক্ষকরা রয়েছেন।
কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, এ কমিটি টিকাদান নীতি হালনাগাদকরণে কাজ করবে। নির্ধারিত দায়িত্ব সম্পাদনের পর দেশের মধ্যে ভ্যাকসিন শিল্প স্থাপনের জন্য প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। এ কমিটি নতুন ভ্যাকসিনের সংযোজন ও উৎপাদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে। টিকাদান কার্যক্রম সেবা এবং বিদ্যমান কর্মসূচিতে ব্যবহূত ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য মতামত দেবে। প্রয়োজনে কোনো ব্যক্তিকে কমিটিতে সংযোজন করতে পারবে।
এসব বিষয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, ভ্যাকসিনের বিষয়টি আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে। এজন্য আমরা বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করব। আন্তর্জাতিকভাবেও যেখানে যেখানে যোগাযোগ করা দরকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে তা করছি। আমরা ট্র্যাকে থাকতে চাচ্ছি।
বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা কর্তৃক তৈরীকৃত কভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রথম পর্যায়ে প্রাধিকার ভিত্তিতে ও সুলভে পেতে চায় বাংলাদেশ। বিষয়টি আলোচনা করতে ভ্যাকসিন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সম্প্রতি একটি বৈঠক হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। সেই আলোচনায়ও খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও ভ্যাকসিন খাতের ব্যবসার সম্ভাবনা কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
ওই বৈঠকে অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য) বলেন, বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো কোনো একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির সুবিধার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। ভ্যাকসিন-সংক্রান্ত কোনো গবেষণার সঙ্গে যুক্ত হলে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন পেতে সুবিধা হবে। বেসরকারি খাতকে অনুমোদিত ভ্যাকসিন উৎপাদন বা আমদানির সুযোগ দেয়া যেতে পারে।
এই সভায় আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ডা. কে জামান জানান, আইসিডিডিআর,বিতে এর আগে ১৫টি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হয়েছে। সিনোভেক নামের একটি চায়নিজ প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে আইসিডিডিআর,বির চুক্তি হয়েছে। অনুমতি পেলে ভ্যাকসিন তৈরির কাজটি অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করা যাবে। বাইরের দেশ থেকে প্রাপ্ত ভ্যাকসিন অবশ্যই দেশে পরীক্ষা করতে হবে। এ সময় দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।