১৬৪ জন জনবল সামাল দিচ্ছেন প্রায় ১২শটি প্রতিষ্ঠান
চরম জনবল সংকটে বিএসইসি
:: আপডেট: ২০২০-০৯-০১ ২০:১০:৩৪
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অন্যতম অংশীদারি হলো বেসরকারী খাত। এই বেসরকারি খাতের অক্সিজেন হিসেবে কাজ করে দেশের পুঁজিবাজার। শিল্পায়নে অর্থ সরবারহের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে বড় ধরণের ভূমিকা রাখে এই খাতটি। যেই খাতের এতো বড় কাজ; সেই খাত আজ অবহেলিত। তবে নতুন কমিশন আসার পর আশার আলো দেখছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব মহল। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জনবল সংকট। দীর্ঘ ৫০ বছরেও হয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিজস্ব কোনো অর্গানোগ্রাম। ফলে নামে মাত্র জনবল দিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
২০১০ সালে ধ্বসের পর দায়িত্ব নেয় ড. খায়রুল হোসেনর নেতৃত্বে নতুন কমিশন। দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই জনবল সংকটের বিষয়টি চোখে পড়ে তার। সেই সময় শুরু হয় ফাইল চালাচালি। তিনি তিন মেয়াদে নয় বছর সীমিত জনবল নিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
চলতি বছরের ১৭ মে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পুঁজিবাজারের নতুন চেহারা ফুটাতে নিরলসভাবে কাজ করছে তার কমিশন। পুঁজিবাজার বান্ধব কঠিন সিদ্ধান্তের কারণে আস্থা পাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। বাজারমূখী হচ্ছে সাইডলাইনে থাকা হাজার হাজার বিনিয়োগকারী। কমিশনে কাজের গতি বেড়েছে আগের তুলনায় কয়েকগুন। তবে এই কাজ সামাল দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের।
পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন
ক্যাপিটাল নিউজ–ক্যাপিটাল ভিউজ–স্টক নিউজ
কমিশন সূত্র মতে, কমিশনে বর্তমানে মাত্র ১৬৪ জনবল রয়েছে। এর মধ্যে নির্বাহী পরিচালক থেকে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পর্যন্ত মাত্র ৮২ জন। এই জনবল দিয়ে সংস্থাটি এতোদিন ট্রেকহোল্ডার, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি, কাস্টোডিয়ান সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ট্রাস্টি এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোসহ প্রায় ১২শ প্রতিষ্ঠানের দেখভাল করে আসছে। এর বাইরে তাদেরকে নতুন আইন, বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করতে হয়। সংস্থাটির কাজের পরিধির তুলনায় জনবল খুবই নগণ্য। এ অবস্থায় বিএসইসিকে শক্তিশালী করে পুঁজিবাজারকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করতে জনবল বাড়ানোর বিকল্প নেই।
১৯৯৩ সালের ৪ জুন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন নামে সংস্থাটির যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে সংস্থাটির নামের পূর্বে যুক্ত হয় বাংলাদেশ শব্দটি। বর্তমানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিভিন্ন সময়ে সংস্থটিকে সরকার ১৬৪ জন জনবল দিয়েছে। নতুন ৩৪১ জন মিলে মোট জনবল হবে ৫০৫ জন। নতুন এই জনবল পেলে সংস্থাটির কাজের গতি আরও বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বাড়ছে। আরও ৩৪১ টি পদ সৃজনের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে এর জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ ও সচিব কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন হবে। এ অনুমোদন পেলে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করতে পারবে বিএসইসি। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে সংস্থাটির একজন নীতিনির্ধারক সানবিডিকে বলেন, বর্তমানে বিএসইসিতে যে পরিমাণ লোকবল রয়েছে, কাজের তুলনায় অপ্রতুল। এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। আমরা আশাবাদী আমাদের এ লোকবল আসলে কাজের গতি আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের পুঁজিবাজারকে একটি উচ্চতর জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। ওই জায়গায় নিতে হলে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। নতুন লোকবল প্রয়োজন। নতুন লোকবল যুক্ত করার মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন আমরা পূরণ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজারের দায়িত্বে থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব ডঃ নাহিদ হোসেন সোমবার সানবিডিকে বলেন, বিএসইসির জনবল কাঠামো চুড়ান্ত করার জন্য কাজ চলছে। খুব শিগগির এটি সচিব কমিটিতে যাবে। সেখানে থেকে আইন মন্ত্রণালয় যাবে। এর পর বিএসইসি জনবল নিয়োগ দিতে পারবে। আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে এর সমাধান হবে বলে মনে করেন তিনি।
যে পরিমাণ নতুন জনবল অনুমোদন হচ্ছে:
সূত্র মতে, বিএসইসির নতুন ৩৪১ জনবলের মধ্যে রয়েছে নির্বাহী পরিচালক পদে ৩ জন। এর মধ্যে এমআইএসের জন্য ১ জন ও লিগ্যাল সার্ভিসে ১ জন। চিফ অ্যাকাউন্ট্যান্টে ১ জন।
পরিচালক পদে ১২ জন। এরমধ্যে পরিচালক সাধারণে ৯ জন, এমআইএসে ১ জন, লিগ্যাল সার্ভিসে ১ জন, জনসংযোগে ১ জন।
অতিরিক্ত পরিচালক পদে ৩৬ জন। এর মধ্যে অতিরিক্ত পরিচালক সাধারণে ৩১ জন, এমআইএসে ২ জন, লিগ্যাল সার্ভিসে ২ জন, জনসংযোগে ১ জন।
যুগ্ম-পরিচালক পদে ৩৬ জন। এর মধ্যে যুগ্ম-পরিচালক সাধারণে ৩১ জন, এমআইএসে ২ জন, লিগ্যাল সার্ভিসে ২ জন, জনসংযোগে ১ জন।
উপ-পরিচালক পদে ৫৭ জন। এর মধ্যে উপ-পরিচালক সাধারণে ৫০ জন, এমআইএসে ৪ জন, লিগ্যাল সার্ভিসে ২ জন, জনসংযোগে ১ জন।
সহকারী পরিচালক পদে ৮৮ জন। এর মধ্যে সহকারী পরিচালক সাধারণে ৭৯ জন, এমআইএসে ৪ জন, লিগ্যাল সার্ভিসে ৪ জন, জনসংযোগে ১ জন।
সিনিয়র লাইব্রেরিয়ান ১ জন, নির্বাহী প্রকৌশলীতে ১ জন, সহকারী প্রকৌশলীতে ২ জন। এর মধ্যে সহকারী প্রকৌশলী সিভিলে ১ জন ও ইলেকট্রিক্যালে ১ জন।
উপ-সহকারী প্রকৌশলীতে ৩ জন। এর মধ্যে উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিভিলে ১ জন, মেকানিক্যালে ১ জন ও ইলেকট্রিক্যালে ১ জন। চিকিৎসা কর্মকর্তা ১ জন, মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্টে ১ জন।
এছাড়া হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ২ জন, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ৪ জন, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ১৫ জন, জেনারেটর অপারেটর ২ জন, ইলেকট্রিশিয়ান ৩ জন, ডেসপাচ রাইডার ১ জন, অফিস সহায়ক ৫৫ জন, নিরাপত্তা প্রহরী ৮ জন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৮ জন ও মালী ২ জন।