লোকসান এড়াতে চা আমদানি করবে ‍ভারত

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৯-১১ ০৮:২৪:৪৮


প্রাণঘাতি মহামারি করোনা ভাইরাসের ধাক্কায় এ বছর ভারতে চায়ের উৎপাদন ও সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আকাশ ছুঁয়েছে এই পানীয় পণ্যটির দাম। এ পরিস্থিতিতে ভারতীয় কোম্পানিগুলো মনে করছে, বেশি দামে নিজস্ব পণ্য না কিনে বাইরে থেকে চা আমদানি করলে আর্থিক লোকসান এড়ানো যাবে। এজন্য তারা কেনিয়া ও ভিয়েতনামকে নির্ভরযোগ্য আমদানি উৎস বিবেচনা করছে। কেননা বাড়তি উৎপাদনের কারণে এ দুই দেশে চায়ের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। তবে করোনাকালে চা আমদানির এ চিন্তাভাবনাকে সাময়িক বলছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এটা স্বল্পমেয়াদে লোকসান এড়ানোর উপায় মাত্র। দেশীয় পণ্য না কিনে দীর্ঘমেয়াদে চা আমদানি অব্যাহত রাখার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। খবর ইকোনমিক টাইমস ও বিজনেস লাইন।

এ ব্যাপারে ফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এফএআইটিটিএ) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনা মহামারীতে নানামুখী সংকটে পড়েছে ভারতের চা শিল্প। লকডাউনের শুরুর দিকে শ্রমিক সংকটে ব্যাহত হয়েছিল উৎপাদন ও পাতা সংগ্রহের কার্যক্রম। ওই সময় পরিবহন সংকটে উৎপাদিত চা বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। এমনতি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কলকাতার চায়ের নিলামে চা সরবরাহ না থাকায় কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ওই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। কলকাতা, কনোড়, নীলগিরি—সবখানেই চায়ের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। একদিকে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চা শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলো আগে থেকেই আর্থিক সংকটে রয়েছে। তার ওপর বাড়তি দাম থাকায় পানীয় পণ্যটির বেচাকেনা একেবারে কমে যাওয়ায় বিদ্যমান সংকট আরো জোরালো হতে শুরু করেছে।

এ পরিস্থিতিতে ভারতীয় চা শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কেনিয়া কিংবা ভিয়েতনাম থেকে চা আমদানির চিন্তাভাবনা করছে। কেননা এ দুটি দেশে পানীয় পণ্যটির সরবরাহ রয়েছে পর্যাপ্ত। দামও রয়েছে তুলনামূলক কম। এফএআইটিটিএ জানিয়েছে, চা আমদানির অনুমতি পেতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পেলেই ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো চা আমদানি শুরু করে দেবে।

তবে করোনা মহামারীতে যখন ভারতের চা শিল্প চরম লোকসানের মুখে রয়েছে, তখন দেশীয় পণ্য না কিনে পানীয় পণ্যটির আমদানির চিন্তাভাবনা করার সমালোচনা করেছেন অনেকেই। তাদের দাবি, এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে ভারতীয় চা শিল্পের সংকট আরো জেরালো হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পড়তে পারে ভারতীয় চা উৎপাদনকারীরা। তবে এফএআইটিটিএ জানিয়েছে, করোনাকালে আর্থিক লোকসান এড়াতে এটা স্বল্পমেয়াদি কৌশল মাত্র। দেশীয় পণ্য না কিনে দীর্ঘমেয়াদে চা আমদানি অব্যাহত রাখার কোনো ইচ্ছা কোম্পানিগুলোর নেই।

প্রতিবছর ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৯০ লাখ থেকে এক কোটি কেজি চা আমদানি করে। তবে আমদানি করা এসব চা ভারতের বাজারে বিক্রি করা হয় না। বরং প্রক্রিয়াজাত শেষে তা পুনরায় রফতানি করা হয়। চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় পুরোটাই ভারতের নিজস্ব বাগানগুলো পূরণ করে। এখন করোনা মহামারীর সময় ভারত সরকার চা আমদানির অনুমতি দিলে, তা হবে অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রির জন্য পানীয় পণ্যটির আমদানির প্রথম উদাহরণ।

এফএআইটিটিএর প্রেসিডেন্ট বিরেন শাহ বলেন, প্রতিটি নিলামে চায়ের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এতো বেশি দামে চা কিনে বাজারে বিক্রি করা সম্ভব নয়। কারণ করোনা মহামারীতে ক্রেতাদের আয় কমেছে। এভাবে দাম বাড়লে তারা চা কেনা বন্ধ করে দেবেন। এতে কোম্পানিগুলোর লোকসান আরো বাড়বে। তাই সাময়িকভাবে কম দামে চা আমদানি করে ভারতীয় ক্রেতাদের হাতে তুলে দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। এখন সরকারের অনুমতির অপেক্ষা করা হচ্ছে।

তবে তার এ মতের বিরোধিতা করে উৎপাদনকারীদের সংগঠন ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের (আইটিএ) চেয়ারম্যান বিবেক গোয়েনকা বলেন, এভাবে আমদানির উদ্যোগ নিলে খাদের কিনারায় থাকা ভারতীয় চা শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আমরা কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এ উদ্যোগে অনুমতি না দিতে অনুরোধ করব।