স্বাভাবিক পুঁজিবাজারে আশার সঞ্চার
:: আপডেট: ২০২০-০৮-২৬ ১৪:০৬:০৩
টানা মন্দার পর অতিসম্প্রতি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে দেশের পুঁজিবাজার। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সূচকের উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনও বেড়েছে। আস্থাশীল কোম্পানিগুলোও পুঁজিবাজারে আসতে চাচ্ছে। এ অবস্থায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। পুঁজি হারিয়ে যেসব বিনিয়োগকারী দিশেহারা হয়েছিলেন; তাদের সামনেও পুঁজি ফেরানোর পথ তৈরি হয়েছে। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টেক হোল্ডার, ব্রোকার হাউজ, বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকেও পুঁজিবাজার ছিলো পতনের দিকে। ক্রমাগত বিনিয়োযোগ হারাচ্ছিলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এরপর মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে বন্ধ হয়ে যায় বাজার। এরমধ্যেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে। গত ১৭ মে তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর জুনের শুরুতে নতুন করে লেনদেন শুরু হয়। মূলত তার কিছু পদক্ষেপের পর বর্তমানে বাজারে স্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বর্তমান কমিশন একটি আস্থার জায়গা তৈরি করতে পেরেছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে সাহস পেয়েছে এবং বিনিয়োগ করছে। ফলে তার প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ড. মাহমুদা আক্তার সানবিডিকে বলেন, পুঁজিবাজারের যে পরিবর্তন এখন দেখা যাচ্ছে তার পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের। পুঁজিবাজারের দুর্বল জায়গাগুলোকে সঠিক করার জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তার ইফেক্ট আমরা দেখতে পারছি।
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি প্রাইম ইসলামী লাইফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এম নূরুল আলম, এফসিএস, সিজিআইএ সানবিডিকে বলেন, কমিশনের পরিবর্তনে রেগুলেটরিতে কিছু মেধাবী বিচক্ষণ লোক এসেছে। উনাদের অ্যাকশানের কারণে বাজার পজিটিভের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।মার্কেট স্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ হচ্ছে ব্যাংকে ইন্টারেস্টের হার কমিয়ে ৯ শতাংশ করার কারণে ডিপোজিটের ইন্টারেস্ট দিবে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ। যার কারণে মানুষ ব্যবসা না করে নিরাপদে টাকা রেখে দেয়ার পরিবেশ নাই।
তিনি বলেন, এছাড়া ব্যাংক গুলোকে বলা হয়েছে প্রত্যেকটা ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকা করে একটা স্পেশাল ফান্ড গঠণ করার জন্য।অনেক গুলো ব্যাংক ইতির মধ্যে ২০০ কোটি টাকার ফান্ড গঠণ করেছে।এটাকা গুলো যখন ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে তখন মার্কেট আরো বেড়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, বিএসইসির কাছে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক বন্ড ইস্যু করার জন্য অনুমতি চেয়েছে । বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব আমরা ভালো কোম্পানিকে অনুমতি দিতে চেষ্টা করবো। কারণ বিএসইসির চেয়ারম্যান শুধু ইকুইটির উপর নির্ভর হতে চান না। তিনি বলেছেন এরকম ভালো ভালো ইস্যু যখন বাজারে আসবে তখন মার্কেট স্বাভাবিক ভাবে আরো ভালোর দিকেই যাবে।
পূবালী ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ সানবিডিকে বলেন, কোম্পানির ডিরেক্টরদের মধ্যে যাদের হোল্ডিং ২ শতাংশের এবং ৩০ শতাংশের কম রয়েছে এটা দুই মাসের মধ্যে পূর্ণ করতে হবে বলে যে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এটা পুঁজিবাজার স্বাভাবিক হওয়ার জন্য ভালো কাজ করেছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকের রেট কমানোর কারণে অনেকেই বিনিয়োগের জন্য ক্যাপিটাল মার্কেটকে নিয়ে চিন্তা করবে। যার ফল ইতিরমধ্যে আমরা পুঁজিবাজারের স্বাভাবিকতার মাধ্যমে লক্ষ করতে পারছি। আবার বাজেটে আন ডিসক্লোজ মানির কথা বলার কারণে তার প্রভাবও বাজারে পড়েছে। যার কারণে বাজার ভালোর দিকে যাচ্ছে। সর্বোপরি মার্কেট অনেক দিন নিন্ম লেভেলে ছিলো। বেশির ভাগ কোম্পানির দর ফ্লোর প্রাইসের নিচে ছিলো। যার কারণে মানুষ অন্য কোন বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে পুঁজিবাজারের দিকে এগিয়ে আসছে।
দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগের ব্যপারে পিএলএফএস ইনভেস্টমেন্টের সিইও আব্দুল মুক্তাদির সানবিডিকে বলেন, ভালো কোম্পানির শেয়ার যদি কোন বিনিয়োগকারী ২-৩ বছরের জন্য বিনিয়োগ করে তাহলে সে ঐ কোম্পানি থেকে একটা ভালো রিটার্ণ পাবে। বলে আমি বিশ্বাস করি। সে রিটার্ণটা দুই মাস পরেও হতে পারে আবার দুই বছর পরেও হতে পারে। আর যদি একটা খারাপ কোম্পানিতে না জেনে না বুঝে বিনিয়োগ করে তাহলে হঠাৎ করে একটু ভালো রিটার্ণ আসবে আবার হঠাৎ করে ক্ষতি হয়ে যাবে। সে জন্য বিনিয়োগকারীদেরকে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। কারো কথা শুনে বিনিয়োগ করলে চলবে না। নিজের বিনিয়োগ নিজেকেই বুঝে শুনে করতে হবে।
তিনি বলেন, মার্কেট এখন ভালো যাচ্ছে বলে সাধারণ বিনিয়োগকারী হঠাৎ করে এসে অধিক মুনাফার আশায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে তারা ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।
সাধারণ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষোদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন যে পদক্ষেপ গুলো নিচ্ছে এগুলো খুবই ভালো পদক্ষেপ।এসব পদক্ষেপের কারণেই বাজার তার স্বাভাবিকতায় ফিরে এসেছে। পদক্ষেপ গুলেf যদি সাহসিকতার সাথে কাযকর করতে পারেন তাহলে বাজার আরো ভালো হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো বেশি মজবুত হবে। তারা আবার বাজারের দিকে ফিরে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
এদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলেন, পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের প্রভাবে ক্যাশ ফ্লো বেড়েছে। তবে রিটার্নের ক্ষেত্রে তেমন সাড়া পড়েনি। আয়কর রিটার্ন এলে বোঝা যাবে কি পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে।
তিনি বলেন, কেউ যদি অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে চায়, সেক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রশ্ন করতে পারবে না। আমরা সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। যেসব প্রতিষ্ঠান এসব নিয়ে প্রশ্ন করে। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলেছি, তারা এ বিষয়ে প্রশ্ন করবে না। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের প্রশ্ন তোলে তবে তাদের সেটা অন্যায়, অনুচিত হবে। এক্ষেত্রে কেউ চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারবে। সরকার আইন করে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে বলেছেন। এখানে কেউ প্রশ্ন রাখতে পারে না।
সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, প্রদর্শিত বা অপ্রদশিত যে বিনিয়োগই হোক না কেনো তারা চান স্বাভাবিক একটি পুঁজিবাজার। বাজারের বর্তমান ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকলে নতুন করে অনেক বিনিয়োগ আসবে বলেও মনে করেন তারা।
সানবিডি/এসএমএস/আরএম ১:৫৮/২৬/৮/২০