পাটশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে ৪ কোটি মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৯-১০ ০৯:১৬:১৩


দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচা পাটের অভাবে পাটশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই মহামারি চলাকালীন সময়ে কর্মসংস্থান হারাবে দেশের চার কোটি মানুষ।দেশের এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী পরোক্ষভাবে পাটশিল্পের সঙ্গে জড়িত। পাটকল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সূত্র জানিয়েছে, দেশের  পাটকলগুলোতে বছরে পাটের চাহিদা ৬০ লাখ বেল। এ ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরীণ কাজে প্রয়োজন হয় আরও পাঁচ লাখ বেল কাঁচা পাট।  মোট ৬৫ লাখ বেল কাঁচা পাটের চাহিদার বিপরীতে চলতি বছর দেশে উৎপাদিত কাঁচাপাটের পরিমাণ ৫৫ লাখ বেল। অর্থাৎ এ বছর চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি রয়েছে  ১০ লাখ বেল কাঁচা পাটের। জানা গেছে, প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ লাখ বেল কাঁচা পাট রফতানি হয়ে থাকে।

দেশের মিল মালিকরা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ার কারণে এমনিতেই এবছর মিলগুলোর জন্য কাঁচা পাটের ঘাটতির পরিমাণ ১০ লাখ বেল। এ অবস্থার মাঝে যদি  ১০ লাখ বেল কাঁচা পাট রফতানি করা হয়, তাহলে মিলগুলো কাঁচা পাটের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। বেকার হয়ে পড়বে এই শিল্পের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত চার কোটি মানুষ। দেশ হারাবে ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা।

সূত্রে জানা যায়, শিলাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় আম্পান,বন্যা ও করোনার সংক্রমণ— এই পাঁচ কারণের প্রভাবে এবছর পাটের উৎপাদন কম হয়েছে। বছরে বাংলাদেশে কাঁচা পাট উৎপাদনের পরিমাণ কমপক্ষে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ বেল। গত বছর দেশে ৮৪ লাখ বেল কাঁচা পাট উৎপাদিত হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, দেশে বর্তমানে পাটকলের সংখ্যা ২৫৯টি। এই পাটকলগুলোর সঙ্গে সরাসরি কর্মরত রয়েছেন দুই লাখ মানুষ। এ খাতে বছরে উৎপাদিত পাটপণ্যের পরিমাণ ৭ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে বিদেশে রফতানি করা হয় ৬ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন পাটপণ্য। এই রফতানির বিপরীতে ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. জাহিদ মিয়া বলেন, ‘আমরা কাঁচা পাট রফতানির বিপক্ষে নই। তবে আমরা শুধু এ বছরটির জন্য কাঁচা পাট রফতানি নিরুৎসাহিত করতে দুটি অনুরোধ করেছি মাত্র। এর একটি হচ্ছে— প্রতিটন কাঁচা পাট রফতানিতে ২৫০ মার্কিন ডলার হারে রফতানি শুল্ক ধার্য করার অনুরোধ জানিয়েছি। যাতে কাঁচা পাট রফতানি নিরুৎসাহিত হয়। আর দ্বিতীয় অনুরোধটি হলো— এ বছরের জন্য আনকাট বা বাংলা তোশা রেজেকশন (বিটিআর) এবং বাংলা হোয়াইট রেজেকশন (বিডব্লিউআর) জাতের পাট রফতানি সাময়িক বন্ধ রাখা। আমরা এই দুটি সুপারিশ করেছি।’

তিনি জানান, দেশে ‍আগামী বছর যদি চাহিদার ৬৫ লাখ বেলের বেশি কাঁচা পাট দেশে উৎপাদিত হয়, তাহলে আবারও রফতানির অনুমতি দেওয়া যাবে বলেও জানান তিনি। এক মণ কাঁচা পাট রফতানি করে যে দাম পাবো, সেক্ষেত্রে সমপরিমাণ পাট প্রক্রিয়াজাত করে পাটপণ্য রফতানি করলে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি দাম পাবো বলেও জানান জাহিদ মিয়া।

এ প্রসঙ্গে পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘অ্যাসোসিয়েশনের দাবির বিষয়টি শুনেছি। আমরা সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবো।’

সানবিডি/এনজে