অন্ধকারের উৎস হতে

প্রকাশ: ২০১৫-১২-১৪ ১২:০৭:৫৭


Sim Simএক, দুই, তিন৷ খুল যা সিম সিম৷ প্রকাণ্ড গুহামুখের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে আলিবাবা মনে হবে বইকি! মৌসমাই কেভ চেরাপুঞ্জির শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ৷ পরতে পরতে চরম বিস্ময়৷ রোমাঞ্চকর এক জার্নি৷ অপ্রশস্ত গুহাপথ এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে৷ সারাক্ষণ টিপ টিপ করে জল পড়েই চলেছে গুহার গা বেয়ে৷ টিমটিমে আলো৷ স্যাঁতসেঁতে ভাব৷ গুটিকতক বাদুড়ের আনাগোনা৷ চোখে পড়বে লম্বা লম্বা বরফ-ঝুরির মতো চুনাপাথরের দণ্ড৷ এক জায়গায় সাঁকো মতো রয়েছে৷ কোথাও আলো, কোথাও অন্ধকার৷ কোথাও নেমে গিয়েছে সিঁড়িপথ৷ কখনও হাঁটা, কখনও হামাগুড়ি৷ একেক সময় প্রায় অসম্ভব মনে হয় পথচলা৷ ফেরত যাওয়ার ইচ্ছে হলে দলছুট হওয়ার আশঙ্কা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে৷ মনোবল সঞ্চয় করে আবার এগিয়ে যাওয়া৷ যে মুহূর্তে বাইরের আলো ঢোকা বন্ধ হয়ে যায় গুহার ভেতর, গা ছমছম করে৷ না জানি পরবর্তী বাঁকে কী লুকিয়ে আছে! জল জমে থাকা অংশে গোড়ালি ডুবে যায়৷ পিছল পাথুরে পথ৷ গুহার এক্সিট পয়েণ্ট বেশ সংকীর্ণ৷ অলমোস্ট শবাসনেই বেরিয়ে আসা৷
কথিত আছে, শিকার করতে বেরিয়ে খাসি উপজাতির এক পুরুষ মৌসমাই কেভ প্রথম আবিষ্কার করেন৷ নানা ধরনের বন্যজন্তুর বাস ছিল এই গুহায়৷ স্থানীয় আদিবাসীদের শিকারের ফলে সেসব নিশ্চিহ্ন হয়৷ মৌসমাই কেভ চেরাপুঞ্জি শহর থেকে ছ’কিলোমিটার ভেতরে৷ গুহা পরিদর্শনের সময় সকাল ৯.৩০-৫.৩০ অবধি৷ স্টিল বা মুভি ক্যামেরার জন্য মূল্য নির্দিষ্ট রয়েছে৷ একটা গুহা থেকে আরেকটা গুহা যেতে সময় লাগে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা মতো৷ সুদীর্ঘ গুহার ১৫০ মিটার রাস্তাই একমাত্র পর্যটকরা যেতে পারেন৷ অন্যদিকগুলো বন্ধ৷ কারণ সেসব স্থানে চুনাপাথরের দণ্ড রয়েছে অসংখ্য পরিমাণে আর সেগুলো আকৃতিতে বিশাল৷ একটি জলপ্রপাত আছে চেরাপুঞ্জিতে, তার নামও মৌসমাই৷ এটি বিশ্বের চতুর্থ উচ্চতম জলপ্রপাত৷ বর্ষায় ভয়ংকর রূপ নেয়৷ ডানদিকে বাংলাদেশের সিলেট শহরের মাঠপ্রান্তর৷ মৌসমাই-এর কাছেই আরেক জলপ্রপাত নোহ্-কালিকাই৷ এটি মৌসমাই-এর চেয়েও বেশি আকর্ষণীয়৷ পান্না-সবুজ হ্রদ সৃষ্টি হয়েছে ঝরনার জলে৷ দ্বিতীয় স্বামীর হাতে মেয়ের মৃত্যুর শোকে মা লিকাই ঝাঁপিয়ে পড়েন পাহাড় থেকে৷ সেই থেকে ফল্স-এর এমন নামকরণ (মতান্তর রয়েছে)৷ মৌসমাই কেভ চেরাপুঞ্জির শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ হলেও আশপাশ ঘুরে না দেখলে মাঠে মারা যাবে এই সফরনামা৷ চেরাপুঞ্জির আসল নাম সোহরা বা সোরা (কয়লা)৷ ব্রিটিশরা উচ্চারণ করত ‘চেরা’৷ মেঘালয় রাজ্য সরকার পুরনো সোহরা নামটি পাল্টে নতুন নাম দেন চেরাপুঞ্জি, যার অর্থ ‘ল্যান্ড অফ অরেঞ্জেস’৷ বৃষ্টি এর দোসর৷ ১৮৩৫-৬৪ সাল পর্যন্ত বিটিশ সরকারের উত্তর-পূর্ব ভারতের সদর দপ্তর ছিল এই চেরাপুঞ্জি৷ খাসি সাহিত্য ও সংস্কৃতির পীঠস্থান এটি৷ এখানে খাসি উপজাতির মহিলারাই দোকানপাট চালান৷ মহিলা পরিচালিত সমাজ-সংসার৷ পুরুষরা এখানে গৃহাসক্ত৷ বৃষ্টি, জলপ্রপাত, চুনাপাথরের গুহা, কয়লা, কমলালেবুর বাগিচা ও মধুর জন্য খ্যাতি চেরাপুঞ্জির৷ নানান ধরনের অর্কিড আর প্রজাপতির দেখা মিলবে৷ মেঘালয়ের সর্বোচ্চ জলপ্রপাত কেইনরেম ফল্সটিও দেখে নিতে পারেন৷ এই হয়তো পরিষ্কার আকাশ, ঝলমলে দিন৷ পরক্ষণে মেঘে ঢেকে যাবে চারপাশ৷ এ যেন মেঘ-রোদ্দুরের হাইড-অ্যান্ড-সিক খেলা৷ সন্ধে নামলে পাহাড়ি পোকার ডাকে ভরে যাবে রাস্তাঘাট৷ খুব ভাল হয় যদি সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে পারেন চেরাপুঞ্জি থেকে৷ বছরের যে কোনও সময় এখানে বেড়ানো যায়৷ বর্ষায় পাহাড়ে যাওয়া মানা হলেও এই মরশুমেই চেরাপুঞ্জি আরও সুন্দর হয়ে ওঠে৷ বৃষ্টিভেজা সবুজ পাতায় ভাল লাগা মিশে যায়৷
কী ভা বে  যা বে ন   
হাওড়া থেকে গুয়াহাটি পৌঁছতে হবে প্রথমে৷ সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে মৌসমাই কেভ চলে আসুন৷ শিলং হয়েই এ পথ যাবে৷ ইচ্ছে হলে শিলং চত্বর ঘুরে চেরাপুঞ্জি আসুন৷
কো থা য়  থা ক বে ন  
চেরাপুঞ্জি হলিডে রিসর্ট পাবেন থাকার জন্য৷ এছাড়া আছে অর্কিড হোটেল৷
কী খাবেন .. পর্ক এখানে ফেমাস৷ ফ্রায়েড রাইস সহযোগে খেতে পারেন৷ সঙ্গে খান ‘টুং ট্যাপ’ অর্থাত্‍ চাটনি জারানো ভাজা মাছ৷ চালের তৈরি ককিয়াদ-এরও স্বাদ নিতে পারেন৷
কী কিনবেন .. খাসি মহিলারা একরকম সাইড ব্যাগ নেন৷ লাল-নীল নানা রঙের৷ কিনতে পারেন৷