চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশেরও কম বোরো সংগ্রহ
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৮-৩০ ০৮:২৯:৩১
সরকারি গুদামের জন্য চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে বোরো ধান সংগ্রহ শেষ করার করা ছিল খাদ্য অধিদপ্তরের। কিন্তু চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে এ সময়ে ধান সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশেরও কম। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধান কেনায় জটিলতা, সরকারি ও বাজারের দরের পার্থক্য কম থাকা এবং হয়রানির কারণে কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে আগ্রহী নন। এসব কারণে এ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ধান সংগ্রহে বেগ পেতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী ফেনী ও লক্ষ্মীপুর) প্রাথমিকভাবে বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ হাজার ২৯৩ টন। পরবর্তী সময়ে ধান সংগ্রহের চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৫ হাজার ২৩৩ টন। পাঁচ জেলার ৪৫টি উপজেলা থেকে এ ধান সংগ্রহের কথা ছিল। সেজন্য ধান ক্রয় করার জন্য এ অঞ্চলের ৫০ হাজার ৬২৯ জনের তালিকা দিয়েছিল চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামের কৃষি অঞ্চলে সাড়ে নয় হাজার টনের একটু বেশি বা ২৭ দশমিক ৮০ শতাংশ বোরো ধান সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, চলতি বোরো মৌসুমে প্রতি কেজি ধানের দাম নির্ধারণ করা হয় ২৬ টাকা। সেই হিসেবে প্রতি মণ ধানের দাম পড়ে ১ হাজার ৪০ টাকা। বাজারেও প্রায় একই দামে ধান কেনাবেচা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক চলতি মৌসুমে জুনের মধ্যে ৬০ শতাংশ, জুলাইয়ে ৯০ শতাংশ ও আগস্টের ১৫ তারিখের মধ্যে শতভাগ ধান ক্রয় সম্পন্ন করা কথা। ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ধান সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু চট্টগ্রামে ওই সময়ে সংগ্রহ হয় মাত্র ২৭ শতাংশ।
কৃষকরা জানান, সরকারি হিসাবে তালিকাভুক্ত একজন কৃষক এক টন ধান বিক্রি করতে পারবেন। সেখানে আবার নানা ধরনের জটিলতা আছে। ধান মাপার সময় টাকা দিতে হয়, পরিবহন খরচ আছে। অনেক সময় সব ঠিক থাকলেও ধানে চিটা আছে, ধান ভালোভাবে শুকানো হয়নি এমন নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। সরকারি টাকা পেতে দেরি করতে হয়। আবার চেক নেয়ার সময় কমিশন দেয়া ও হয়রানির শিকার হতে হয়। তাছাড়া চলতি বছর বাজার ও সরকারি দামের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। এ কারণে ঝামেলা মুক্ত থাকতে কেউ সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে চাইছেন না।
খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি ধান ক্রয়ে কিছু নিয়মনীতি আছে। ধানের নির্ধারিত মাত্রার আর্দ্রতা, চিটামুক্ত থাকা, ভালো করে শুকানো হয়েছে কিনা ইত্যাদি দেখে কিনতে হয়। কিন্তু যেসব তালিকাভুক্ত কৃষক ধান নিয়ে আসছেন তাদের ধানে নানা ধরনের অসঙ্গতি থাকে। তার পরও আমরা ছাড় দিয়ে ধান কিনেছি। তবে কৃষকরা দ্রুত টাকা পাওয়ার আশায় বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করেছেন, যার কারণে সরকারি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম অঞ্চল) অতিরিক্ত পরিচালক মো. মঞ্জুরুল হুদা জানান, আমাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৭ দশমিক ৮০ শতাংশ ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। বাজারের দামের সঙ্গে সরকারি দামের বেশি পার্থক্য নেই। এ কারণে মানুষ সরকারি ধান ক্রয়ে নানা জটিলতায় না গিয়ে বাজারে ধান বিক্রি করছেন। সরকারি ধান ক্রয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের কিছু নিয়মকানুন আছে। সরকারিভাবে আগস্ট পর্যন্ত ধান কেনার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এখন লক্ষ্যমাত্রা যেহেতু অর্জিত হয়নি, সেহেতু সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি আমরা।