বোরো সংগ্রহের সময় বাড়লো ১৫ দিন
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৯-০২ ০৮:৪০:০৪
প্রান্তীক কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও কৌশলগতভাবে খাদ্য মজুদ শক্তিশালী করতে চায় সরকার।আর এজন্য চলতি বছরের বোরো মৌসুমে রেকর্ড ২০ লাখ টন চাল-গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। গত সোমবার সময় শেষ হলেও সব মিলিয়ে সংগ্রহ হয়েছে ৮ লাখ ৫৪ হাজার টন ধান-চাল, যা লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও কম। এ অবস্থায় সংগ্রহ সময় আরো ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে,প্রতিবছর সরকারি ধান-চাল সংগ্রহের সবচেয়ে বড় অংশ আসে বোরো থেকেই। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারি মজুদ শক্তিশালী করতে খাদ্যশস্য সংগ্রহের কাজটি মূলত খাদ্য অধিদপ্তরই করে। সে লক্ষ্যেই চলতি বছরের বোরো মৌসুমে কৃষক ও অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ৮ লাখ টন ধান এবং ১১ লাখ ৫০ হাজার টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সব মিলিয়ে এবার ২০ লাখ ২৫ হাজার টন ধান-চাল ও গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছিল।
এর মধ্যে সেদ্ধ চাল ১০ লাখ টন, আতপ চাল দেড় লাখ টন ও গম ৭৫ হাজার টন সংগ্রহের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। কৃষকদের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, মিলারদের কাছ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজি দরে আতপ চাল এবং ২৮ টাকা কেজি দরে গম কেনা হচ্ছে এবার। ৭ মে শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ১৫ এপ্রিলে গম কেনা শুরু হয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। জুনে গম সংগ্রহ কার্যক্রম শেষে ৬৪ হাজার ৪২৯ টন মজুদ করা সম্ভব হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৪৪ হাজার ১৫৮ টন।
গত সোমবার পর্যন্ত বোরো ধান সংগ্রহ হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৩৩৭ টন। এছাড়া বোরো সেদ্ধ চাল ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৫৫ টন ও বোরো আতপ চাল ৮২ হাজার ৭৯৫ টন, সব মিলিয়ে ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮৭ টন সংগ্রহ করা হয়েছে। চালের আকারে সর্বমোট ৭ লাখ ৮১ হাজার ৭৬৯ টন সংগৃহীত হয়েছে। চাল ও গম হিসেবে নিলে মোট সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ লাখ ৪৬ হাজার ১৯৮ টন। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ লাখ ২৫ হাজার টন। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১১ লাখ ৭০ হাজার টন সংগ্রহ কম হয়েছে। গত মৌসুমে শুধু চালের সংগ্রহ হয়েছিল প্রায় ১৪ লাখ ৯ হাজার ৮৮৪ টন। ফলে চলতি মৌসুমে চালের আকারে গত মৌসুমের মাত্র ৫৬ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ায় মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানির মাধ্যমে সংগ্রহ বাড়ানোর নতুন কৌশল নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহ সময় বাড়িয়ে এরই মধ্যে সার্কুলার জারি করেছে মন্ত্রণালয়। তবে চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে শুধু মিলারদের ওপর নির্ভর না করে উৎস পরিবর্তনের বিষয়ে মতামত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে চাল সংগ্রহ ওপেন মার্কেট দরপত্রের মাধ্যমে করা যায় কিনা, সেটি নিয়ে ভাবা যেতে পারে। সেটি করা গেলে বাজার আরো প্রতিযোগিতামূলক করা সম্ভব হবে। এছাড়া আইনি কাঠামো আরো শক্তিশালী করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল বলেন, ‘চলতি বোরো মৌসুমে খাদ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নাও হতে পারে এমন একটি বিষয়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এজন্য অনেক আগে থেকেই আমি সরকারিভাবে চাল আমদানির পক্ষেই ছিলাম। সরকারের মজুদ কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত পরিমাণের নিচে রাখা যৌক্তিক হবে না। মহামারী পরিস্থিতিতে মজুদ কমে গেলে আরো বিপদ বাড়বে। পাশাপাশি কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় চাল আমদানি বেসরকারিভাবে উন্মুক্ত না হলে শুধু সরকারিভাবে করতে হবে। সরকারের সেই আমদানি দ্রুতই করতে হবে। এর পরও মজুদ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমতি দিতে হবে। যেসব মিলার চুক্তি অনুসারে সরকারকে চাল দিচ্ছে না তাদের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। চাল সংগ্রহে শুধু মিলারদের ওপর নির্ভর না করে কিংবা বিকল্প মডেল আছে কিনা সেটি নিয়ে ভাবা যেতে পারে।’
এবারের মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান এবং মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে নাও হতে পারে, এমন পর্যালোচনা ছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে। সেজন্য বরিশাল বিভাগের সঙ্গে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম পর্যালোচনা সভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার মিলারদের সতর্কবার্তাও দিয়েছিলেন। মিলারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা এবং মিলকে কালো তালিকাভুক্ত করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় সরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমোদন নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়